শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

হাইটেক পার্ক: ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ৯ কোম্পানির

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

মোবাইল ফোন উৎপাদন, অ্যাসেম্বলিং, কম্পিউটার পার্টস উৎপাদনসহ তথ্য প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সেবা তৈরিতে হাইটেক পার্কে বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে ওয়ালটনসহ দেশের নয়টি প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার সরকারের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে সাতটি, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দুটি কোম্পানি ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কছাড়, বিদেশী এক্সপার্টদের আয়ে করছাড় ও উৎপাদিত পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতিসহ বিপুল কর ছাড় পাবেন এ উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

নতুন করে ৩.১ একর জমিতে ৬.৫০ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটি এখানে আইটি আইটিইএস, ডিজিটাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে কাজ করবে। এতে কর্মসংস্থান হবে ১৫৫০ জনের।

ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন জমি নেওয়া হয়েছে। এখানে আপাতত রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে ডিজিটাল সার্ভিস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবে সবচেয়ে বড় চমক তথ্য প্রযুক্তির রাজধানী খ্যাত সিলিকন ভ্যালি বেইজড বাংলাদেশী উদ্যোক্তা উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড উচ্চ মানসম্পন্ন সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সার্ভিস এর জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে সিলিকন ভ্যালি ছাড়াও কানাডা, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে অফিস রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। নতুন বিনিয়োগে আইওটি ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং, ওয়েপার টেস্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং করবে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার অ্যান্থনি ডি সিলভা বলেন, বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাটরের ৪৫৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশেও এর বাজার বিশাল। বাংলাদেশে শুধু দুটি প্রতিষ্ঠান সেমিকন্ডাটিং নিয়ে কাজ করে। তবে এখনো কেউই ম্যানুফ্যাকচারিং করছে না। উল্কাসেমি শুরু করলে এটি হবে বাংলাদেশে প্রথম।

“আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২৫০ জনের বেশি দক্ষ কর্মী কাজ করছেন।হাইটেক পার্কে নতুন বিনিয়োগে অন্তত ৫০০ লোকের কর্মসংর্স্থান হবে,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও টেকনোমিডিয়া লিমিটেড দশমিক ৮৭ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি এটিএম, সিআরএম, আরসিডিএম মেশিন এসম্বল করতে প্রায় ২.৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড নিচ্ছে দশমিক ৯৬ একর জমি। এতে তারা প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ১০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। প্রতিষ্ঠানটি কালিয়াকৈর আইটি এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এসম্বল করবে।

ড্যাফোডিল ফ্যামিলি অ্যান্ড সিনেটরের গ্রুপ সিইও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, “আমরা ল্যাপটপ ও ট্যাব ম্যানুফ্যাকচারিং করবো। আমরা এ বছরেই কাজ শুরু করতে চাই। ছয় মাসের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হবে। আমাদের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।”

মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এসম্বল এবং উৎপাদনের জন্য প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি দশমিক ৬৫ একর জমি নিচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন বলেন, “সেলট্রন বাংলাদেশের প্রথম ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস। আন্তর্জাতিক মানের ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং এর সকল সুযোগ সুবিধা থাকায় আমাদের মনোযোগ এখন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তৈরির দিকে। আমরা ইসিজি, প্রেশার মনিটর তৈরি করব।”

স্মার্ট ফোন এসেম্বল করতে ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ম্যাকটেল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ১.৩৭ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে রেডডট ডিজিটাল লিমিটেড ও ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড ডাটা সেন্টার স্থাপনে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠান দুটির অনুকূলে ২১ ও ৪৫ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রেডডট ২.৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

হাই-টেক পার্কে এসব প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে বেসরকারি হাই-টেক পার্কের স্বীকৃতি পেয়েছে কুমিল্লার হালিমা টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে হালিমা গ্রুপের বর্তমানে আটটি কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো হল হালিমা টেলিকম, হালিমা ইলেকট্রনিক্স, হালিমা ট্রেডার্স, হালিমা ওয়ার্ল্ড, এইচটিই, নিউক্লেই গ্লোবাল, টিপ এক্সেসরিজ এবং অতি সম্প্রতি হালিমা মোবাইল।

হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম হাসান টগর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমাদের ছয়তলা ভবনকেই হাইটেক পার্ক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সেখানে ব্যাটারি তৈরি করি, মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি করি।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জমি হস্তান্তর ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। চুক্তিতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং নয়টি কোম্পানির প্রধানেরা স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও হালিমা টেলিকমকে বেসরকারি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ঘোষণার অনুমতিপত্রও আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ হাই-টেক এবং আইটি/আইটিইএস শিল্পের উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দেশব্যাপী হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে, যা বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে।

হাই-টেক পার্কগুলি হাই-টেক শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দেয় এবং জ্ঞান-এবং মূলধন-ভিত্তিক ব্যবসার প্রচার করে। তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার প্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, গ্রীন টেকনোলজি, আইটি হার্ডওয়্যার, আইটি-এনাবলড সার্ভিস এবং গবেষণা ও উন্নয়ন ইত্যাদি বাংলাদেশের হাইটেক শিল্পে বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র।

বর্তমানে, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ আটটি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত, এবং আরও তিনটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর বাইরে, সরকার ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের দুটি কারখানাকে হাই-টেক পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্যামসাংয়ের নরসিংদী এবং মিনিস্টার গ্রুপের গাজীপুর কারখানাগুলোও একই সুবিধা পাচ্ছে। এই কারখানাগুলি ১০ বছরের জন্য কর-অবকাশ উপভোগ করা ছাড়াও, সব ধরণের সরঞ্জাম আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com