সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) ৪০০ কোটি টাকার মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার মো: জাহাঙ্গীর আলমের পিতা মৃত রহমত উল্লাহ খিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কেরানী ছিলেন। রহমতউল্লাহ’র পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। ভাইদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম দ্বিতীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো: জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। জাতীয় সংসদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, তিনি অর্থবিত্তের মালিক হতে শুরু করেন ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, বদলিসহ নানা তদবির করতেন। নোয়াখালীর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে এর সঙ্গে টেন্ডারবাজিও করতেন। জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
তথ্য সংগ্রহকালে আরো জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন যে, তাঁর নিজের নামে প্রায় ২১ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। জাহাঙ্গীর নিজের নামে সাড়ে চার একরের বেশি কৃষিজমি, ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার অকৃষিজমি, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, মিরপুরে ৭ তলা ভবন, গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন ও মিরপুরে ২টি ফ্ল্যাট দেখিয়েছেন (যার দাম ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা)।
চাটখিলে পৈত্রিক ভিটায় করেছেন চারতলা বাড়ী। স্ত্রীর নামে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ২৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা।
জাহাঙ্গীর পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি আছে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী’র হরিনারায়ণপুর এলাকায়। বাড়িটির ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেয়া হয়েছে। তিনতলার একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেন জাহাঙ্গীরের পরিবার। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা ও ব্যাংকে মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, এবং স্ত্রীর নামে আছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৬ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, এফডিআর আছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা। স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা ও ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়া স্ত্রীর নামে একটি গাড়ি আছে, যার দাম হলফনামায় দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অংশীদারী ফার্মে তার মূলধন আছে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ব্যবসায় মূলধন আছে ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫১০ টাকা। এ ছাড়া তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, মো: জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানিরও মালিক।
দুদকের তথ্য সংগ্রহকালে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যেই মো: জাহাঙ্গীর আলম, তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সমূহের নামে কোন হিসাব থাকলে– সেসব হিসাবের লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩(১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা নির্দেশনা প্রদান করা হলো।