শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন

সিটিজেনশিপ আবেদনের আগে অ্যাটর্নির পরামর্শ নিন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অনেক স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর কেউ কেউ নানা কারণে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ডমেস্টিক ভায়োলেন্সসহ বিভিন্ন কারণে গ্রেফতারও হয়ে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিনা ভাড়ায় বাস, ট্রেনে চড়ার কারণে টিকিট পান। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে অনেক মানুষ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। এসব কারণে কোনো মামলা হলে সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলেও সিটিজেনশিপ আবেদন করার আগে কারও যদি ক্রিমিনাল হিস্ট্রি থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই একজন লাইসেন্সধারী অ্যাটর্নির পরামর্শ নিতে হবে। পরামর্শ নিয়ে ফাইল করলে তাতে ঝামেলা হয় না।

এ বিষয়ে এক্সিডেন্ট কেসেস ও ইমিগ্রেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি অ্যাট ল’ মঈন চৌধুরী বলেন, সিটিজেনশিপ আবেদন করতে হবে সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে। যাদের ফাইল সাধারণ, সেটি ভিন্ন। তার পরও বলব, সিটিজেনশিপের ফর্মটি সহজ মনে হলেও আসলে পূরণ করতে গেলে বোঝা যায়, কতটা জটিল। যেকোনো তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রিনকার্ডের আবেদনের সময়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, এর সঙ্গে মিল রেখে দিতে হবে। কেননা ইউএসসিআইএসের কাছে আগের করা সব আবেদনের কপিসহ অন্যান্য যত ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তা সবই আছে। এ কারণে সিটিজেনশিপ আবেদন করার সময় পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। সময় এবং অবস্থানের পরিবর্তন সংক্রান্ত নতুন তথ্য যোগ করতে হবে। আগের দেওয়া কোনো তথ্য ভিন্ন হলে চলবে না। অর্থাৎ গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর থেকে যেসব নতুন তথ্য আছে, সেগুলো দিতে হবে।

তিনি বলেন, সিটিজেনশিপ আবেদনের জন্য এখন বায়োমেট্রিক ফিসহ মোট ফি ৭২৫ ডলার। এটি একই চেকে দিতে পারেন। যখন ফাইল করা হচ্ছে, সেই সময় অনুযায়ী ফি দিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, এ দেশে পাঁচ বছরে কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। এতে মামলা হয়, বিভিন্ন ইস্যুতে গ্রেপ্তারের ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। অনেক সময় টিকিটও পান। যদি কারও নামে কোনো ধরনের মামলা হয়ে থাকে, তাহলে সেই মামলার অবস্থা যেমন আছে, তা উল্লেখ করতে হবে। মামলা শেষ হয়ে গেলেও তথ্য দিতে হবে। এ-সংক্রান্ত কপি এবং আদেশের কপিও লাগবে। তবে কীভাবে এসব তথ্য দিতে হবে ও উপস্থাপন করতে হবে, এ বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ অ্যাটর্নিই যথাযথ পরামর্শ দিতে পারেন। কারও যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তিনি নিজেই ফাইল করতে পারবেন, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, নিজে ফাইল করতে পারবেন না, তাহলে তার উচিত একজন অভিজ্ঞ অ্যাটর্নির পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে ফাইল করা।

অ্যাটর্নি মঈন আরও বলেন, সিটিজেনশিপ আবেদনকারীর জন্য ক্রিমিনাল রেকর্ড অনেক বড় সমস্যা। তাই বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা এবং তা ইউএসসিআইএসকে জানানো গুরুত্বপূর্ণ। কারও যদি অর্ডার প্রোটেকশন থাকে, তাহলেও অ্যাটর্নির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ট্যাক্স-সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ম হচ্ছে, যিনি ট্যাক্স ফাইল করার উপযুক্ত, তাকে অবশ্যই ট্যাক্স ফাইল করতে হবে। ট্যাক্স ফাইল না করলে সিটিজেনশিপ আবেদনের সময় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কারও ফেডারেল, স্টেট কিংবা সিটির ট্যাক্স বকেয়া থাকলে বা পাওনা ট্যাক্স পরিশোধ না করলে তাকে তার ট্রান্সক্রিপ্ট দেখাতে হবে। ইমিগ্রেশন অফিস বিশ্বাস করতে চায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করার সময় শপথ করে যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তা সব তথ্য। তাই মিথ্যা তথ্য দিলে তিনি ইমিগ্রেশনের সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

এ জন্য ট্যাক্স ফাইল করার পর যখন প্রসেস হয়ে যায় চাইলে তারা ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে রাখতে পারেন।এ ছাড়া তার সিপিএ, এনরোল এজেন্টের মাধ্যমেও আবেদন করে সংগ্রহ করতে পারেন। নিজেও তুলতে পারেন। এ জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে আইআরএসের ওয়েবসাইটে। নিজে নিজেই অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করেও তা পেতে পারেন।

তিনি বলেন, আর্লিং ফাইলিং করার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, যারা এ দেশে ইমিগ্র্যান্ট হন, তারা পাঁচ বছর হওয়ার তিন মাস আগে অর্থাৎ চার বছর নয় মাসে এবং যারা বিবাহিত হওয়ার সুবাদে গ্রিনকার্ড পান এবং সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করেন, তারা তিন বছর হওয়ার তিন মাস আগে আবেদন করতে পারেন। তবে আর্লি ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই ৯০ দিন পূর্বেই হিসাবটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে হবে। কেউ এক দিন আগে করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ সময়টি হাতে থাকে প্রসেসিংয়ের জন্য। যারা তিন মাস আগে ফাইল করবেন, তারা প্রসেসিংয়ের সময় পেলেন হাতে। কেউ যদি মনে করেন, পাঁচ বছর হওয়ার পর কিংবা তিন বছর হওয়ার পর আবেদন করবেন, সেটিও করতে পারেন।

তিনি বলেন, আবেদনের ফর্মে পাঁচ বছরের ইতিহাস চাওয়া হয়। আবেদনকারীর থাকার ও কাজের ঠিকানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হয়। তিনি যেদিন থেকে গ্রিনকার্ড পেলেন, তখন থেকে পাঁচ বছরের হিসাব দেখাতে হবে। তিনি যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, তা দেখানোর পাশাপাশি কাজের হিস্ট্রি দেখাতে হবে। বাসার ক্ষেত্রেও সব দেখাতে হবে। এ ছাড়া ট্রাভেল হিস্ট্রিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি পাঁচ বছরের মধ্যে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যান, তাহলে তাকে সেসব তথ্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রাভেল ডেটের হেরফের করা যাবে না। কারণ পাসপোর্টের সিলেই উল্লেখ থাকে, তিনি কবে বের হচ্ছেন, কবে আসছেন। তাই এটি ভালো করে দেখে দিতে হবে। কেউ যদি এ ধরনের তথ্যে ভুল করেন, তাহলে রিকোয়েস্ট ফর ফারদার এভিডেন্স চাওয়াসহ অনেক তথ্য, নথিপত্র চাইতে পারে। তাই ভুল তথ্য যাতে ফাইলে দেওয়া না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে কেউ কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে সে-সংক্রান্ত সব তথ্য দিতে হবে। কারণ ওই সব তথ্য সব জায়গায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ না বুঝে ‘না’ লিখে দেন। আসলে বুঝতে হবে সেখানে পাঁচ বছরের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি জীবনে যত ধরনের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এর সব তথ্য দিতে হবে। তাই কেউ পেশাগত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই সেসব সংগঠনের নাম জানাতে হবে। সর্বোপরি মার্কিন নাগরিক হওয়ার জন্য অবশ্যই একজন মানুষকে ভালো মানুষ হতে হবে।

সবশেষে মঈন চৌধুরী বলেন, যিনি যে ধরনের ফাইলই করেন না কেন, অবশ্যই তাকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত একজন অ্যাটর্নির পরামর্শ নিয়ে ফাইল করা উচিত। একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে ফাইল করলে অথবা তাদেরকে দিয়ে আবেদন করালে তা নির্ভুল হবে এবং পরে জটিলতা হওয়ার শঙ্কা থাকে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com