শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

স্বর্ণ পরিশোধনাগার কারখানা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত-উভয় স্বর্ণ আমদানির যুগেই প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এসব স্বর্ণ আমদানির পর তা কারখানায় পরিশোধনের মাধ্যমে স্বর্ণবার ও কয়েন তৈরি করা হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি যা রপ্তানি করা হবে বিদেশে।

স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এ জন্য এক বা একাধিক স্বর্ণখনি ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক মানের এক বা একাধিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক থাকতে হবে, যা আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির জন্য আবেদনকারী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন দাখিল করতে হবে। পরিশোধনাগারে কাঁচামালের অব্যাহত ও নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করতে হবে।

কারখানা করতে আরও যা লাগবে

পরিশোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে এমন মেশিনারিজের তালিকা, কোন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হবে সেসব বিষয়ে তথ্য, স্বর্ণ পরিশোধনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। থাকতে হবে পরিকল্পিত বর্জ্য (তরল, কঠিন ও বায়বীয়) ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইটিপিসহ উপযুক্ত বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন সম্পর্কিত পরিকল্পনার তথ্যও।

পরিশোধনাগার স্থাপনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে কোম্পানিকে। এ পরিকল্পনার বিষয়টি আবেদনের সঙ্গে থাকতে হবে। এ ছাড়া নিজস্ব ল্যাবরেটরি স্থাপনে মেশিনারিজের তালিকা ও সম্পাদিত কাজের বিবরণ (হলমার্ক প্রদান, বিশুদ্ধতা পরীক্ষা), সংশ্লিষ্ট আইএসও সনদ গ্রহণের পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মার্কেট রেগুলেটরি কমিটির সদস্য পদ গ্রহণের পরিকল্পনা, নিজস্ব ওয়্যারহাউস ও ভল্ট স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়গুলো আবেদনের সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে।

এ ছাড়া এ নীতিমালায় পরিশোধনাগার স্থাপনে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত ও স্বীকৃত অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পরিশোধনাগার পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশগত, সামাজিক, ব্যবস্থাপনাজনিত ও গুণগত কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করতে হবে।

স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (রপ্তানি) আহ্বায়ক করে গঠিত ১১ সদস্যের কমিটি তা দেখভাল করবে। আবেদন প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে এ কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পেশ করবে। বাছাই কমিটির ইতিবাচক সুপারিশের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রাথমিক অনুমতি দেবে।

রপ্তানি বাজারে প্রবেশের সময় দেশীয় পরিশোধনাগারে উৎপাদিত স্বর্ণবারে আইকনিক সিম্বল ব্যবহার করতে হবে, যা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। স্বর্ণ পরিশোধনাগারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মার্কেট রেগুলেটরি অ্যাসোসিয়েশন ও স্বর্ণ খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দিয়ে তৃতীয় পক্ষ নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কাঁচামালের উৎস সম্পর্কে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের অব্যাহত ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ১০০ টন স্বর্ণের মজুত আছে, এমন একাধিক স্বর্ণখনি এবং বার্ষিক ১০ টন আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ সরবরাহের সক্ষমতা আছে, এমন আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত নয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সম্প্রদায়ের বিধিনিষেধ নেই, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে আনতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খুব আনন্দের বিষয় যে বাংলাদেশে স্বর্ণ পরিশোধনাগার কারখানা হবে। বিষয়টি যেহেতু এ দেশের জন্য নতুন, তাই বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনতে হবে। একটি কারখানা হতে পারলে আরও কারখানা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এ বিষয়ে ঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ করার আগে এর প্রস্তাবনা অংশে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বে মোট স্বর্ণালংকার রপ্তানি হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি ডলারের।

স্বর্ণালংকার উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় দেশ এবং ভারত ও চীন অন্যতম। প্রধান আমদানিকারক দেশ সুইজারল্যান্ড, চীন, যুক্তরাজ্য, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, জার্মানি ও সিঙ্গাপুর।

আরও বলা হয়, হাতে নির্মিত স্বর্ণালংকারের ৮০ শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তবে নানা কারণে বাংলাদেশ এ খাতে রপ্তানিতে ভূমিকা রাখতে পারেনি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাত থেকে বাংলাদেশ ৬৭২ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ৪০ টন সোনা লাগে। যার বড় অংশ বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে, কিছুটা আমদানি করে ও পুরোনো সোনা গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোনা ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত সোনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন না।

বিশ্বসেরা খনি ও মজুত

সোনা উত্তোলন করার জন্য সোনার খনির বৈশ্বিক মান হলো খনিতে মজুত সোনার পরিমাণ কমপক্ষে এক শ টন হতে হবে। এমন খনি অনেক আছে। তবে কিরগিজস্তানের কুমটোর সোনার খনিকে বলা হয় সবচেয়ে বড় খনি। এক কোটি আউন্স অর্থাৎ ৩ লাখ ১১ হাজার কেজির বেশি সোনা তোলা হয় এ থেকে। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করা এ খনি তিয়ানসান পর্বতমালায় অবস্থিত।

পেরুর ইয়ানোকচা সোনার খনির পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা সোনার খনি। এদিকে ইরানে ছোট-বড় ১০টি খনি আছে যেগুলোতে মূল্যবান সোনার মতো অনেক ধাতু রয়েছে। গ্রাসবার্গ খনিও সোনার জন্য বিখ্যাত একটি খনি। এটি পাপুয়া নিউগিনিতে অবস্থিত। এখানে অন্তত ২০ হাজার কর্মী রয়েছেন।

এ ছাড়া উজবেকিস্তানের মুরুনতাউ, যুক্তরাষ্ট্রের কার্লিন, রাশিয়ার অলিম্পিয়াডা, ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের পুয়েব্লো ভাইজো বিশ্বসেরা সোনার খনি।

এদিকে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোনার ভান্ডারে মজুত রয়েছে মোট ৮ হাজার ১৩৩ টন। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের রয়েছে ১ হাজার ৪০ টন সোনা। বৃহত্তর রাশিয়ায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৫২ টন সোনার ভান্ডার। এশিয়ায় চীনের সোনা রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০৮ টন। ফ্রান্সের সোনার মজুত ২ হাজার ৪৩৫ টন। ইতালির আরও বেশি, ২ হাজার ৪৫১ টন সোনা। অন্যদিকে জার্মানির হাতে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩৮১ টন সোনা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com