শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ অপরাহ্ন

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেয়া বন্ধ হচ্ছে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী আনতে যে দুটি ক্ষমতাধর সিন্ডিকেট একচেটিয়াভাবে ব্যবসা করে আসছে তাদের ব্যবসার অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের অভিবাসন খাতটি একটি মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে, যা দেশটির হাজার হাজার অভিবাসীদের দুর্দশার জন্য দায়ী। শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রম এবং শোষণ থেকে বার্ষিক বিলিয়ন বিলিয়ন রিঙ্গিত আয়কারী এই ক্ষমতাধর দুই সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করে বাজারটিকে উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্টেকহোল্ডাররা। মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের কাছে তারা এ অনুরোধ জানান।

এ নিয়োগ ব্যবস্থায় দুর্নীতিতে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। এ অর্থ ভাগাভাগি হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ অফিস পর্যন্ত। উচ্চ-পর্যায়ের সরকারি কর্মীর সহযোগিতায় মালয়েশিয়ার নতুন ঐক্য সরকারের অধীনে থাকা তাদেরই একজন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। গত তিন বছরে দেশটির প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সুরক্ষা চেয়ে আসছেন বলেও সূত্রে উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ক্ষমতাধর সিন্ডিকেট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও এরইমধ্যে মানবপাচারে জড়িত এবং শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রম আদায়ের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই এর সুরাহা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সকল এজেন্সি যাতে বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সময় বাড়ল

সূত্রে জানা যায়, উভয় দেশের সিন্ডিকেটদের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে, তারমধ্যে মালয়েশিয়াভিত্তিক ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে ৬৯টি এবং ঢাকায় রয়েছে ৩১টি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এই ‘সিন্ডিকেট ক্লাবে’ যোগদানের জন্য প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত প্রদান করতে হয়েছে এবং অভিবাসন খাতে তাদের নিজস্ব অংশীদারিত্ব রয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৫ জুলাই রাজধানী কুয়ালালামপুর শহর ও সেলাঙ্গর রাজ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে অনুমোদন পাওয়া ২৫টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগে সেখানকার রিক্রুটিং এজেন্সি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইডির অফিসসহ রিক্রুটিং এজেন্সির একাধিক অফিসে অভিযান চালায় মালয়েশীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (এমএসিসি) কর্মকর্তারা। এ সময় বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দাতুক সেরি আমিনসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দাতো আমিন মালয়েশিয়ায় বাংলা আমিন নামে পরিচিত।

দেশটির মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তার সম্পর্কের জন্য সেসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকমিশনের কুয়ালালামপুর অফিসেও ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। এজেন্সির তালিকা বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে কিনা এবং কীসের ভিত্তিতে এসব লাইসেন্স তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়া তাদের শ্রম চাহিদা পূরণের জন্য স্থানীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে মহামারির কারণে নতুন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত থাকায় দেশটিতে চরম শ্রমিক সংকট তৈরি হয়।

এ শ্রমিক সংকট নিরসনে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ওই সময় সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মালয়েশিয়ার সাবেক মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান। এরপর গেল বছর ২ জুন ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

দুই দেশের সরকারের মধ্যে এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ চলমান রয়েছে। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৬৬ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে মোট ৭৫ হাজার ৭৫১টি আবেদনের মধ্যে ৬৭ হাজার ৯৫৮টি আবেদন অনুমোদিত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com