হোটেল, মোটেল কিংবা রিসোর্ট নয়, পারিবারিক পরিবেশে দিন-রাত যাপনে ব্যতিক্রমী সার্ভিস ‘হোম স্টে’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিউ নরমাল অবস্থায় পর্যটকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ স্বল্প খরচে পর্যটন এলাকায় রাত-দিন যাপনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সেবায় কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাভাবিক সময়েও চলবে এই কার্যক্রম।
ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রান্তিক এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশের পর্যটন এলাকায় ‘হোম স্টে’ করার জন্য স্থানীয় লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিন-রাত যাপনের নিশ্চয়তা পাবেন পর্যটকরা। করোনা পরবর্তীতেও অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তৃণমূলের পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে রাত যাপনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
ট্যুরিজম বোর্ড জানায়, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের পর্যটন খাত। করোনার কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট দেশের ৪০ লাখ কর্মী তাদের আয় নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এই কর্মীদের পরিবারের দেড় কোটির বেশি মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এসব কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় লোকজনকে কাজে লাগাতে ‘হোম স্টে’ নামে নতুন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে ভ্রমণ পিপাসুদের প্রিয় স্থানগুলোতে যেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই—সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে পারিবারিক পরিবেশে। ছোট ছোট বাড়িতে অবকাঠামোর উন্নয়ন করে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এই কার্যক্রমে।
জানতে চাইলে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা সারাদেশে ‘হোম স্টে’ সার্ভিস চালু করতে চাই। পর্যটনের বিকাশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং স্থানীয় লোকজনকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। অনেক জায়গা আছে থাকার ব্যবস্থা নেই বলে পর্যটকরা সেখানে যেতে চান না। অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম এক্ষেত্রে সুফল পাবে। বিদেশি পর্যটকরাও থাকতে পারবেন কম খরচে। করোনায় পর্যটন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে চাই। সে কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোয়িশেনের প্রেসিডেন্ট ও ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রেজাউল একরাম বলেন, ‘‘করোনার কারণে ট্রাভেল পেশায় যারা জড়িত তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকেই ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। ট্রাভেল ব্যবসা নেই বললেই চলে। কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ ট্রাভেল শুরু হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই খাবারের ব্যবসা শুরু করেছেন অনলাইনে। অনেকে হোটেল ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন। বড় হোটেল করার খরচ অনেকে। তাই ছোট ছোট গেস্ট হাউজ করছে। বনানীর মতো পশ এলাকায় ‘লিটল ট্রি‘ হয়েছে। হোটেলে এমন ভাড়া পেতে ৬ হাজার টাকা লাগবে। সেখানে অর্ধেকেই পাবেন গেস্টরা। বিদেশি গেস্টদের জন্য না হলেও অভ্যন্তরীণ ট্যুরিস্ট যারা রয়েছেন তারা থাকতে পারবেন।’’
বনানীর ‘লিটল ট্রি’ নামের গেস্ট হাউজের মালিক মো. মোশাররফ হেসেন শিশির বলেন, ‘‘কম খরচে উন্নত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা রেখেই করা হয়েছে ‘হোম স্টে’ সার্ভিস। বাবার সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টকে ‘লিটল ট্রি’ নামের ‘হোম স্টে’ সার্ভিস করেছি। এখানে রয়েছে সাতটি রুম। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রয়েছে ড্রয়িং রুমও। একটি বড় হোটেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা যেসব রুমের ভাড়া নেওয়া হয়, সেই রকম রুমের ভাড়া দেওয়া হবে অনেক কম। দাম নির্ধারণ এখনও করিনি। তবে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা রাখা হবে, যা পর্যটকদের জন্য লাভজনক।’’
গত ৩১ আগস্ট ‘লিটল ট্রি’ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান শিশির। কবে নাগাদ চালু করা হবে জানতে চাইলে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে পর্যটক নেই। তাই পরিস্থিতি বুঝে খুব দ্রুতই অপারেশনে যাবো। হোটেলে যেসব রুমের ভাড়া ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, তার চেয়ে ‘লিটল ট্রি’ ‘হোম স্টে’ সার্ভিসে ভাড়া হবে দেড় হাজার টাকার মতো।’’
ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট পর্যটন স্পট রয়েছে। একই এলাকায় একাধিক স্পটও রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায়ও রয়েছে পর্যটন স্পট। একাধিক পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে একটি ‘হোম স্টে’ সার্ভিস চালু করলে উদ্যোক্তরা করোনার সময় টিকে থাকতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে পর্যটক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উভয় পক্ষই সুবিধা পাবেন। সরকার এ ধরনের কাজে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে সব সময়।