বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

অজস্র সমালোচনার পরও প্রমত্তা পদ্মার বুকে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নসৌধ

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু আজ কোটি বাঙালির স্বপ্নসৌধ। তবে নির্মাণ পর্বের শুরুতে ‘অলীক, অবাস্তব’ বলে ওড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্টজনদের অনেকেই।

অজস্র গঞ্জনা-সমালোচনা পরও প্রমত্তা পদ্মার বুকে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নসৌধ
বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় তারা মেতে ওঠেন সরকারের কঠোর সমালোচনায়। তারা বলেন, নিজেদের টাকায় সেতু অবাস্তব! আবেগি সিদ্ধান্ত। এমন কি ভালো ঠিকাদার মিলবে না বলেও আগাম মন্তব্য করতে ছাড়েননি অনেকে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দূরত্বের কারণে বিদেশি সহযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশয়ের চোরাবালিতে হাবুডুব খান, পরামর্শ দেন দ্রুত সমঝোতার।

তবে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটা যে জানান দিচ্ছে দুর্নিবার অগ্রযাত্রার, সে সেতু নির্মাণের গোড়ায় জমা হয়ে আছে অজস্র গঞ্জনা, সমালোচনা আর নেতিবাচক সব মন্তব্য।

পদ্মা সেতু ইস্যুতে মুহূর্ত দেরি না করেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সুর মেলাতে দ্বিধা করেননি দেশের নাগরিক সমাজের অনেক প্রতিনিধি। প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়াতেই তাদের অনেকে সাঁড়াশি আক্রমণে বিদ্ধ করেন সরকারকে, সরব হন কঠোর সমালোচনায়। আবার কারও বক্তব্য ছিল অনেকটাই ভীতি জাগানিয়া। কেউ ডুবে গিয়েছিলেন সংশয়ের চোরাবালিতেও।

বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্তের পরদিনই এক নিবন্ধে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য লিখেন, অভিযোগ অস্বীকারই সরকারের মূল প্রবণতা। নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব নয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ, বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে এমন দাবি করেন সিপিডির বিশেষ এ ফেলো। যা ছাপা হয় ২০১২ সালের ১ জুলাই প্রথম আলো পত্রিকায় (পৃ. ১৩)। একই দাবি ছিল ড. শাহদীন মালিকের। তিনি বলেন, আবেগ-বিদ্যাবুদ্ধিহীনতা তাড়িত হয়ে অবাস্তব কথা বলছে সরকার (প্রথম আলো, ৩০ জুলাই, ২০১২; পৃ. ১২)।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খানের শঙ্কা ছিল বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রকল্পে কমবে উন্নয়ন-অংশীদারদের সহযোগিতা। সতর্ক করেন, নিজস্ব অর্থায়ন হবে আবেগি সিদ্ধান্ত। আর তাতে মিলবে না ভালো ঠিকাদার। ( প্রথম আলো, ১ জুলাই ২০১২- পৃ. ৩, ৩০ জুলাই, ২০১২; পৃ. ১৫)।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন আরেক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলামও। তার কলামটি ছিল প্রথম আলোতে (১ জুলাই, ২০১২; পৃ. ৩)।

আর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক মাঠে নামলেও এর গ্রহণযোগ্য, যথার্থতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি দাবি করেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, যা ছাপা হয় প্রথম আলোতে (১ জুলাই, ২০১২)।

এক সাক্ষাৎকারে দুদককে কাঠগড়ায় দাঁড় করান সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদারও। যদিও পরে কানাডার আদালতে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছিল কথিত সে দুর্নীতির অভিযোগ।

আর বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলায় সরকারের সমালোচনা করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল লেখেন, ‘জাতীয়তাবাদী চেতনা উসকে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর কথা বলছে সরকার। কিন্তু সেতু বাস্তবায়ন দূরের কথা, উল্টো সরকারের ইমেজ রক্ষাই কঠিন।’ (ছাপা হয় প্রথম আলোতে, ৭ জুলাই; পৃ.১২)।

নিজস্ব অর্থায়ন কিংবা বিকল্প উৎসের অনুসন্ধানকে বিশ্বব্যাংকের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলির শামিল আখ্যা দিয়েছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেছিলেন, ‘এর মাশুল গুনতে হবে পুরো জাতিকে।’

বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ‘ড. ইউনুস ইস্যু’ যে ভূমিকা রেখেছেন তা উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনায় মাতেন সুজন সম্পাদক। লাগামহীন দুর্নীতি দেশকে পেছনে নিয়ে যাওয়ার আরেক উদাহরণ পদ্মা সেতু, এমন মতও ছিল তার।  (ছাপা হয় ২০১২সালের ১৩ জুলাই- প্রথম আলো; উপসম্পাদকীয়, ডেইলি স্টার)

নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সে প্রশ্ন তুলে সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান বলেন, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে। (ছাপা হয় ২২ জুলাই; সাক্ষাৎকার, প্রথম আলো। পৃ. ১২)

আর সুশাসন সংকটে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে, এমন কথা বলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। (ডেইলি স্টার)

যদিও সব সমালোচকের মুখে ঝামা ঘষে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে আছে সগৌরবে।

এদিকে সোমবার (২০ জুন) দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন (২৫ জুন) ৬৪ জেলায় উৎসবের জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এর আগে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরি করা এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল আমাদের। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে, আমরা শেষপর্যায়ে চলে আসতে পেরেছি।’

বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর একদিন পর ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে সেতুটি। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাংশের সংযোগ ঘটবে।

দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত দেশটির সবচেয়ে বড় এ সেতু।

পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com