হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা সদ্য বিবাহিত নব দম্পতির জন্য বরাবরই বয়ে আনে আলাদা রোমাঞ্চ। সাধারণত বিয়ের পরের কিছুদিন নব দম্পতির ভালোবাসায় ভরা নিভৃত সময়কেই হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।বিয়ের ধকল কাটিয়ে উঠতে এবং নিজেদের মধ্যে একান্তে কিছুটা সময় কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। ঘুরতে যাওয়া কোনোকালেই হানিমুনে বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে আজকাল পরিচিত জগতের বাইরে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ছাড়া হানিমুন উদযাপন করার কথা একপ্রকার ভাবাই যায় না।
শীত পড়তেই শহর জুড়ে শুরু হয়ে গেছে বিয়ের মরশুম। বলিউড হোক বা টলিউড বিয়ের সানাই বেজে উঠেছে সব জায়গাতেই। এমনকি সাত পাঁকে বাধা পড়তে তারকাদের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। এহেন উৎসবের আমেজে তাই চাহিদা বেড়ে গেছে হানিমুনেরও। আপনিও কি কম খরচে হানিমুনের জন্য মোহময়ী জায়গার সন্ধান করছেন? করোনা আবহে দূরে কোথায় না গিয়ে হাতের কাছেই কাটাতে চান আপনার বিয়ে পরবর্তী বিশেষ মুহূর্ত গুলো? তবে আপনারই জন্য আজকের এই প্রতিবেদন। ঝটপট দেখে নিন কম খরচে সমুদ্র পাহাড় কিংবা জঙ্গলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হানিমুন স্পট কোনগুলো।
কীভাবে যাবেন: সিকিম যেতে হলে কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি গামী ট্রেন ধরতে হবে। এরপর স্টেশন থেকে গাড়ি করে সিকিম। অবশ্য সিকিমের কোন কোন দিক ঘুরবেন আগে থেকে তা ঠিক করে যাওয়া ভালো। সিকিমের সিল্ক রুট, জুলুক হয়ে আসতে পারেন গ্যাংটক। সাধ্যের মধ্যেই পেয়ে যাবেন প্রচুর থাকার জায়গা। পাহাড়ের গায়ে যদি মেঘ মাখতে চান, তবে সিকিম আপনাদের জন্য হানিমুনের পারফেক্ট গন্তব্য।
খরচ: মোটামুটি ৮০০০ থেকে ১০০০ টাকা মাথা পিছু খরচেই ৬-৭দিন আরাম করে ঘুরে আসতে পারবেন সিকিম।
কলকাতার হাতের কাছেই রয়েছে পুরী আর দীঘা। কিন্তু বহুবার পুরী কিংবা দীঘা গেলেও কি আপনার সমুদ্রের নেশা কাটে না? পাহাড়ের চেয়ে সমুদ্রই কি আপনাকে অনেক বেশি টানে? তাহলে পুরী আর দীঘার গতানুগতিকতা কাটাতে হানিমুনে চলে যেতেই পারেন গোপালপুর। উড়িষ্যার উপকূলে অপেক্ষাকৃত নিভৃত গোপালপুর বরাবরই নব দম্পতিদের প্রিয় আকর্ষণ।
কিভাবে যাবেন: গোপালপুর যেতে হলে হাওড়া থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেস অথবা ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসে চেপে পৌঁছে যাবেন ওড়িশার বেহরমপুর স্টেশনে। বেহরমপুর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে সোজা গোপালপুর! সমুদ্র ছাড়া গোপালপুরে একটা উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে যার নাম তপ্তপানি। শীতে হানিমুনে গেলে তপ্তপানি দেখে আসবেন অবশ্যই। জিরাং মনাস্ট্রিতেও একবার ঘুরে আসতে পারেন, প্রকৃতির অপরূপ শোভা আপনাদের মন ভরিয়ে দেবে। গোপালপুরের সমুদ্র নিয়ে আলাদা করে আর কিছু বলার নেই। পূর্ণিমার রাতে পূর্ণচন্দ্র যখন তার সমস্ত জ্যোৎস্না নিয়ে সমুদ্রের উপর পড়ে আপনার মধুচন্দ্রিমা জমিয়ে দিতে তাই যথেষ্ট, কি বলেন?
খরচ: ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকাতেই ৫-৬ দিনের গোপালপুর ভ্রমণ কমপ্লিট হয়ে যাবে। মাাাাত্রত্ত
পাহাড় সমুদ্র তো হল, এবার আসি জঙ্গলের কথায়। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য হানিমুনে জঙ্গলের বিকল্প নেই। আর জঙ্গল দেখতে আপনাকে আর কষ্ট করে ভিনরাজ্যে পারি দিতে হবে না। আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই হানিমুনের জন্য রয়েছে আদর্শ কিছু জঙ্গল। তাই কম খরচে ঘুরে আসতেই পারেন গাছপালা ভরা সেই সব আদিম রোমাঞ্চে। জঙ্গল বলতে অনেকেই ডুয়ার্সের কথা বলেন। তবে আমি বলব ঘুরে আসুন চিলাপাতা ফরেস্ট থেকে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী যেকোনও ট্রেনে চেপে বসুন। সারাদিনই ট্রেন রয়েছে, তবে রাতের দিকে ট্রেন ধরলেই সবচেয়ে ভালো। সকাল সকাল পৌঁছে যাবেন এনজেপি স্টেশন। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান চিলাপাতা ফরেস্টে। যাওয়ার পথেই পড়বে গরুমারা, চাপড়াহাটি আর জলদাপাড়া। রাতটা বিশ্রাম নিয়ে পরদিন ভোরেই বেরিয়ে পড়ুন জঙ্গল সাফারিতে। এর জন্য আগে থেকে বুকিং করে রাখতে হয়। সারাদিন ইচ্ছেমতো জঙ্গলে ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসুন ঘরে। এরপর পরদিন বক্সা জলদাপাড়া মাদারিহাটের জঙ্গল দেখে আসতে পারেন। চিলাপাতায় থাকার জন্য বনদপ্তরের সরকারী গেস্টহাউজ রয়েছে। আগে থেকে সেখানে বুকিং করতে হয়। জঙ্গল সাফারির জন্য আগে থেকে পারমিশন করাতে হয়, সেক্ষেত্রে আগে থেকে নিজেদের পরিচয়পত্র এবং ছবি জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট আধিকারিককে।
খরচ: জঙ্গল ভ্রমণের খরচ কিন্তু আরো কম। ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা মাথাপিছু খরচে ঘুরে আসতে পারেন চিলাপাতা থেকে।