বুদ্ধিমত্তা খুবই সূক্ষ্ম বিষয়। কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন অতীত গবেষণায় পাওয়া গেছে যে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাবাদের তুলনায় মায়েদের কাছ থেকেই বেশি আসে। যদিও এটা কোনো সার্বিক সিদ্ধান্তে আসার মতো গবেষণা নয় এবং বুদ্ধিমত্তার উৎপত্তি নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা এখনো কোনো ঐকমত্যে আজও আসতে পারেননি।
তবে আসুন, কিছু বিজ্ঞানী দম্পতি সম্পর্কে জেনে নিই। আমার প্রকৌশলবিজ্ঞানের গবেষণায় বিচরণের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু অতীত উদাহরণ তুলে ধরব। উপসংহারে পৌঁছানোর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিনির্ভর।
যেমন কুরি ফ্যামিলি। বাবা পিয়েরে কুরি, মা মেরি কুরি দুজনেই পদার্থ ও রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আর তাঁদের সন্তান আইরিন কুরিও পরে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। মায়ের মেধার গুণে নাকি বাবার গুণে আইরিন কুরিও মেধাবী বিজ্ঞানী হয়েছিলেন তা হয়তো বোঝা গেল না, তাই না? তাহলে আসুন আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করি।
আচ্ছা এখন এই উদাহরণে আসি, যদি বাবা শুধু মেধাবী হন, সে ক্ষেত্রে সন্তান কি হতে পারে? আইনস্টাইনের পরবর্তী প্রজন্মের পদার্থবিজ্ঞানের আরেক মহারথী ছিলেন রিচার্ড ফাইনম্যান। ফাইনম্যান ও তাঁর স্ত্রী গোয়েনেথ হাওয়ার্থের সন্তান কার্ল ফাইনম্যান। কার্ল তাঁর বাবার অতিমানবীয় মেধার এক ছটাকও পাননি। দর্শন ও ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক করেছিলেন কার্ল। এরপর সুপরিচিত বিজ্ঞানী বাবার নাম ও প্রভাব ব্যবহার কোনো রকম সম্মান বাঁচাতে মাস্টার্স করেছিলেন তড়িৎ প্রকৌশলে। প্রথমে ভাষাবিজ্ঞান ও দর্শন এবং তড়িৎ প্রকৌশল। এরপর আর কোনো পড়াশোনা করেননি।
আইনস্টাইনের পরে সবচেয়ে মেধাবী পদার্থবিদ বলা হয়ে থাকে রিচার্ড ফাইনম্যানকে। কার্ল তাঁর বাবা রিচার্ড ফাইনম্যানের ১ শতাংশ মেধা উত্তরাধিকারী সূত্রে পাননি। এটা কি ফাইনম্যানের স্ত্রী গোয়েনেথ নিতান্তই সাধারণ নারী ছিলেন শুধুই সে কারণে? সে জন্যই কি হয়তো কার্ল তার মায়ের দিক থেকে বংশীয়ভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক মেধা পাননি। যদিও বাবা রিচার্ড ফাইনম্যান অতিমানবীয় মেধাবী ছিলেন? রিচার্ড ফাইনম্যান যদি আরেকজন মেধাবী নারীকে বিয়ে করতেন, তাহলে কি তাঁদের সন্তান মেধাবী হতো? প্রশ্নগুলোর উত্তর কারোরই জানা নেই। আমারও জানা নেই। তবে ব্যাপারগুলো বেশ ভাবনার উদ্রেক করে।
ওপরের বিচ্ছিন্ন উদাহরণগুলোর হয়তো আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। হয়তোবা আছে। কেউই জানে না। আমিও না। এত সামান্যসংখ্যক তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে কোনো সার্বিক উপসংহারে পৌঁছানো যায় না। তবে উদাহরণগুলো থেকে হয়তো কিছুটা অনুমান করা যায় যে আপনার স্ত্রী ও মেয়েকে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও উচ্চতর পড়াশোনায় সুযোগ দিলে তারা আপনাকে মেধাবী প্রজন্ম উপহার দেবে।
লেখক: মো. নাজমুল হাসান তপু, পিএইচডি গবেষক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা