শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন

স্ট্যাচু অব লিবার্টি

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩

স্ট্যাচু অব লিবার্টি (Statue of Liberty) সংক্ষেপে পরিচিতি

অবস্থান (Location) লিবার্টি দ্বীপ, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নিকটবর্তী শহর (Nearest Town) জার্সি সিটি, নিউ জার্সি
সর্বোচ্চ উচ্চতা (Maximum Height) ৯২.৯৯ মিটার
আয়তন (Area / Size) ১২ একর(৪৯,০০০ মি²)
উদ্বোধন (Opening) ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর
নির্মাণ শুরু (Construction started) সেপ্টেম্বর ১৮৭৫
শিল্পী (Artist) ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থল্ডি
স্থপতি (Architects) ফ্রেডেরিক অগাস্ট বার্থোল্ডি, রিচার্ড মরিস হান্ট
নির্মাণ বস্তু (Construction Material) তামা, স্বর্ণ, ইস্পাত, লোহা

স্ট্যাচু অব লিবার্টির ইতিহাস – History of the Statue of Liberty

রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে, সবুজ রঙের ঢিলে ঢালা গাউন পরা এক নারীর অবয়ব স্ট্যাচু অব লিবাটি। ভাষ্কর্যটির বাইরের অবয়ব নকশা করেন ফরাসি স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি এবং এর ভেতরের নকশা করেন, আরেক বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি গুস্তাভ আইফেল, তিনি আইফেল টাওয়ারের নকশাকারী হিসেবে বিখ্যাত। অতীতে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ১০০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে, ১৮৮৬ সালে ফ্রান্স ভাষ্কর্যটি আমেরিকাকে উপহার দেয়। আমেরিকার নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের মুখে লিবার্টি দ্বীপে স্টাচু অব লিবার্টি কে স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাষ্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাত। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লক্ষ লোক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে আসে।

স্ট্যাচু অব লিবার্টির অবস্থান – Location of the Statue of Liberty

শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবাটি কে নিউইয়কের হাডসন নদীতে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাষ্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিল মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাষ্কর্য নির্মানের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়। সুয়েজ খালের পাড়ে মূর্তিটি স্থাপনের আগে এর নামকরণ করা হয়েছিল, ‘ইজিপ্ট ব্রিঙিং লাইট টু এশিয়া’।

স্ট্যাচু অব লিবার্টির আকার ও আয়তন – Size and volume of the Statue of Liberty

১৯২৪ সাল পর্যন্ত ভাষ্কর্যটির নাম ছিল, লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্যা ওয়াল্ড, পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ভাষ্কর্যটির ডান হাতে রয়েছে প্রজ্জলিত মশাল এবং বাম হাতে রয়েছে আইনের বই। স্ট্যাচু অব লিবাটির মুকুটে রয়েছে সাতটি কাটা, যা সাত মহাদেশ ও সাত সমুদ্র কে নিদের্শ করে। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূল ভাষ্কর্যটির উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি। তবে মাটি থেকে মূল বেদি সহ এর উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি। মূর্তিটির নাকের র্দৈঘ্য ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং এর এক কান থেকে আরেক কানের দূরত্ব ১০ ফুট। স্ট্যাচু অব লিবার্টিও পায়ে যে জুতা পরানো হয়েছে, তা বাজারে বিক্রি করলে জুতাটির মাপ হত ৮৭৯। তামার তৈরী সমগ্র মূর্তিটির ওজন প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি। এর পায়ের কাছে পরে থাকা শেকল আমেরিকার মুক্তির প্রতীক। স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভেতরে ৩৫৪টি সিড়ির ধাপ অতিক্রম করে মূর্তির মাথায় ওঠা যায়। মূর্তির মুকটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা, যা অনেকটাই ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে কাজ করে।

স্ট্যাচু অব লিবার্টির উদ্বোধন – Inauguration of the Statue of Liberty

স্ট্যাচু আব লিবার্টি সম্পূর্ন মূর্তিটিই তৈরী করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহাড় ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে, ৩০০ টি খন্ডে তৈরী হয়েছে মূর্তিটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ভাষ্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রথম থেকেই দেখতে সবুজ রঙের ছিল না, এমনকি একে সবুজ রংও করা হয়নি। মূর্তিটি তামার তৈরী হওয়ায়, শুরুতে এর রংও ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে, এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয়বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ায় মূর্তিটি সবুজ রং ধারন করছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি সম্পর্কে আরোও কিছু তথ্য – Some more information about the Statue of Liberty

শত বছর ধরে আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। সেখানকার ন্যাশনাল পার্কস সার্ভিস-এর ইন্টারপ্রেটিভ রেঞ্জার লি ফাহলে জানিয়েছে এই ভাস্কর্য সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য যার সম্পর্কে হয়তো আপনারা জানেন না। এগুলো জেনে নিন।

  1. এই মশালের প্লাটফর্মে দর্শনার্থীদের ওঠা নিষেধ করা হয় ১৯১৬ সাল থেকে।
  2. পরিচর্যার জন্য প্রকৌশলীরা মূর্তিটির ডানপায়ের নিচ দিয়ে প্রবেশ করেন। ওটাই এর প্রবেশদ্বার।
  3. এ মূর্তি যে জুতা পরে রয়েছে তার মাপ ৮৭৯।
  4. আমেরিকাকে ১৮৮৬ সালে এই মূর্তিটি উপহার হিসাবে পাঠায় ফ্রান্স।
  5. এর উচ্চতা ৩০৫ ফুট। এটি আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু মূর্তি।
  6. ফ্রেঞ্চ ভাস্কর অগাস্টাস বার্থোলডি স্ট্যাচু অব লিবার্টির ডিজাইন করেন।
  7. এটি বানাতে ফ্রান্সের খরচ হয় আড়াই লাখ ডলার।
  8. মূর্তিটিকে যে স্থাপনার ওপর বসাতে হয়েছে তা বানাতেও আমেরিকা খরচ করে ২ লাখ ৭৫ হাজার ডলার।
  9. এই স্থাপনার অনেকটা অংশ বানানো হয় সাধারণ জনগণের পয়সায়।
  10. এই মূর্তি সব সময় কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টি নামে পরিচিত ছিল না। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত একে লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড নামে ডাকা হতো।
  11. এই মূর্তি বসানোর পর আশপাশের অন্যান্য শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
  12. তামা ধাতু দিয়ে এর বাইরের অংশ তৈরি করা হয়। এর ঘনত্ব মাত্র ২.৫ মিলিমিটার।
  13. এ মূর্তির রং সব সময় এমন ছিল না। আসলে এটি অনেকটা মরচে পড়া লোহার মতোই দেখা যেত।
  14. এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো ডিজাইন করেন গুস্তাভ আইফেল।
  15. প্রচণ্ড বাতাসে স্ট্যাচুটি কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত দুলতে থাকে।
  16. এর ডানহাতে অর্থাৎ যে হাতটি মশাল ধরে রয়েছে তার ভেতরে ৪২ ফুট লম্বা মই রয়েছে। পরিচর্যার জন্যে এই মই বেয়ে উঠতে হয়।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com