হোটেলের বাসন ধুয়ে পেতেন ১৮ টাকা, এখন তার বছরে আয় ৩০০ কোটি

: পরিশ্রম করলে তা যে বিফলে যায় না তার জলন্ত উদাহরণ জয়রাম। এক সময় হোটেলের থালা বাসন ধোয়ার কাজ করতেন। বেতন হিসেবে মাসে পেতেন মাত্র ১৮ টাকা। কিন্তু সেই জয়রামের এখন বাৎসরিক আয় ৩০০ কোটি টাকা।

গরিব ঘরের ছেলে থেকে জয়রামের কোটিপতি হওয়ার কাহিনি যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। কর্নাটকের মেঙ্গালুরুর উদুপিতে জন্ম জয়রামের। তার বাবা ছিলেন গাড়িচালক। গরিবের সংসারে বেড়ে ওঠা তার।

পড়াশোনায় তেমন ভাল ছিলেন না জয়রাম। স্কুলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেই কড়া শাসন করতেন বাবা। এই বকুনিই যেন তাকে আগামী দিনের পথ দেখাল। এক বার স্কুলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন জয়রাম। বাবার বকুনির ভয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর।

১৯৬৭ সালে বাবার পকেট থেকে কিছু টাকা নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে বাসে চড়ে সোজা মুম্বাই পাড়ি দেন জয়রাম। সেই থেকে শুরু হল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই।

মুম্বাইয়ে পা রেখেই লড়াকু জীবন শুরু হল জয়রামের। নিজের পায়ে দাঁড়াতে সেই সময় একটি হোটেলে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই হোটেলে থালাবাসন পরিষ্কার করতেন জয়রাম। এ জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পেতেন ১৮ টাকা।

ওই হোটেলে প্রায় ৬ বছর কাজ করেছিলেন জররাম। এই সময়ের মধ্যে ‘পদোন্নতি’ ঘটেছিল জয়রামের। বাসন পরিষ্কারের কাজের পাশাপাশি হোটেলে ‘ওয়েটার’ (খাবার পরিবেশক) হন। পরে হোটেলের ম্যানেজারও হন তিনি।

হোটেলে কাজ করার সময়ই জয়রাম জানতে পারেন যে, মুম্বইয়ে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের রেস্টুরেন্ট খোলা হচ্ছে। নিজে দক্ষিণ ভারতীয় হওয়ায় তিনিও এই ধরনের রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করেন। তবে মুম্বইয়ের বদলে চলে যান দিল্লিতে।

তবে দিল্লিতে তার পরিকল্পনা প্রথমে সফল হয়নি। নিরামিষ আহারের রেস্টুরেন্ট খুলতে চেয়েছিলেন জয়রাম। ওই সময় দিল্লিতে একটি উদুপি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন তার এক ভাই। ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে আসার পর সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রনিক্সের ক্যান্টিনের টেন্ডার নেন জয়রাম।

এর পর ১৯৮৬ সালে দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে নিজের রেস্টুরেন্ট খোলেন জয়রাম। নাম দেন ‘সাগর’। যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে প্রথম রেস্টুরেন্ট খোলেন তিনি। সেই সময় তাকে সাহায্য করেছিলেন বন্ধু-পরিজন।

ওই সময় দিল্লিতে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেতে লোকে ‘উডল্যান্ড’, ‘দাসপ্রকাশ’ রেস্টুরেন্টে যেতেন। ক্রেতাদের কাছে টানতে নতুন চাল চালেন জয়রাম। ‘উডল্যান্ড’ রেস্টুরেন্ট কিনে ফেলেন তিনি। পরে ওই রেস্টুরেন্টের নাম বদলে রাখেন ‘সাগর রত্ন’।

সেই থেকে শুরু হয় ‘সাগর রত্ন’ রেস্টুরেন্টের পথচলা, যা পরবর্তী সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। উত্তর ভারতের ‘দোসা কিং’ বলা হতে থাকে জয়রামকে। জয়রামের রেস্টুরেন্টের ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। বিশ্ব জুড়ে এই রেস্টুরেন্টের শাখা রয়েছে ১০০টিরও বেশি।

মাত্র ১৮ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন রোজগার জীবন। সময়ের স্রোত পেরিয়ে সেই জয়রাম এখন কোটিপতি। এত রেস্টুরেন্টের সুবাদে তার বছরে আয় ৩০০ কোটি টাকা।

‘জয়রাম বনান গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান তিনি। এই সংস্থার আওতায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ক্যান্টিন।

সূত্র: আনন্দবাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: