উচ্চ সুযোগ-সুবিধা ও বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভনে বিদেশে পাঠানোর নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে রাজধানীর উত্তরার ‘ম্যাচ ট্রাভেল এজেন্সি’। ওই ট্রাভেল এজেন্সির সামনে অবস্থান করছেন বিক্ষুব্ধরা। তাঁদের দাবি—প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ‘ম্যাচ ট্রাভেল এজেন্সি’।
গতকাল রোববার বিকেলে উত্তরা ১২ নং সেক্টরের ৬ /সি সড়কের ৬ নম্বর বাসার ওই এজেন্সির সামনে জড়ো হন ভুক্তভোগীরা। খবর পেয়ে তাঁদের সহযোগিতায় ছুটে আসেন উত্তরায় বসবাসরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এর আগেই পালিয়ে যান ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজারসহ সবাই।
সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই এজেন্সির সামনে ভুক্তভোগী শতাধিক মানুষ ও তাঁদের স্বজনেরা বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বিক্ষোভকারীরা আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আমরা এমন ১২০ জনের মতো ভুক্তভোগী রয়েছি। সবার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি নিয়ে পালিয়েছে ওই এজেন্সির লোকজন।’
নরসিংদীর রায়পুরার ভুক্তভোগী দিন ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তুর্কমিনিস্তানে শ্রমিক হিসেবে ভালো বেতন ও উচ্চ সুযোগ-সুবিধায় নেওয়া হবে, তাও স্বল্প খরচে। এমন বিজ্ঞাপন থেকে আমি ও আমার পরিচিত চারজন ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেই। সেই সঙ্গে পাসপোর্টও জমা দেই। কিন্তু আমাদের বিদেশে পাঠানোতো দূরের কথা পাসপোর্ট ও টাকাও দিচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য গ্রাম থেকে সুদে ১ লাখ, কিস্তিতে ১ লাখ ও গয়না বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা এবং সঙ্গে পাসপোর্টও দিয়েছি। কিন্তু এখন ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন টাকা, পাসপোর্ট কোনোটাই দিচ্ছে না। আবার বিদেশেও পাঠাচ্ছে না। আমাদের গত ১৫ আগস্ট তুর্কমিনিস্তান নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।’
দিন ইসলামের চাচাতো ভাই রাকিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভালো থাকার আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য দেড় লাখ টাকা ব্যাংক লোন, ৫০ হাজার টাকা ধার ও এক লাখ টাকা সুদে নিয়ে দিয়েছিলাম। এখন তাঁরা বিদেশেও নিচ্ছে না, আবার টাকাও দিচ্ছে না। যার কারণে লোনের টাকা, সুদের টাকাও দিতে পারছি না। টাকার জন্য লোকজন বাসায় এসে বসে থাকে।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার নিপা বেগম লিপি নামের এক গৃহিণী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসে ওভার টাইমসহ ২২-২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতাম। অনলাইন বিজ্ঞাপনে দেখি, ম্যাচ ট্রাভেল এজেন্সি বিদেশে শ্রমিক পাঠাবে। শ্রমিকদের বেতন ৪৫০ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৫২ হাজার), ওভারটাইম মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকা বেতন পাব। পরে আমি এই এজেন্সিতে এসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেই। এছাড়াও মেডিকেলের জন্য ৩ হাজার ৬০০ টাকা, ফিঙ্গারের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং ট্রেনিং করার জন্য ১ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিন মাসে আগে বলেছিল বিদেশে পাঠাবে, তাই চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। তাঁদের কথায় গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিন মাস ধরে বিদেশে পাঠাচ্ছে না।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া সেনাবাহিনীর মেজর জাহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা এসে দেখি ট্রাভেল এজেন্সির কেউ নেই। সবাই পালিয়ে গেছে। তাই এখানে আমরা কিছু করতে পারি নাই। ভুক্তভোগীদের মামলা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। মামলা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ম্যাচ ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়েও বক্তব্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও এজেন্সির ম্যানেজার আব্দুল কাশেমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।’