বিয়ের পরপরই নবদম্পতি একদম একান্তে নিজেদের মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে চান। আর হানিমুনে যাওয়ার মাধ্যমেই তারা বিয়ের পরের মধুর সময়টা উপভোগ করে থাকেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা দেশের বাইরে হানিমুনে যাওয়া বেছে নিলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ নবদম্পতিরই প্রথম পছন্দ দেশের ভেতরের দর্শনীয় বিভিন্ন স্থান। তাই নবদম্পতিদের জন্য হানিমুনে যাওয়ার সেরা ৩টি স্থান নিয়ে আজকের এই পোস্ট।
শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরাই নয়, বিদেশী পর্যটকদের কাছেও কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নবদম্পতির কাছেও হানিমুনে যাওয়ার জন্য কক্সবাজারই প্রথম পছন্দ। সাগরের তীরে একসাথে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতাও কিন্তু বেশ রোমান্টিক। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এই আবেদন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সীও বেশ বুঝতে পেরেছে। তাই কক্সবাজারকে কেন্দ্র করেই হানিমুন প্যাকেজ সব থেকে বেশি।
আপনার সামর্থ্য আর প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে বাস অথবা বিমান, যে কোনটাই বেছে নিতে পারেন। হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া পরিবহন ঢাকা-কক্সবাজার এসি এবং নন-এসি দুই ধরনের কোচই দিয়ে থাকে। ট্রেনে যেতে চাইলে অবশ্য সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারবেন না, চট্টগ্রাম নেমে বাসে যেতে হবে। বিভিন্ন কোচের বাসের টিকিটের দাম ৭০০-২০০০ টাকার মধ্যে পাবেন।বিমানে যদি যেতে চান, তাহলে ইকোনমি ক্লাসের রাউন্ড ট্রিপ টিকিটের জন্য গুনতে হবে জনপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। নভোএয়ার, ইউএস বাংলা, ইউনাইটেড এবং বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট ঢাকা থেকে কক্সবাজার যায়।
হোটেল, অথবা থাকার জায়গার খরচ কেমন পড়বে সেটা নিতান্তই আপনার ওপর নির্ভর করবে। যেমন ধরা যাক, মারমেইড বিচ রিসোর্টে প্রতিরাত ১০,০০০ টাকার স্যুইটও আছে, আপনি বিলাস-বহুল কয়েকটি দিন কাটাতে চাইলে এমন স্যুইট ভাড়া করতেই পারেন। তবে যাদের বাজেট সীমিত, তারাও চাইলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে বেশ ভালো হোটেল পাবেন।কক্সবাজার গেলে ইনানী বিচ, হিমছড়ি, মহেশখালি, কুতুবদিয়া দেখে আসতে ভুলবেন না যেন। সময় থাকলে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট-মার্টিন থেকেও ঘুরে আসুন। আর হ্যা, সি-ফুডের স্বাদ নেয়া একদমই আবশ্যক!
বিগত বছরগুলোয় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে সিলেটের আবেদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কম খরচে অনেকগুলো সুন্দর জায়গা দেখা যায় সিলেটে, তাই সিলেটের আকর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। নবদম্পতিদের জন্যও বেশ আদর্শ হানিমুনের স্থান সিলেট।সিলেটে যাওয়াও কিন্তু বেশ সহজ। বাস, ট্রেন অথবা বিমান, যে কোন উপায়েই সিলেট যাওয়া যায়। হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন সহ আরো অনেক বাসের কোচ আছে। ৫০০-১২০০ টাকার মত পড়বে এসব বাসের এসি এবং নন-এসি কোচের টিকিটের দাম। ট্রেনের টিকিটের দাম শ্রেণীভেদে ৩০০-৮০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন, যদি ট্রেনে যেতে চাইলে টিকিট বেশ আগেভাগে কাটতে হবে।
সিলেটেও বিভিন্ন দামের মধ্যে হোটেল এবং রিসোর্ট ভাড়া করতে পারবেন। সিলেটের কাছে শ্রীমঙ্গলে এবং মৌলভীবাজারেও যদি ঘুরতে চান, তাহলেও রিসোর্ট আর হোটেল দুটোই পাবেন। ১ হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার পর্যন্ত হোটেল বা রিসোর্ট খরচের রেঞ্জ।সিলেটে ঘুরতে গেলে সবাই প্রথমেই চা-বাগান দেখতে চায়। মূল শহরের ভেতরে অথবা বাইরে প্রচুর চা-বাগান দেখতে পারবেন। শহরের ভেতরেই আছে হযরত শাহজালালের মাজার। সিলেট শহর থেকে কিছুটা বাইরের আছে মালিনিছড়া, বিছানাকান্দি, জাফলং, রাতারগুল, মাধবকুণ্ড এবং মাধবপুর। তাই সিলেটে হানিমুনে গেলে হাতে সময় নিয়ে যাওয়া উচিত।
বাঘাইছড়ি তে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সাজেক উপত্যকা। বাংলাদেশ সবথেকে সবুজ এবং সুন্দর জায়গার তালিকা করলে সাজেক উপত্যকা একদম ওপরের দিকেই থাকবে। তাছাড়া, সাজেক উপত্যকা থেকে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং নীলগিরি খুব দূরে নয়। তাই সময় নিয়ে ঘুরতে গেলে এই সবগুলোই দেখে আসা খুবই সম্ভব।সাজেকে যাওয়ার রাস্তা কিন্তু আবার অতটা সোজা নয়। ঢাকা থেকে সাজেক যাওয়ার সরাসরি কোন রাস্তা নেই। বাসে চড়লে আগে রাঙ্গামাটি যেতে হবে, সেখান থেকে দীঘিনালা। ট্রেনে গেলে প্রথমে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে রাঙ্গামাটি, এবং আবার দীঘিনালা। তাই বাসে যাওয়াই ভালো হবে। সৌদিয়া, শ্যামলী, বিআরটিসি ইত্যাদি বাস সরাসরি খাগড়াছড়ি যায়। ৫৮০ থেকে ১২০০ টাকা টিকিটের দাম। দীঘিনালা যাওয়ার পর গাড়ি অথবা জিপ রিজার্ভ করে সাজেক যেতে হয়। ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা পড়বে এর খরচ। চেষ্টা করুন আরো কিছু যাত্রীর সাথে ভাড়া করতে, যাতে খরচ কমে আসে।
সাজেক যাওয়ার পর যাত্রাপথের ক্লান্তি নিতান্তই ভুলে যাবেন। কলাঙ্ক পাহাড়ের ওপর থেকে দেখা সূর্যোদয় আপনার আজীবন মনে থাকবে। আর সাথে প্রিয়জন থাকলে তো কথাই নেই। সাথে রুইলুই পাড়া, লুসাই পাহাড়, কমলক ঝর্ণা তো থাকছেই। হোটেলের বদলে চেষ্টা করুন ছোট কটেজ ভাড়া করতে। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারবেন, সাথে বেশি প্রাইভেসীও পাবেন। ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় এসব কটেজ ভাড়া নেয়া যায়।