অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ আসছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে, কাজ করছেন। তাদের মাঝে অনেকেই এদেশকে নিজের দেশ হিসেবে আপন করে নিচ্ছেন। এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছেন, ক্রমান্বয়ে নাগরিকত্ব অর্জন করছেন।
বর্তমান পৃথিবীতে মাল্টিকালচারাল এবং ফেয়ার অপরচুনিটির দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সুখ্যাতি অর্জন করেছে। উন্নত বিশ্বের জীবনযাত্রা, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার সুযোগ, উন্নত চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য ও বসবাসের পরিবেশের মান ইত্যাদি নানা কারণেই এখন লক্ষ লক্ষ মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
অভিবাসনের ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ আসে স্কিলড মাইগ্রেশন বা কোন একটি পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে। এছাড়াও পারিবারিক সূত্রে কিংবা আশ্রয়প্রার্থী হয়েও প্রচুর মানুষ আসছেন এদেশে। এসবের পাশাপাশি আরেকটি উত্তম সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের, যা সম্পর্কে বাংলাদেশের বিপূল সংখ্যক মানুষ অবগত নন।
এটি হলো ব্যাবসায়ীদের জন্য ভিসা। এ ভিসা হলো এমন সব মানুষদের জন্য যারা ইতিমধ্যেই নিজ দেশে সফলভাবে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছেন শুধুমাত্র তাদের জন্য।
সুতরাং কেউ যদি বাংলাদেশে বিগত কিছু বছর যাবত একটি সফল ব্যাবসা করছেন অথবা কোন বিনিয়োগের সাথে জড়িত আছেন এমন ব্যক্তি হয়ে থাকেন, যদি তার আর্থিক সামর্থ্য থাকে এবং অস্ট্রেলিয়াতে সত্যিকার অর্থেই কোন বাস্তবসম্মত ব্যাবসা কিংবা বিনিয়োগের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে তারা এসব ব্যাবসা-সংক্রান্ত ভিসার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেন।
এ ধরণের ভিসায় যারা অস্ট্রেলিয়া আসেন, তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অর্থ্যাৎ স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এ সম্পর্কীয় সবাই একই সাথে বসবাসের জন্য এদেশের ভিসা পাবেন। এদেশে থাকাকালীন পরিবারের এই সদস্যরা কাজ এবং পড়ালেখার অধিকারও পাবেন। এ ভিসায় থাকা ব্যক্তিরা ভিসাটি ভ্যালিড থাকা অবস্থায় যতবার ইচ্ছা অন্যান্য দেশে যাওয়া আসা করতে পারবেন। মনোনয়ন প্রদানকারী স্টেট বা টেরিটরি সরকারের অনুমোদনক্রমে ভিসাটি পরবর্তীতে দুই বছরের জন্য নবায়ন করা যায়। সর্বোপরি এ ভিসায় বসবাস করা এবং ব্যাবসা করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে তারা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্যও আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
এ ধরণের ব্যাবসায়িক ভিসায় অস্ট্রেলিয়া আসতে চাইলে মূলত পাঁচ ধরনের ভিসায় আবেদন করার সুযোগ আছে। এসব ধরণ বা প্রকারকে এদেশের সরকারী পরিভাষায় ভিসা স্ট্রিম নামে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি ভিসা স্ট্রিমের জন্য রয়েছে নির্ধারিত কিছু শর্তাবলী। এসব শর্তাবলী যদি কেউ পূরন করার সামর্থ্য রাখেন, তাহলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে আবেদনপত্রের সাথে জমা দিয়ে যে কেউ সহজেই অস্ট্রেলিয়ায় আসতে ও বসবাস আরম্ভ করতে পারেন।
ব্যাবসায়িক ভিসার এ পাঁচটি স্ট্রিম হলো বিজনেস ইনোভেশন স্ট্রিম, ইনভেস্টর স্ট্রিম, সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর স্ট্রিম, প্রিমিয়াম ইনভেস্টর স্ট্রিম এবং অন্ট্রেপ্রনার স্ট্রিম। আজকের এ প্রবন্ধে উপরোক্ত প্রতিটি স্ট্রিমের শর্তাবলী সম্পর্কে সহজ ভাষায় প্রাথমিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি যেন তা বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য উপকারে আসে।
বিজনেস ইনোভেশন স্ট্রিম:
ব্যবসায় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আছে এমন কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ায় নতুন কোন ব্যবসা শুরু করতে যান অথবা ইতিমধ্যেই চালু কোন ব্যবসার হাল ধরতে যান এ ভিসা তাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এ ভিসার আবেদনের জন্য স্টেট কিংবা টেরিটরি সরকারের মনোনয়ন থাকতে হবে।
এ স্ট্রিমে ভিসার আবেদন করতে গেলে সরকার নির্ধারিত বেশ কিছু শর্তাবলী পূরণ করা আবশ্যক। এসবের মাঝে উল্লেখযোগ্য এবং প্রাথমিক শর্তগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো।
ইনভেস্টর স্ট্রিম:
কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ার কোন স্টেট বা টেরিটরিতে চার বছর সময়কালের জন্য ন্যুনতম দেড় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন এবং অস্ট্রেলিয়াতে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড চালু রাখেন তাহলে তিনি এ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ভিসার জন্যও কোন স্টেট বা টেরিটরির সরকার কর্তৃক মনোনয়নপ্রাপ্ত হতে হবে। এ ভিসা স্ট্রিমের শর্তাবলীর মাঝে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হলো:
সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর স্ট্রিম
এই ভিসা স্ট্রিমে আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়ার ‘সিগনিফিক্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট’ শ্রেণীর সাথে সাযুজ্যপূর্ণ ব্যবসায় অন্ততপক্ষে ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। কোন স্টেট বা টেরিটরির সরকার অথবা অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষে ‘অসট্রেড’ সংস্থা এ ভিসার মনোনয়ন দিতে পারে। এ শ্রেণীর ভিসার নিয়মকানুন যদি পরবর্তীতে পরিবর্তন হয় তথাপি যে কোন আবেদনকারীর জন্য আবেদন করার সময়কালীন নিয়মগুলোই পরবর্তীতে প্রযোজ্য থাকবে। এ ভিসা স্ট্রিমে আবেদনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী রয়েছে, তবে পূর্বোল্লিখিত দু’টি স্ট্রিমের সাথে এ স্ট্রিমের শর্তাবলীর যে পার্থক্য রয়েছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো:
প্রিমিয়াম ইনভেস্টর স্ট্রিম
এ ভিসা স্ট্রিমে আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়ার ‘প্রিমিয়াম ইনভেস্টমেন্ট’ শ্রেণীর সাথে সাযুজ্যপূর্ণ ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে ১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। এ ভিসা আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে ‘অসট্রেড’ নামক সংস্থা মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এ ভিসার আবেদনকারীরা তদের মূলধন যেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন তার মাঝে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলো হলো:
অন্ট্রেপ্রোনার স্ট্রিম
ব্যবসার পরিকল্পনা করা ব্যক্তির অনেকসময় নিজস্ব সম্পত্তি থাকে না মূলধন হিসেবে বিনিয়োগের জন্য, কিন্তু এমন কেউ যদি তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা বা বিনিয়োগ করার জন্য অন্ততপক্ষে দুই লক্ষ ডলার ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে তিনি অন্ট্রেপ্রোনার স্ট্রিমে ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ ভিসা স্ট্রিমে আবেদনকারীকেও কোন স্টেট বা টেরিটরির সরকার কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। এ ভিসার আবেদনকারীর জন্য রয়েছে নানা প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করার বাধ্যবাধকতা, যার মাঝে কিছু উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো:
ব্যবসায়ী হিসেবে ভিসার নিয়মকানুনগুলো পেশাগত দক্ষতার ভিত্তিতে বা পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসার চেয়ে ব্যতিক্রমী। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্সের অধীনে ইমিগ্রেশন বিভাগের ওয়েবসাইট, মাইগ্রেশন এলায়েন্স অস্ট্রেলিয়া সংস্থা অথবা একজন দক্ষ মাইগ্রেশন এজেন্ট এক্ষেত্রে বিস্তারিত এবং সহায়ক তথ্যাবলী দিতে পারে। খুঁটিনাটি শর্তাবলী ও বিস্তারিত বর্ণনার কারণে আপাতদৃষ্টিতে এ ভিসাকে জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শর্তাবলী যথাযথভাবে পূরণ হলে এবং মূলত আইনসঙ্গতভাবে আর্থিক সামর্থ্য থাকলে এ ভিসা পাওয়া এবং এর মাধ্যমে পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও নাগরিক হওয়ার সুযোগ তুলনামূলকভাবে সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।