চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের তীব্র লড়াই আর ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে আস্থাশীল ট্রাম্পকেই বেছে নেন।
বিরল এ জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ সুইং স্টেট উইসকনসিনে জয় পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজ্যটিতে ১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এ জয়ের ফলে ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে গেলেন ট্রাম্প। এ পর্যন্ত কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্প অর্থনীতি, অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন, যা মূলত তার সমর্থকদের আরও শক্তিশালী করে। মার্কিন অর্থনীতির নিম্নগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান অনেক ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশাপাশি, ইউক্রেনের মতো বাইরের দেশের জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজ দেশের অগ্রাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
বিশেষ করে নির্ধারণী সুইং স্টেটগুলোর জয়ই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয় দেখিয়ে দেয় যে, অনেক আমেরিকান ভোটার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কমলা হ্যারিস সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেননি।
এবারের নির্বাচনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক জরিপে ট্রাম্পের পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে আসা সত্ত্বেও ফলাফল ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। জরিপগুলোর অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিসের পক্ষে ইঙ্গিত দিলেও ট্রাম্পের সমর্থকরা শেষ মুহূর্তে বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন।
এই নির্বাচনী জয়ের মাধ্যমে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত হচ্ছেন। তিনি আরও শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে ফিরে আসছেন, যা তাকে তার ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি বাস্তবায়নে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে এই জয়ে ট্রাম্পের সমালোচকরা যেমন আমেরিকার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তেমনি তার সমর্থকরা আশা করছেন যে এই মেয়াদে ট্রাম্প তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলস থাকবেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প একাধিক ভিন্নমতকে উপেক্ষা করে তার নিজের বলয়ে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করবেন। তবে এটি শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে, যেখানে ট্রাম্প একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সংকটে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে পদক্ষেপ নিতে পারেন।