সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন তাদের ভ্রমনের তালিকায় সিঙ্গাপুর থাকবে না এটা হতে পারে না। যারা ভাবছেন সিঙ্গাপুর ভ্রমনের কথা তাদের মাথায় প্রথম একটা কথাই আসে আর সেটা হোল ভিসা কোথায় করাবো কিভাবে করাব। যারা এই কথা ভাবছেন তাদের জন্য বলব আপনারা এই লেখাটি পড়ুন আশা করি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসা করার আগে আপনার পাসপোর্টে যদি ইন্ডিয়া এবং থাইল্যান্ডের ভিসা লাগানো থাকে তাহলে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। যদিও সিঙ্গাপুর ভিসা আবেদনের জন্য ঠিক কয়টি দেশ ভ্রমণ করতে হবে সে সম্পর্কে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ভিসা আবেদন করার পর পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যেই ভিসা প্রসেসিং এর কাজ সম্পন্ন হয় তবে মাঝে মাঝে এর থেকে বেশিও সময় লাগতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর কনস্যুলেট সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসা ভিসা ইস্যু করে থাকলেও তারা সরাসরি ভিসা এপ্লিকেন্টের কাছ থেকে ভিসা আবেদন সংগ্রহ করেন না। তারা ভিসা আবেদন সংগ্রহ করেন তাদের অনুমোদিত কিছু ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে। অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্টের তালিকা নীচে দেয়া থাকবে। দেখে, শুনে, বুঝে আপনি যেকোন একটি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহায়তা নিতে পারেন। অনুমোদিত ভিসা এজেন্টের কাছে আপনার ভিসা আবেদন জমা দেয়ার আগেই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে জেনে নেয়া যাক সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসা করার জন্য কি কি কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো ঠিকভাবে তৈরি করে ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে পারলে আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনা থাকবে অনেকটাই নিশ্চিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে আপনার ভিসা আবেদনের সাথে ঠিকভাবে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো তৈরি করবেন।

 ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম 

আপনাকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পুরন করতে হবে এবং ফর্মে নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট অনুযায়ী সাক্ষর করতে হবে।

পাসপোর্ট

নূন্যতম  ৬ মাস মেয়েদ সম্পন্ন একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঠিক সেদিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে ফলে ভিসা পেতে পেতে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমে যায়, এমন হলে অনেক সময় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কিছুদিন বেশি থাকলে খুবই ভালো হয় যেন ভিসা পাওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে।

পাসপোর্টে অবশ্যই অন্তত দুটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যাতে করে ভিসা স্টিকার এবং ইমিগ্রেশন ষ্ট্যাম্প ওই পাতাতে দেয়া যায়। সেই সাথে সকল পুরাতন পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।

ছবি

২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি (সাইজ হবে ৩৫ মি.মি X ৪৫ মি.মি) লাগবে।

ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, ছবির সঠিক মাপ এবং ৩ মাসের আগে তোলা ছবি গ্রহনযোগ্য হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ছবির পিছনে আপনার সাক্ষর করে দিতে পারেন।

 প্রুফ অফ প্রফেশন (পেশার প্রমান পত্র) 

সিঙ্গাপুর ভিসা পেতে হলে আপনার প্রফেশনের একটি প্রমানপত্র দিতে হবে। সেক্ষেত্রে

আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট), ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট) অবশ্যই অফিসের প্যাডে অফিস কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত করা থাকতে  হবে এবং আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার এন ও সি তে উল্লেখ করা  থাকতে হবে। নো অব্জেকশন সার্টিফিকেটের স্যাম্পল কপি এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।

আপনি যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নাম স্পষ্ট অক্ষরে আছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

প্রপ্রাইটরশিপ বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স, লিমিটেড কম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমরেন্ডাম কপি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে।

আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে বি এম ডি সি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সার্টিফিকেট অথবা আপনার হাসপাতালের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন তাহলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট অথবা আপনার চেম্বারের  প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্কুল / কলেজ / ইউনিভার্সিটির প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট  (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) অথবা বৈধ আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবে।

বি দ্রঃ  উপরের কোন ডকুমেন্ট বাংলায় দেয়া যাবে না যদি বাংলায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।

প্রুফ অফ ফিনান্সিয়াল  ডকুমেন্ট

ভ্রমণের সক্ষমতা প্রমানের জন্য আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে।

ব্যাংক স্টেটমেন্টটি হতে হবে বিগত ৬ মাসের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পারসনাল অথবা স্যালারি একাউন্ট ও হতে পারে।

আপনি একা ট্রাভেল করলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ন্যূনতম ৬০,০০০ (ষাট হাজার) টাকা অবশিষ্ট থাকতে হবে। আর যদি আপনি ফ্যামিলি নিয়ে ট্রাভেল করেন তাহলে পুরো ফ্যামিলির জন্য ১,২০,০০০ (এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকা স্টেটমেন্টে অবশিষ্ট থাকতে হবে।

কভারিং লেটারঃ

ভিসা অফিসার, এম্বাসি অফ সিঙ্গাপুর, ঢাকা বরাবর একটি কভারিং লেটার লিখে জমা দিতে হবে।

কভার লেটারে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, পেশা, পেশার উপাধি, কবে যেতে চান এবং আপনার ভরন পোষণ কে বহন করবে এইসব কিছু উল্লেখ থাকতে হবে। ফ্যামিলি নিয়ে গেলে সবার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।

সিঙ্গাপুর হোটেল বুকিং কপি।

সিঙ্গাপুরে আপনি কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন তার একটি বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি হলেই হবে কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ভিসা হয়ে যায় কেবল তখনি আপনি বুকিং কনফার্ম করতে পারেন। হোটেল বুকিং এর জন্য ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতাও নিতে পারেন।

ঢাকা সিঙ্গাপুর ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকিট বুকিং কপি।

ঢাকা সিঙ্গাপুর ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেটের বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। ভিসা হয়ে যাবার পর টিকিটটি কনফার্ম করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিতে পারেন।

লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন ফর্ম (এল ও আই)।

লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন ফর্মটি অবশ্যই সিঙ্গাপুরের স্থায়ী নাগরিক দ্বারা ইস্যুকৃত হতে হবে। এল ও আই আপনি নিজে সংগ্রহ করতে পারেন যদি আপনার পরিচিত কেউ সিঙ্গাপুরে থাকে তাছাড়া ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিয়ে এল অ আই ফর্ম মেনেজ করতে পারেন। লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন ফর্মের কপি ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।

আপনার মূল ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে দেয়া তথ্যের সাথে আই ডি কার্ডে দেয়া তথ্যের হুবুহু মিল থাকে।

এই ছিল সিঙ্গাপুরে টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের লিস্ট, আপনি যদি ফ্যামিলি নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনার কাগজপত্রের সাথে আপনার ফ্যামিলি মেম্বারদের যেসকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে সেগুলো নিন্মরূপ

ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

১. সবার পাসপোর্ট এবং ২ কপি ছবি (সাইজ হবে ৩৫মি.মি X ৪৫ মি.মি)

৩. স্ত্রীর জন্য মেরিজ সার্টিফিকেট (যদি পাসপোর্টে আপনার নাম উল্লেখ না থাকে)

৪. সন্তানের জন্য জন্মসনদ অথবা এন এই ডি কার্ডের ফটোকপি।

বি দ্রঃ কোন ডকুমেন্ট বাংলায় থাকলে অবশ্যই ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।

 

সিঙ্গাপুর টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং ফিঃ

ভিসা ফি ভিসার মেয়াদ কতদিন থাকা যাবে
৩৪০০  টাকা (এল ও আই ছাড়া) ৩ মাস ৬০ দিন
৪,৪০০ টাকা (এল ও আই সহ) ৬ মাস ৬০ দিন
ট্রাভেল এজেন্ট সার্ভিস চার্জ এর সাথে যুক্ত হবে।

বি দ্রঃ ভিসা প্রসেসের জন্য প্রদত্ত যেকোনো ডকুমেন্টস ভূয়া অথবা জাল প্রমাণিত হলে, আপনার ভিসার  আবেদনটি নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যান হবে, এমনকি আপনি উক্ত এম্বাসির কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। এবং ইহা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং, এধরনের অভিপ্রায় থেকে বিরত থাকুন।

কোন কারনে ভিসা না হলে ভিসা ফি ফেরতযোগ্য নয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com