সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন

সৌদির সিনেমায় বাঁক বদলের হাওয়া

  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

অতিমাত্রায় তেল ও খনিজ নির্ভরতা থেকে বের হয়ে পর্যটনসহ অন্যান্য খাতে দেশকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় সৌদি আরব। দেশকে অতি রক্ষণশীলতার রাহুডোর থেকে কিছুটা মুক্ত করতে আধুনিক চিন্তাধারা নিয়ে এগিয়ে আসেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরই মধ্যে দেশটি ‘ভিশন ২০৩০’সহ নানা উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিকল্পনা করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে দেশটির বিনোদন জগৎ থেকে তুলে নেওয়া হয় দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা। খুলে দেওয়া হয় সিনেমা হল। সেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সিনেমা উপভোগ করতে পারছেন, আরব বিশ্বের পবিত্র ও প্রভাবশালী দেশটিতে যা ছিল অকল্পনীয়।

শুধু সিনেমা হল বা বিনোদন অঙ্গন বর্ধিতকরণই নয়, সৌদি প্রশাসন দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছু বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে তারা। ‘দ্য সেভেন ডগস’, ‘ডেজার্ট ওয়ারিয়র’, ‘রাইজ অব দ্য উইচেস’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমার ঘোষণায় বেশ সাড়া পড়েছে আরব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিনোদন ভুবনের একের পর এক চমকের মধ্যে সর্বশেষটি হলো, রিয়াদে শুরু হয়েছে আরব ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমার শুটিং। হলিউডের ব্লকব্লাস্টার সিনেমা ‘ব্যাড বয়েজ ফর লাইফ’-এর নির্মাতা আদিল এল আরবি ও বিলাল ফালাহ এবার যৌথভাবে পরিচালনা করছেন ‘দ্য সেভেন ডগস’ সিনেমায়। রাজধানী রিয়াদের বিভিন্ন জায়গা ও মরুভূমির আকর্ষণীয় লোকেশনে শুটিং চলছে পুরোদমে। অ্যাকশন-ড্রামার এই ব্যয়বহুল সিনেমার প্রধান চরিত্রে থাকছেন মিশরের দুই সুপারস্টার করিম আবদেল আজিজ ও আহমেদ এজ। সিনেমাটির মূল গল্প লিখেছেন তুরস্কের বিখ্যাত লিখিয়ে আল-শেখ, যিনি সৌদি আরবের জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান। আর অ্যাকশন থ্রিলারধর্মী ‘দ্য সেভেন ডগস’-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন মোহাম্মদ এল-দাব্বাহ।

সামাজিক মাধ্যম ও নেট দুনিয়ায় সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বিশাল বাজেটের এই সিনেমার মূল উপজীব্য বা কাহিনি কী? সংশ্লিষ্টদের কেউই তা প্রকাশ করছেন না। তবে অভিনেতা, দক্ষ নির্মাতা এবং বিপুল বাজেটের কারণে এরই মধ্যে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সিনেমাটি উচ্ছ্বসিত আল-শেখ সামাজিক মাধ্যমে জানান, ‘আজ আমার ক্যারিয়ারের এবং আমার দেশের সিনেমার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। দ্য সেভেন ডগসের শুটিং শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরবের ইতিহাসে যোগ হলো এক নতুন অধ্যায়।’ ‘দ্য সেভেন ডগস’ সিনেমাটির বাজেট ধরা হয়েছে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি, যা আরব সিনেমার ক্ষেত্রে রেকর্ড। স্ক্রিন নাউয়ের প্রতিবেদনে সিনেমাটিকে আরবি ভাষায় নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র বলা হচ্ছে। আর এই সিনেমার মাধ্যমে যে সৌদি আরবের বিনোদন ভুবন এক বিশাল বাঁক বদলের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা আর সৌদির বিখ্যাত মিডিয়া কোম্পানি মিডলইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার যৌথভাবে সিনেমাটি প্রযোজনা করে।

সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ১০০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রযোজনা করবে। এজন্য সৌদি সরকার চলচ্চিত্র শিল্পে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সৌদির মতো ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল দেশে সিনেমা নির্মাণ ও প্রচারে সামাজিক বাধা আসবে। তা ছাড়া অভিজ্ঞতা না থাকায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের বিদেশি সহায়তা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর আরবি ভাষায় নির্মিত সিনেমাগুলো বহির্বিশ্বে কেমন প্রভাব রাখবে বা আদৌ সেভাবে পশ্চিমি দর্শক টানতে পারবে কিনা, সে সন্দেহ থেকেই যাবে। দেশটির কঠোর সেন্সরশিপ নীতিমালা এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। হলিউড বা অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোর নির্মিত সিনেমায় যেভাবে খোলামেলা দৃশ্য দেখা যায়, সেভাবে সৌদি আরবে সম্ভব নয়। সিনেপ্রেমীরা এসব রগরগে দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত। তারপরও সব প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে ধীরে ধীরে সৌদি আরব এখন বিশ্ব চলচ্চিত্রে একটি দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com