হংকং শহরের নাম শুনলে প্রথমেই আমাদের যে দ্বিধায় পড়তে হয় তা হলো এটি কোনো দেশ না এটি একটি চীনের শহর? না! হংকং কোনো আলাদা স্বাধীন দেশ না। এটি একটি গণ চীনের প্রশাসনিক অঞ্চল। যা এক সময় একটি ব্রিটিশ কলোনি ছিল। ১৮৪২ সালে ওপিয়াম যুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে চীনাদের পরাজিত হলে তারা হংকং দখল করে নিয়েছিল। তারপর ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকার চীনের কাছে হংকং ফিরিয়ে দেয়। তবে একদেশে নীতির ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশটি স্বায়ত্ত শাসন এবং সরকার ব্যবস্থাসহ নানা রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করে, যা স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মতোই। এদের মুদ্রার নাম হংকং ডলার। যা বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত বাণিজ্যিক মুদ্রার অষ্টম। এমনকি চীন এবং হংকং এর ভিন্নভিন্ন পতাকাও রয়েছে। তো চলুন জেনে নিই হংকং সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত এবং মজাদার তথ্য
১) হংকং এর জনসংখ্যা আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি। ঘনবসতির দিক দিয়ে হংকং পৃথিবীতে চতুর্থতম। এখানে প্রতি বর্গকিমি ৬৭৭৭ জন বসবাস করে। যেহেতু এটি একটি ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা তাই তাদের উপরে উঠা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এখানে ১৪ তলা বাড়ির নিচে কোন বিল্ডিং নেই। শুধুমাত্র হংকং শহরে আট হাজারের বেশি উঁচু বিল্ডিং রয়েছে। অর্থাৎ হংকং এ নিউইয়র্কের থেকে দ্বিগুণ উঁচু বিল্ডিং রয়েছে। বিশ্বের ১২ তম উঁচু বিল্ডিং ইন্টারন্যাশনাল কমার্স সেন্টার এখানে অবস্থিত। যা ১৫৮৮ ফিট উঁচু।
২) বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত ১০ টি এয়ারপোর্টের মধ্যে একটি হলো হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। আপনি জেনে জেনে অবাক হবেন যে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫৯ মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করে। অপরদিকে বিশ্বের একটি অন্যতম এয়ারলাইন হিসেবে আপনারা হয়তো ক্যাথের নাম শুনে থাকবেন। এটি একটি হংকং এর হোম এয়ারলাইনস্।
৩) আমরা সবাই জানি দামী এবং বিলাস বহুল গাড়ির জগতে রোলস্ রয়েস একটি অনন্য নাম। বিশ্বের অন্যান্য যেকোন শহরের তুলনায় হংকং এ মাথাপিছু রোলস্ রয়েস গাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
৪) গ্রিনিজ ওয়ার্ডের রেকর্ড অনুযায়ী সমুদ্রের উপর বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হচ্ছে হংকং জুহায় অবস্থিত ম্যাকাও ব্রিজ।এই ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার হংকং এর প্রধান শহর ম্যাকাও এবং জুহার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এই সেতু চালু হওয়ায় হংকং এবং ম্যাকাও এর মধ্যে দূরত্ব প্রায় আড়াই ঘণ্টা কমে এসেছে। হংকং এ আরেকটি বড় জিনিস রয়েছে, তা হলো চলন্ত সিড়ি। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা চলন্ত সিড়ি সেন্টার মিড লেভেলস্ স্কেলেটর সেখানে অবস্থিত। ১৯৯৩ সালে তৈরি ২৬০০ ফিট লম্বা এই স্কেলেটর টি সেন্টার এবং মিড লেভেলস্ এই দুই জায়গায় যোগাযোগ সাসাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজতর করেছে। এটি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গা।
৫) সুস্থ পরিবেশ এবং মানুষের সুস্থ বিকাশের জন্য খোলা জায়গা এবং বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই হংকং ঘনবসতি পূর্ণ জায়গা হলেও পার্ক এবং বিনোদনের জন্য সেখানে ৪০% জায়গা বরাদ্দ থাকে। বাকি এলাকায় রয়েছে বনাঞ্চল এবং উঁচু উঁচু বিল্ডিং।
৬) পৃথিবীর অনান্য দেশের তুলনায় হংকং এর মানুষ চা খেতে বেশি পছন্দ করে। সেখানে প্রতি বছর প্রায় ৫৮ লক্ষ কিলোগ্রাম চা শেষ হয়। যা অনান্য দেদেশতুলনায় অনেক বেশি।সেসেখানে প্রতি একজন মানুষ এক বছরে প্রায় ১.৪ কেজি চা করে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী চা আয়রন বুদ্ধা চা আপনি সেখানে পেয়ে যাবেন। যা প্রতিকেজির দাম আট হাজার টাকা।
৭) আরেকটি মজার ব্যাপার হলো সেখানে আপনি কিছু কিছু এপার্টমেন্টে ফোর্থ ফ্লোর খুজে পাবেন না। কারণ চিনা ভাষায় ফোরের উচ্চারণ অনেকটা ইংরেজী শব্দ ডেথ এর মতো। যার অর্থ মৃত্যু। তাই সেখানকার অনেক মানুষ ফোর সংখ্যাটিকে আনলাকি সংখ্যা মনে করে। অপরদিকে চিনা ভাষায় আটের উচ্চারণ এবং ইংরেজি শব্দ ওয়েল্থ এর উচ্চারণ একই রকম, তাই তারা ইংরেজী আট সংখ্যাটিকে লাকি সংখ্যা হিসেবে মনে করে।
৮) হংকং এর পিটট্রাম হচ্ছে এশিয়ার চালু হওয়া প্রথম ট্রাম। যা ১৮৮৮ সালে চালু হয়েছিল। এখনো হংকং এ বিপুল পরিমানে ট্রাম চলাচল করে।
৯) বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো রেস্টুরেন্ট ক্যাফের জায়গা হলো হংকং। সেখানে প্রতি ৬০০ জন মানুষের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
১০) হংকং এর মানুষ টয়লেট এর ফ্লাসে সমুদ্রের জল ব্যবহার করে।