চারপাশে পাহাড় আর সবুজ গাছপালার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো একটি গ্রাম। পাহাড়ের কোলঘেঁষে তৈরি হওয়া বাড়িগুলো পাথর, ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি। সেসব বাড়ির দেয়ালে স্থানীয় নারীদের আঁকা রঙিন নকশা। প্রায় ২০০ বছর ধরে সেখানকার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গেছে এসব শিল্পকর্ম।
সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের এই গ্রামের নাম রিজাল আলমা। এটি ২০১০ সালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় জায়গা করে নেয়।
সৌদি আরবের অন্যান্য এলাকার চেয়ে আসির অঞ্চলের চেহারা অনেকটাই ভিন্ন। এখানে মরুভূমির সাদামাটা দৃশ্যের বদলে সবকিছু রঙিন। পুরুষের মাথায় পাগড়ি বা টুপির বদলে ফুলের মালা। এই সবুজ আর রঙিন আসির অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রাম রিজাল আলমা। একসময় এই গ্রাম ছিল পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে পৌঁছাতে ব্যবহার করা হতো দড়ির সেতু। এই কঠিন পরিবেশ এবং সীমিত সম্পদের কারণে সেখানে বসবাস করার মানুষের সংখ্যাও ছিল সীমিত। সেই সব মানুষ নিজেরা গড়ে তুলেছিল এক অভিনব সংস্কৃতি, যা আরবের মূল সংস্কৃতি থেকে অনেকটা আলাদা।
রিজাল আলমা গ্রামটি একসময় ইয়েমেন এবং হাজাজের মধ্যে বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। বর্তমানে এটি সৌদি আরবের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। গ্রামটিতে দেখা মিলবে তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের বাজার।
এ গ্রামে স্থানীয় নারীদের হাতে আঁকা প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চিত্রকর্মের নাম ‘আল-কাত আল-আসিরি’। এগুলো আঁকা হয় বাড়ির দেয়ালসিঁড়ি ও অতিথিকক্ষে। জ্যামিতিক ফর্মে এই চিত্রকর্মগুলো আঁকা। এসব চিত্র আঁকার জন্য ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক রং।
আল-কাত আল-আসিরি চিত্রের জগতে বরেণ্য শিল্পী আফাফ কাহতানি। তিনি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই চিত্রকর্মগুলো এঁকে আমি শান্তি পাই। এটি আমাকে বাইরের দুনিয়ার অস্থিরতা থেকে দূরে রাখে।’
রিজাল আলমার ঐতিহ্যবাহী শিল্প শুধু ঘরের দেয়ালেই সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন বাজারে, এমনকি আন্তর্জাতিক ফ্যাশনেও দেখা যাচ্ছে আল-কাত ডিজাইনে তৈরি পোশাক, জুতা এবং নানান সামগ্রী। এই সূত্রে গ্রামটি এখন আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে।
সূত্র: বিবিসি