নদীর ঢেউ সব মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার আনে। সব ক্লান্তি দূর করে জমে থাকা কষ্টগুলোকে কমিয়ে এক মুহূর্তে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারে। নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ বালুকারাশি পার হয়ে ছোট ঢেউ যখন আছড়ে পড়ে কিনারায়, মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এক অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় তখন। এমনই সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে চাইলে চলে আসুন ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি ছোট্ট চরে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কিংবা কক্সবাজারের মতো বিশাল সৈকত না হলেও মেঘনার বুকে সৌন্দর্যে পূর্ণ বালুকাময় রূপবতী স্বপ্নিল জায়গাটি হচ্ছে মায়া দ্বীপ।
শহরের বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে এখানে আসতে পারেন। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ নিমিষে দূর করে দেয়। যেসব ভ্রমণপিয়াসিরা দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় পান না, তাদের জন্য আদর্শ ভ্রমণ হতে পারে নারায়ণগঞ্জের মায়া দ্বীপ। রাজধানী থেকে এক দিনেই ঘুরে আসতে পারেন মায়ায় গড়ে ওঠা এ দ্বীপ থেকে।
সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নে মায়া দ্বীপ অবস্থিত। সোনারগাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা একটি চর। সোনারগাঁ থেকে এর দূরত্ব চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার। এ চরে নুনেরটেক নামে একটি গ্রামও রয়েছে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশটিতে এ চর যেন একেক ঋতুতে একেক রূপে এসে ধরা দেয়। দ্বীপটির চারপাশ শুধু সবুজ আর সবুজ। বর্ষায় ভয়ংকর বিশাল জলরাশি যেন মেঘনার রূপকে সাগরের আকার নিয়ে এসে ধরা দেয় চোখের সামনে। ঠিক পরেই শরতের সারি সারি কাশবনের সমাহারে বারবার যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এ প্রকৃতির মাঝে। আবার হালকা শীতের মিষ্টি রোদে বালুকাময় নদীপারের ওপর দিয়ে সকাল কিংবা সন্ধ্যাবেলার সূর্যের সৌন্দর্য যেন অন্য রকম এক দৃশ্য সৃষ্টি করে। অসাধারণ এ নদীচরে জ্যোৎস্না রাতে ও ভরা চাঁদের আলোয় বারবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করবে ভ্রমণপিয়াসিদের। মোটকথা, ঢাকার কাছেই বেড়ানোর জন্য বিশেষ উপযুক্ত জায়গা এটি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় শত বছর আগে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা এ চরটির নাম স্থানীয়রাই রেখেছিল নুনেরটেক। এর পানি নোনতা ছিল বলে নামকরণ করা হয় নুনেরটেক। তবে নদীর পানি তেমনটা নয়। সেই নুনেরটেকের কোলঘেঁষেই প্রায় ৪০ বছর আগে জেগে ওঠা আরও একটি চর রয়েছে, যার তিনটি অংশ রয়েছে। এ তিনটি অংশের নাম হল গুচ্ছগ্রাম, সবুজবাগ আর রঘুনার চর। এ গুচ্ছগ্রামের সামনের বিশাল অংশ হলো মায়া দ্বীপ। বর্ষায় এর অস্তিত্ব পানির তলদেশে থাকলেও শুকনো মৌসুমে বিরাট অঞ্চলে পরিণত হয়। এ চরে দাঁড়িয়ে চারদিকে মেঘনায় নৌকায় মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে চমৎকার লাগে। ছোট-বড় অসংখ্য নৌকায় করে জেলেরা এ সময় মাছ ধরে। এ চরবাসীর প্রধান জীবিকা হলো মাছ ধরা। এ দ্বীপের মানুষজন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। তাদের সংগ্রামী জীবনের অনেক কিছুই জানা যাবে এ দ্বীপটিতে বেড়াতে গেলে।