বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

৩২ বছরে ১০৫ বিয়ে করে বিশ্ব রেকর্ড

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে মোট ১০৫ নারীকে বিয়ে করেছেন জিওভানি ভিগ্লিওটো নামের এক মার্কিন নাগরিক। এর মধ্য দিয়ে তিনি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। তবে এসব বিয়ে তিনি করেছেন প্রতারণার মাধ্যমে। তাছাড়া বিয়ে করা কোনো স্ত্রীকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্স দেননি তিনি। সম্প্রতি তাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।

এতে বলা হয়েছে, জিওভানির কোনো স্ত্রীই তার অন্য স্ত্রীর বিষয়ে জানতো না। এমনকি তারা আসলেই কেউ জিওভানিকেও ভালোভাবে জানতো না। যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ টি অঙ্গরাজ্য এবং বিশ্বের ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের নারীদের বিয়ে করেছেন তিনি। নিজের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে নারীদের সাথে ভাব জমাতেন তিনি। এরপর কারো সাথে দুই মাস, কারো সাথে একমাস সংসার করে পালিয়ে যেতেন এই ব্যক্তি। তার ১০৫ জন স্ত্রীর মধ্যে কারো সাথেই বিচ্ছেদ হয়নি।প্রত্যেক বার বিয়ের সময় আলাদা আলাদা পরিচয় ব্যবহার করতেন তিনি।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার জিওভানি নামটিও আসল নয়। নিজের সর্বশেষ বিয়ের সময় এই নাম ব্যবহার করেছিলেন তিনি। শেষমেশ ধরা পড়লেও তার সত্যিকারের পরিচয় কেউ উদ্ধার করতে পারেনি। বহুবিবাহের জন্য আলোচিত এই ব্যক্তির জীবন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৪৯ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে লাগাতার বিয়ে করেছেন তিনি। এই সময়ের মধ্যেই বিয়ের পিড়িতে বসেছেন ১০৫ জন নারীর সাথে।

প্রতি সংসারের গড় স্থায়িত্ব মাত্র তিন মাস থেকে সামান্য বেশি। গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড জানিয়েছে, বিয়ে করা ছিল এই ব্যক্তির নেশা। সেজন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যেতেন তিনি। এরপর বিভিন্ন মার্কেট কিংবা পার্কে গিয়ে ভাব জমাতেন স্থানীয় নারীদের সাথে। কথার জালে নারীদের ফাঁসাতে খুবই দক্ষ ছিলেন জিওভানি। কথায় কথায় ভাব জমিয়ে বন্ধুত্ব করতেন, আর সুযোগ পেলেই প্রস্তাব দিতেন বিয়ের জন্য।

এ সময় নিজেকে ব্যবসায়ী কিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানাতেন, অফিসিয়াল কাজে সেই এলাকায় এসেছেন। এভাবে নারীদের ভুলিয়ে বিয়ে করতেন তিনি। তারপর কিছুদিন সংসার করে উধাও হয়ে যেতেন সেই নারীর সকল ধন সম্পদ নিয়ে। এক্ষেত্রে চমৎকার একটি কৌশল অবলম্বন করতেন জিওভানি। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি স্ত্রীদের বলতেন, সবকিছু বিক্রি করে তার এলাকায় গিয়ে থাকতে।

স্বামীর এমন কথায় খুব সহজেই রাজী হতেন নারীরা। নিজেদের বাড়িঘর বিক্রি করে টাকা পয়সা তুলে দিতেন জিওভানির হাতে। অনেক সময় সংসারের জিনিসপত্র ট্রাকে তুলে নিয়ে যেতেন জিওভানি। আর স্ত্রীদের হাতে তুলে দিতেন ট্রেনের টিকেট। পরে সকল জিনিসপত্র বিক্রি করে উধাও হয়ে যেতেন জিওভানি। অন্যদিকে স্ত্রীরা ট্রেনের মাধ্যমে নির্ধারিত জায়গায় যাওয়ার পর বুঝতেন, সবকিছু ছিলো সাজানো প্রতারণা।

এরকম প্রতারণার খবর নিয়মিত পাওয়া যেতো পত্রিকায়। কিন্তু জিওভানি একাই সেসব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন, সে কথা কেউ ভাবতে পারেনি। কারণ জিওভানি দেখতে ছিলেন খুবই সাধাসাধি এবং অভিজাত চেহারার। তাছাড়া প্রত্যেক বিয়ের আগে নিজের পরিচয় পালটে ফেলতেন তিনি। তাই আগের অপকর্মের কথা কেউ জানতে পারতো না। এভাবে ১০৫ টি বিয়ে করার পর ১৯৮১ সালে গ্রেফতার হন জিওভানি। সে সময় প্রতারিত হয়ে তার বিরোদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন সর্বশেষ বিয়ে করা স্ত্রী।

এরপরই একে একে বেরিয়ে আসে জিওভানির সকল অপকর্ম। আদালতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ দেন বেশ কিছু নারী। শেষ পর্যন্ত ৩৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয় জিওভানির বিরোদ্ধে। আদালতের রায়ে ৩৪ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। যদিও ১৯৯১ সালে জেলের মধ্যেই মৃত্যু বরণ করেন তিনি। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য নিয়ে অনুযায়ী, কোন বিচ্ছেদ ছাড়া সবচেয়ে বেশি বিয়ের রেকর্ড এই ব্যক্তির দখলে। মৃত্যুর আগে জিওভানি স্বীকার করতেন, নারীদের প্রতি দুর্বলতাই ছিলো তার একমাত্র অপরাধ।

তবে তার দাবি, তিনি মোটেও একা দোষী নন। তার বিরুদ্ধে নারীদের ভুলভাল বুঝিয়ে বিয়ের অভিযোগ এনেছিল আদালত। তবে জিওভানির বলেন, তিনি যাদেরকে বিয়ে করেছেন সেসম মেয়েদের বেশিরভাগই তাকেই আগে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com