বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

সুইজারল্যান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্য

  • আপডেট সময় রবিবার, ২ মে, ২০২১

পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ বলা হয় যে দেশটিকে তার নাম হলো সুইজারল্যান্ড। দেশটি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে স্বপ্নের মতো সত্যিই অপূর্ব এক দেশ। শুধু বেড়ানোর জন্যই নয় সব বিচারের দেশ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা লাভ করেছে ইউরোপের ছোট্ট এ দেশটি। অনেকেই মনে করে সুইজারল্যান্ড মানেই হচ্ছে রোলেক্স ঘড়ি, দামি সব লোভনীয় চকলেট আর ব্যাংক এর দেশ।  কিন্তু অনেকের মত আপনিও যদি এমন কিছু মনে করেন তাহলে ভুল হবে। কারণ এসবের বাইরেও সুইজারল্যান্ডে মধ্যে অনেক কিছুই আছে যা অনেকেরই অজানা।

সুইজারল্যান্ড মধ্য ইউরোপে অবস্থিত হলেও দেশটি কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়। দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক নাম সুইস কনফেডারেশন। অনন্য সুন্দর প্রকৃতি ও সর্বোন্নত শহুরে জীবন থাকা সত্বেও সুইটজারল্যান্ডের বহু মানুষ মাদকযুক্ত। সুইটজারল্যান্ডের প্রশাসনিক রাজধানী বার্ন হলেও সবচেয়ে পরিচিত শহরগুলো হল জুরিচ এবং জেনেভা। সুইজারল্যান্ড এর প্রশাসনিক বিভাগ গুলো কে বলা হয় কেন্টন। এই দেশে মোট 26 টি কেন্টন আছে। এগুলি সবগুলোই অতীতে আলাদাভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। 26 টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে সুইজারল্যান্ড গড়ে উঠলেও দেশটি আয়তনে খুবই ছোট। তবে ছোট হলেও এই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই সুস্থির। যদিও বেশিরভাগ দেশে রাষ্ট্রপতি চার কিংবা পাঁচ  বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করে থাকেন জানলে অবাক হবেন যে প্রতিবছরই জানুয়ারি মাসের 1 তারিখে দেশটির রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা পালাক্রমে এক বছর পরে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন। এখানকার নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় সকাল কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। তাই দেশটির যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে চলে।

সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা চাইলে আইনেরও পরিবর্তন করতে পারেন। যদি তারা সংশ্লিষ্ট আইনের বিরুদ্ধে 100 দিনের মধ্যে 50 হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারেন তবে একটি জাতীয় ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং ভোটাররা আইনটি গ্রহণ করবেন নাকি প্রত্যাখ্যান করবেন তা সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশ্বের সর্বোচ্চ জীবনযাত্রারমানের বিচারে  সুইজারল্যান্ড বরাবরই শীর্ষ তিনের মধ্যে থাকে। দেশটি পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্র গুলির মধ্যে অন্যতম। সুইজারল্যান্ডের এক সুইস ফ্রাঙ্ক ভারতের প্রায় 81 টাকার সমান। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে সব দেশে যদি অর্থনৈতিক মন্দায় মুদ্রার মান একেবারেই কমেও যায় সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার মান কখনোই কমে না। এদেশে ব্যাংক গুলি কালো টাকা নিরাপদে রাখার জন্য বিখ্যাত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের অবৈধ সম্পদ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অনায়াসে জমা রাখতে পারে।

বিশ্ব বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সুইজারল্যান্ড অত্যন্ত সহজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে রয়েছে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এর সদর দপ্তর।

সুইজারল্যান্ডের অপরূপ সুন্দর গ্রাম গুলিতে বেশি মানুষ থাকে না। এই দেশে প্রায় 85 শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। আর এই দেশের একাধিক শহর পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। পৃথিবীর শীর্ষ দশটি বসবাস যোগ্য শহরের তালিকায় সুইজারল্যান্ডের ই রয়েছে তিনটি শহর।

সুইজারল্যান্ডের মানুষের গড় মাসিক বেতন প্রায় 5 থেকে 7 লক্ষ টাকা। সেই সাথে সেখানে বেকারত্বের হার খুবই কম। উন্নত জীবন আর অধিক বেতনের আশায় বহু বিদেশি নাগরিক এই দেশে পাড়ি জমায়। সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দাদের চার ভাগের এক ভাগে হলো বহিরাগত।

এদেশের সুযোগ-সুবিধা এবং জীবনযাত্রার মানের দিকে দেখলে ঘর ভাড়া তেমন একটা বেশি না তবুও সুইজারল্যান্ড এর সবচেয়ে জনবহুল শহর জুরিচে তিন রুমের একটি সাধারণ ঘর ভাড়া নিতে হলে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা শতভাগ শিক্ষিত।উচ্চ শিক্ষার দিক থেকে ওরা অনেক উন্নত। জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি হলেও এই দেশের নাগরিকরা নামেমাত্র খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন। শিক্ষকতা সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে একজন শিক্ষক সপ্তাহে 25 ঘন্টা কাজ করে 2500 মার্কিন ডলার আয় করেন। অনেকেই মজা করে সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে বলে থাকেন নোবেল প্রাইজ তৈরীর মেশিন। কারণ সুইস বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকেই এখন অবধি 113 জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

সুইজারল্যান্ডের চকোলেট বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়। এখানে আপনি অনেক কম দাম থেকে অনেক বেশি দামের চকলেট পেয়ে যাবেন অনায়াসে। প্রতিবছর একেকজন সুইস নাগরিক প্রায় 10 কেজি চকোলেট  খেয়ে থাকেন।

আপেক্ষিকতার সূত্র E=MC^2  বিজ্ঞানের ছাত্র ছাড়াও অনেকে জেনে থাকবেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন সুইজারল্যান্ডে বসেই আপেক্ষিকতার এই বিখ্যাত সূত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন।

সুইজারল্যান্ডে প্রায় 1500 লেক রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো দেশটিতে গেলে প্রতি 10 থেকে 12 কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও না কোথাও লেক দেখতে পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: