সৌদি আরবে কফিল বা নিয়োগকর্তার নির্যাতন অহরহই ঘটছে। চুক্তিমতো বেতন না দেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই। এসব নিয়ে খুব বেশি মাতামাতির সুযোগ ছিল না। কারণ প্রবাসী শ্রমিকেরা চাইলে নিয়োগ কর্তা পরিবর্তন করতে পারেন না। ফলে মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে সব। এবার সেই ব্যবস্থা পরিবর্তন এসেছে। শ্রমিকেরা চাইলে নিজে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করতে পারবেন। এটি প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিরাট সুখবর। এতে নিয়োগকর্তার নির্যাতন থেকে বাঁচা ও নিজের আয় বাড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে প্রবাসী কর্মীদের সামনে।
নিয়োগ দেওয়াই হলো কাফালা পদ্ধতি। এর আগে কোনো কর্মী নির্যাতিত বা বঞ্চিত হলে মামলার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারতেন। এখন আর সেই জটিলতা থাকছে না। নতুন চাকরি নিয়ে তিনি পুরোনো নিয়োগকর্তাকে নোটিশ দিতে পারবেন। সাধারণত ১৫ দিন বা এক মাসের নোটিশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে দেশটিতে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী সৌদি গেছেন। এখন ২০ লাখের বেশি কর্মী দেশটিতে কাজ করেন। এর মধ্যে তিন লাখের মতো নারী গৃহকর্মী রয়েছেন। সৌদিতে বাংলাদেশের কর্মীদের অধিকাংশই কাজ করেন অবকাঠামো খাতে ও বাসায়। অদক্ষ কর্মীরা ভালো করে না জেনেই দালালের প্রলোভনে পড়ে দেশটিতে যান। এসব খাতের শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করা, মজুরি কম দেওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করার মতো গুরুতর অভিযোগ মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে। আইন সংস্কারের ফলে এসব ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিবাসন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় সৌদিতে চালু থাকা কাফালাব্যবস্থা সারা বিশ্বে ‘দাসপ্রথা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। দীর্ঘদিন ধরেই শ্রম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটি বাতিল করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে চাপ দিয়ে আসছিল। কাতার কাফালাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে দুই বছর আগে। নতুন নিয়োগকর্তা পছন্দ করার সুযোগ নারী গৃহকর্মীদের জন্য একটি বড় সুখবর।
বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য সৌদি আরবে সাত দশক ধরে চলমান রয়েছে কাফালাব্যবস্থা। এখন একজন কর্মী এক বছর চাকরি করার পর তাঁর নিয়োগকর্তা বদল করতে পারবেন। চুক্তি অনুযায়ী চাকরি ছাড়ার আগে নোটিশ দিতে হবে। তবে বাসার গাড়িচালক, বাসার কেয়ারটেকার ও ছেলে গৃহকর্মীরা এ সুযোগ পাবেন না।
প্রবাসীরা বলছেন, নিয়োগকর্তার সঙ্গে কর্মীকে একটি চুক্তিনামায় সই করতে হয়। অধিকাংশ কর্মী ভালো করে না পড়েই এসব চুক্তিতে সই করেন। এতে চুক্তি ভঙ্গের দায়ে কারাগারেও যেতে হয় অনেককে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে নিয়োগকর্তা কর্মীকে নিখোঁজ দেখাতে পারেন। এতে কর্মীর নামে ‘ওয়ান্টেড’ নোটিশ জারি করে সৌদি সরকার। এটিকে ‘হুরুব’ বলে। এমন কর্মীকে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে সে কখনোই আর সৌদিতে যেতে পারেন না।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যুগান্তকারী ঘটনা। প্রবাসী কর্মীদের অনেক দিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়া এবং বেতনবঞ্চিত কর্মীরা তাঁদের নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করে নতুন কাউকে বেছে নিতে পারবেন। তবে কর্মীদের সুফল পেতে হলে বুঝেশুনে চুক্তি করতে হবে। আর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় নারীরা। তাই নারী কর্মীদের জন্য এটি একটি বিরাট সুযোগ তৈরি করেছে।