সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন

অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রা : ৬ মাস ধরে নিখোঁজ দুই যুবক

  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩
উন্নত জীবনের আশায় অনিয়মিত পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার দুই যুবক। তারা হলেন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ। এতে একই গ্রামের নিখোঁজ দুই যুবকের পরিবারে চলছে কান্নাররোল। দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।

নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ে স্বপ্নের দেশ ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই থেকে জাহাজে ইরান পৌঁছায় মাসুদ রানা। মাসুদ ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ি পথ বেয়ে ইরান হতে তুরস্ক প্রবেশের চেষ্টা করে। তুরস্ক থেকে ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রবেশের স্বপ্ন ছিল মাসুদের।

সে তুরস্কে অবস্থানরত জনৈক এক দালালের মাধ্যমে ইরান-তুরস্ক যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়। এক সাথে তারা বাংলাদেশি ৮-১০ জনসহ ২৪ জন যুবক ছিল।

উঁচু-নিচু পাহাড়, মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম হওয়ার সময় নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে মাসুদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

মাসুদের মা সাজনা বেগম জানান, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে আমার ছেলে রওয়ানা হওয়ার আগে বলেছিলো “আম্মাগো আমার জন্য দোয়া করিও পৌঁছে ফোন দিব। ৬ মাস হলেও ছেলেতো আর ফোন করে না, আল্লাগো আমারের ছেলেরে ফিরাইয়া দেও” তিনি বার বার ছেলের স্মৃতি মনে করে মুর্ছা যাচ্ছিলেন।

এদিকে, একই কায়দায় দালালদের খপ্পড়ে পড়ে ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথে নিখোঁজ সাতাইহাল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়ার ছেলে শাহ পাবেল আহমেদ।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহ পাবেল আহমদসহ ৩৫ জন যুবক ইরান থেকে তুরস্ক পথে যাত্রা শুরু করে। তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় দালাল চক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাহাড়-পর্বত মরুভূমি আর বরফে ঢাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তুরস্কে প্রবেশকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। এ সময় ৮ জন যুবক একদিকে লুকিয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে ২৭ জন যুবকের সঙ্গে পাবেল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেল নিখোঁজ হয়। পাবেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পাবেলের মামা সাইফুর রহমান তালুকদার জানান, শাহ পাবেল আহমদ (২৩) দেশের বাহিরে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে তার ছোট ভাই শাহ ফাহিম ও তার মা নাজমা তালুকদার মারা যান। নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বার বার নিষেধ করা পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ইউরোপ যাওয়ার চিন্তা করে। কিন্তু তার ছোট বোন ও ভাইকে মানুষ করার আগেই সে হারিয়ে গেল। ৪ ভাই বোনের মধ্যে পাবেল সবার বড়।

তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “পাবেলের মা মারা যাওয়ার পর আমাদের কাছেই সে বড় হয়েছে, মা হারা পাবেলকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। ইরান অবস্থানকালে ও তুরস্ক যাওয়ার গেইমে উঠার পূর্বে আমার সঙ্গে আমার ভাগিনার কথা হয়েছে। সে দোয়া চেয়ে বলেছিল মামা আমি পৌঁছে ফোন দিব, কিন্তু আর তাকে ফোনে পাইনি। তার সঙ্গে গেইমে থাকা সঙ্গীদের তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তাদের দেখে অভিযান চালালে যে যার মতো দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকে পাবেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ পরিবারের লোকজনের দাবি দালাল চক্রের সদস্যদের কঠোর শাস্তি দিলে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া কমবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com