শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

৪০০ বছরের পুরনো ঢাকার বংশাল

  • আপডেট সময় বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
বংশালের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এর লেনগুলো। ঢাকার মানচিত্রে বংশাল এলাকাটিকে বেশ বড় মনে হলেও মূল বংশালটি বিস্তৃত হয়েছে – হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেন, বংশাল লেন এলাকাদ্বয়ের সমন্বয়ে। আর বংশালের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বংশাল রোডটি পূর্ব দিকে নবাবপুর মানসী সিনেমা হল মোড় থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম দিকে মাহুৎটুলী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে। এই রোডটির দক্ষিণ পাশেই মূলত এলাকাগুলো অবস্থিত হলেও বংশাল লেনের কিছু অংশ উত্তর পাশেও রয়েছে।
হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেন
এই অংশটুকুই মূল বংশাল হিসেবে পরিচিত। বংশাল আহলে হাদীসের মসজিদের পাশ দিয়ে যে গলিপথটি রয়েছে সেটিই হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেন। এখানে ১ নম্বর থেকে ৯০ নম্বর হোল্ডিং পর্যন্ত ৯০ টি হোল্ডিং রয়েছে। আবার এক-একটি হোল্ডিং এর আওতায় একাধিক সাব-হোল্ডিংও রয়েছে।
বংশাল লেন
হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেনের পূর্ব পাশে বংশাল লেন অবস্থিত। এটি নর্থ সাউথ রোড চৌরাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে দশ গজ সামনে হাতের বাম পাশে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাশ দিয়ে যে গলিটি রয়েছে সেই গলিপথটিই বংশাল লেন।
মনোরম পরিবেশ
বংশালের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। তবে ব্যবসায়িক প্রানকেন্দ্র বিধায় দিনের বেলায় কোলাহলময় থাকলেও রাতের দিকে মোটামুটি শান্ত হয়ে যায়। এছাড়া এই এলাকায় রয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বংশাল পুকুর। চারদিকে গাছপালায় পরিবেষ্টিত ও সান বাধানো ঘাঁট বিশিষ্ট এই পুকুরটি বংশালের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
ঐতিহাসিক পুকুর
হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেনের দক্ষিণ প্রান্তে নয়বাজার সংলগ্ন স্থানে রয়েছে বংশাল পুকুর। এই পুকুরটির কারণেও বংশাল এলাকাটির বিশেষত্ব রয়েছে। পুকুরটি চারকোনা বিশিষ্ট। এই চারপাশ গ্রীল দিয়ে আবর্তন করে রাখা হয়েছে। আর পুকুরের পাড়গুলোতে রয়েছে সারি সারি নারকেল গাছ ও অন্যান্য বাহারি গাছ। পুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে ১ টি আরে মোট ২ টি পাকা ঘাঁট। এর মধ্যে উত্তর প্রান্তের ঘাঁটটি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং দক্ষিণ প্রান্তের ঘাঁটটি আশেপাশের কর্মজীবি অস্থায়ী মানুষের গোসলের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের গোসলের জন্য কোন টাকা প্রদান করতে না হলেও অস্থায়ী বাসিন্দাদের গোসলের জন্য জনপ্রতি ২ টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হয়। যেমন – পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, রুই, কাতল। প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকেটের মাধ্যমে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়। শৌখিন মাছ শিকারীরা পুকুরের পানিতে বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে মাচা তৈরী করে মাচাতে বশে মাছ শিকার করেন। এছাড়া বছর শেষে সমগ্র পুকুরে একবারে জাল ফেলে সকল মাছ ধরে এলাকার বাসিন্দাদের নিকট বিক্রয় করা হয়। পুকুর থেকে প্রাপ্ত অর্থ পুকুরের উন্নয়ন, কর্মচারীদের বেতন ও এলাকার গরীব-দু:খীদের সেবায় খরচ করা হয়।
এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তাদের জীবনযাত্রার মানও ভাল। এছাড়া এলাকার বাসিন্দারা একে অপরের প্রতি বেশ সহনশীল।ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে বংশাল এলাকায় আবাসন সমস্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই এলাকার জমির মূল্য আকাশচুম্বী। এছাড়া এই এলাকার বাড়ি ভাড়াও পুরনো ঢাকার অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশী। এই এলাকার ভবনগুলোতে তেমন বড় নয় আবার ছোটও নয়। বেশীরভাগ ভবনেই রয়েছে ২ রুমের ফ্ল্যাট।
বাসিন্দারা খাবারের দিক থেকে মোটামুটি ভোজন রসিক হলেও এলাকায় তেমন কোন খাবারের দোকান নেই। এলাকার একমাত্র খাবারের দোকান হিসেবে বিবেচিত হয় নর্থ সাউথ রোডে অবস্থিত হোটেল আল-রাজ্জাক। এছাড়া অলিগলিতে ছোট-খাটো পুরি, লুচির দোকান রয়েছে। হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেনে রয়েছে পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাখরখানি রুটির ১ টি দোকান। এছাড়া সকাল বেলা বংশাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত আলীর নাস্তার দোকানের পরোটার ঘ্রাণ পথচারীদের নজর কাড়তে সক্ষম। এই হোটেলের কাস্টমারদের ভিড় অনেকসময় পথচারীদের কৌতুহলের উদ্রেক সৃষ্টি করে। আর বংশাল মাহুৎটুলী মোড়ে চুড়িওয়ালা গলিতে রয়েছে শামসের আলীর ভূনা খিচুরী।
ঢাকার গুলিস্তান, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী যেখান থেকেই আসুন না কেন প্রতিটি স্থান থেকেই এই এলাকায় আসার জন্য পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com