সৌদি আরবগামী শ্রমিকদের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন (অ্যাটেস্টেট) বাধ্যতামূলক করার পর বড় ধরনের ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়েছিল জনশক্তি ব্যবসায়। এর ফলে চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে (এক মাসে) অর্ধেকের বেশি কর্মী যাওয়া কমে যায়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুই দফা বন্ধ রাখার পর অবশেষে গত বৃহস্পতিবার থেকে আবারো জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সৌদিগামী কর্মীদের সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্লেয়ার এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো: আনিসুর রহমান এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, দুই দফা ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রাখার পর আবারো গত বৃহস্পতিবার থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে নন-অ্যাটাস্টেট ভিসায় ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ করায় আমাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
ইসরাত এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাহাবুব আলম গত বুধবার নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, আমাদের বিদেশের শ্রমবাজারের সবচেয়ে বড় মার্কেটই হচ্ছে সৌদি আরব। অথচ এই দেশ থেকে আসা ভিসাগুলো দূতাবাসের সত্যায়ন না থাকার কারণে বেশ কিছু দিন ধরে কর্মী যাওয়ার ছাড়পত্র বন্ধ রাখে বিএমইটি। এতে বৈদেশিক শ্রমবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। আমাদেরও শ্রমিক না পাঠাতে পারার কারণে টেনশন বাড়তে থাকে। কর্মীরা শুধু ফোন দিয়ে জানতে চায় ফ্লাইট কবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সৌদি আরবের নিয়োগকর্তারা বলেন আমরা তোমাদেরকে ভিসা দিচ্ছি। এটাই হলো আসল কথা। ভিসা জেনুইন থাকলে আর কিছু লাগে না। এখন দূতাবাসের সত্যায়ন হলো কি হলো না সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। এটা তোমাদের বিষয় বলে তারা এড়িয়ে যান। এ ছাড়া একজন কর্মীর একক ভিসার সত্যায়নের জন্য ১২০০ থেকে -১৪০০ মাইল দূর থেকে নিয়োগকর্তারাও আসতে চায় না। এতে সার্বিকভাবে বিদেশে কর্মী যাওয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। দ্রুত এর সুরাহা না হলে নিয়োগকর্তারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাত এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহাবুব আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, আজ থেকে বিএমইটি কর্তৃপক্ষ সৌদিসহ অন্যান্য দেশের কর্মীদের নন অ্যাটাস্টেট ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া শুরু করেছে।
এর আগে একাধিক মালিক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছিলেন, নন অ্যাটাস্টেট ভিসায় কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ থাকায় বিকল্পভাবে কিছু এজেন্সির মালিকরা কর্মী পাঠানোর চেষ্টা চালান। তবে ওই পথে কি পরিমাণ শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি দিয়েছেন তা গত রাত পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল বিকেলে একজন মালিক জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশনায় বিএমইটির ডিজি মহোদয় সৌদিগামী কর্মীদের ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানি। তাদের (মন্ত্রণালয়) যুক্তি হচ্ছে, দূতাবাসের অসত্যায়িত ভিসায় কর্মী গেলে সেক্ষেত্রে কর্মীর চাকরি, বেতন আকামাসহ নানা সুবিধা থেকে নিয়োগকর্তারা বঞ্চিত করেন। পরবর্তীতে এসব বিষয় ফেস করতে হয় মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটিকে।
উল্লেখ্য, মে মাসের তুলনায় জুন মাসে প্রায় ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক সৌদি আরবে কম গিয়েছে।
শুধু সৌদি আরব নয়, অন্যান্য কিছু দেশের জন্যও নন অ্যাটাস্টেট ভিসায় ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। তবে বিএমইটির বহির্গমন শাখার অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখনো রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে টাকা কামাই করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই শাখায় আরো নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সচেতন ব্যবসায়ী মহল।
এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশের শর্তে বিএমইটিতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন এমন একাধিক মালিক বলেন, তুচ্ছ ঘটনায়ও ফাইল আটকে রেখে ঘুষ দাবি করা হচ্ছে। না দিলে নানা সমস্যা দেখানো হয়। তবে সিন্ডিকেটের ফাইল তারা তেমন নাড়াচাড়া ছাড়াই ছেড়ে দেন। আমরা এমন হয়রানি থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি।
এসব অভিযোগ নিয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বহির্গমন) পরিচালক ছাদেক আহমেদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।