১। কথিত আছে কয়েকটি “ট্রিবুনের” কিছু বুদ্ধীজিবী মিলে, কিছু অংশ জমি জার্মান সরকার থেকে, কিছু অংশ ফ্রান্স সরকার থেকে এবং কিছু অংশ ইটালী সরকার থেকে ভাড়া নেয় এবং সেই সব এলাকার “ট্রিবুন” গুলি একত্র করে “প্যাক্ট ফেডারেল” গঠন করে সুইজারল্যান্ড নামে একটা দেশ প্রতিষ্ঠা করেন ১২৯১ সালের দিকে। এরপর ১৮৪৮ সালে একটি “কনষ্টিটিউশন” তৈরী করে সুইজারল্যান্ড একটা ফেডারেল রাষ্ট্র হিসাবে আন্তর্জাতীক পরিচিতি লাভ করে!
২। ৪১ হাজার ২৮৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৮৫ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৩২ তম দেশ।
৩। সুইজারল্যান্ডের সরকারী ভাষা ৪টি। এগুলো হলোঃ জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান এবং রোমান্স।
৪। সুইজারল্যান্ডের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এছাড়া বাকি ৫ শতাংশ মানুষ ইহুদি ও মুসলিম। তবে এখানে ২৩ শতাংশ মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয়।
৫। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী হচ্ছে বার্ন। এটি মূলত দেশটির সরকারি এবং প্রশাসনিক শহর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দফতর এখানে অবস্থিত, যাদের মধ্যে বিশ্ব পোস্টাল ইউনিয়নের নাম উল্লেখযোগ্য।
আর সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম শহর হচ্ছে জুরিখ। এটি জুরিখ হ্রদের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে সুইজারল্যান্ডের উত্তর-কেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে ৫০টি যাদুঘর ও ১০০টি আর্ট গ্যালারি আছে।
৬। সুইজারল্যান্ডে ১৫০০ এরও অধিক লেক রয়েছে। এখানে প্রতি ১০ মাইল এ একটি লেক দেখতে পাওয়া যায়। এই অধিক পরিমান পানি মজুত থাকার কারনে সুইজারল্যান্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার অর্থাৎ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে।
৭। এই দেশে শিক্ষকতা সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া পেশার মধ্যে একটি। এই দেশে শিক্ষকরা প্রতি বছরে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন এবং বছরে প্রায় ১২ সপ্তাহ ছুটি কাটান।
৮। ভবিষ্যতে যে আবারো পারমাণবিক যুদ্ধ হবে এটি বিশ্বাস করা দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ড অন্যতম। যদি ভবিষ্যতে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়, তবে মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দেশটি যেসকল বাঙ্কার তৈরি হয়েছে সেখানে দেশটির সব মানুষ এঁটে যাবে।
৯। যুদ্ধাবস্থা বিবেচনা করে এখানকার রাস্তা এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে প্রয়োজনে রাস্তার বিভিন্ন স্তর এদিক ওদিক সরিয়ে প্রতিটি রাস্তাকে বিমানের রানওয়েতে পরিণত করা যাবে।
১০। গোটা সুইজারল্যান্ডকে যদি বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়, তবে তা বাটন দাবানোর মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ এ দেশে প্রবেশের প্রতিটি পথ ও টানেলের মুখে স্টিলের টিউব দেওয়া রয়েছে, যা সুইচ টিপলেই বন্ধ হয়ে যাবে। যুদ্ধের সময় বিবেচনা করে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানকার প্রতিটি ব্রিজে বোমার বক্স রয়েছে। রাস্তার প্রতিটি দিক নির্দেশকারী চিহ্ন সংবলিত সাইনবোর্ড একটি বোতামের চাপেই খুলে পড়ে যাবে।
১১। সুইজারল্যান্ডের বিমানবাহিনীর পাইলটরা ট্রেনিংয়ের সময় কখনো সুপারসনিক গতিতে বিমান চালাতে পারেন না। কারণ, দেশটি এত ছোট যে এই গতিতে বিমান চালালে নিমিষেই তা অন্য দেশের আকাশে চলে যাবে। তবে সম্প্রতি তারা ফ্রান্সের আকাশ ব্যবহারের একটি চুক্তি করেছে।
১২। সুইজারল্যান্ড এর চকলেট এর জন্য বিখ্যাত। এটি চকলেট রপ্তানির দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশেরগুলির মধ্যে একটি। এখানে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার টন চকলেট উৎপাদন করা হয়।
১৩। এ দেশের গাড়িগুলো সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। গাড়ি পরিষ্কার না করলে আপনার বিরুদ্ধে মামলাও হয়ে যেতে পারে।
১৪। এই দেশের বহু প্রতিষ্ঠান এমন কর্মীদের নিয়োগ দেয় যার প্রয়োজন হয় না। তাদের সমাজ স্বল্প বেকারত্বের হারকে আরো কমিয়ে আনতে সচেতন।
১৫। সুইজারল্যান্ডে কোন মানুষ দুই বছর ধরে বেকার থাকলে তাকে ভাতা দেয় সরকার। এটা অনন্য দৃষ্টান্ত হলেও এতে সংযুক্ত রয়েছে চিত্তবিনোদনের জন্য ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদির ভাতা।
১৬। সুইজারল্যান্ড ইউরোপের এমন একটি দেশ যেখানে মহিলাদেরকে সবথেকে পরে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এখানে মহিলাদের সর্বপ্রথম ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিলো ১৯৭১ সালে।
১৭। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন খুবই সুন্দর একটি শহর। এই শহরটিকে আরও সুন্দর বানিয়েছে শহরে অবস্থিত ফাউন্টেনগুলো। যা এই শহরের প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায়। এদের মধ্যে এমনও অনেক ফাউন্টেন আছে যেগুলো ১৬০০ শতাব্দীর। এইজন্য এই শহরটিকে সিটি অফ ফাউন্টেনও বলা হয়ে থাকে।
১৮। সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হচ্ছে সুইস ফ্রাংক।
১৯। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৭০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০। সুইজারল্যান্ডের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৪১।