শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

সাবওয়েতে মেয়েদের দিকে কুনজর, হেনস্তা, বর্ম যেনো সাবওয়ে শার্ট

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

নিউইয়র্কে গরম বাড়ছে। গেলো সপ্তাহান্তের ঘটনা। তাপমাত্রা ছিলো ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। শনিবার সন্ধ্যায় এক বন্ধুর বাড়িতে পার্টি ছিলো ক্লেয়ার হেনরিকের। ২৪ বছরের ক্লেয়ারের সামার পার্টির পোশাক কি হবে সে নিয়ে যে কেউই ভেবে নিতে পারেন। ভিন্টেজ বেবি ব্লু ট্যাঙ্কটপ আর মিনি স্কার্টে সেজেই বন্ধুর বাড়ির রুফটপ পার্টিতে যাচ্ছিলেন ক্লেয়ার। কিন্তু ঘর থেকে ঠিক বের হবার সময় কি মনে করে পার্টি ড্রেসের উপর দিয়ে গায়ে গলিয়ে নিলেন ঢিলেঢালা একটা এক্সট্রা লার্জ সাদা সাবওয়ে টি-শার্ট। পার্টি ড্রেস ঢাকা পড়লো সেই বেঢঁপ কাপড়ে। তাতে কিছু আসে যায় না। এই এক কৌশলে ক্লেয়ার নিজেকে অনেক নোংরা চোখের আড়াল করে নিতে পারলেন।

ক্লেয়ারের এটা নিজের আবিষ্কার নয়। টিকটক দেখে শিখেছেন। ‘সাবওয়ে শার্ট’ এ ঢেকে দাও নিজের পোশাক।

কোথাও যেতে হলে এটাই একটা নিরাপদ ব্যবস্থা, বলছিলেন ক্লেয়ার হেনরিক। “আমি কারও টার্গেটে পরিণত হতে চাই না, কথাটা শুনতে অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি!”

শীত কেটে গেছে। নিউইয়র্করারা এখন তাদের শরীর থেকে কাপড়ের প্রস্ত কমিয়ে আনতেই চান। কিন্তু গরমে গায়ের কাপড় সংক্ষিপ্ত করার ইচ্ছা থাকলেও, অপ্রত্যাশিত নজর এড়ানোটাই কঠিন হয়ে পড়ে।

এমন কিছু নয় যে নজর এড়াতে হবে। কিন্তু যে হয়রানি আর হেনস্তার শিকার হতে হয় যখন তখন সেটাই বড় মুশকিলের বিষয়। অন্যায়কারী যতই ন্যাক্কারজনক কাজ করুক না কেনো শেষ পর্যন্ত পোশাকের দোষটাই বড় করে দেখা হয়। আর তাই কেউ যদি ঝুঁকি নিতে না চান, ক্লেয়ারের মতো সাবওয়ে টি-শার্টে ঢেকে নিন নিজেকে।

এখন প্রত্যেকেরই ড্রয়ারে এমন একটা ব্যাগি, আকারবিহিন কাপড় থাকে যা পরে কুনজর এড়াতে পারেন তারা। এমন একটা বেঢঁপ কাপড় পোশাকের ওপর চাপিয়ে নাও। ট্রেনে কেউ ফিরেও তাকাবে না।

“এমন কিছু পরতে না হলে আমার সত্যিই ভালো লাগতো, বড় হয়েও আমার মনে হয় আমি যেনো মিডল স্কুলের ড্রেস কোড মানতেই বাধ্য হচ্ছি- কিন্তু তার পরেও পরি কারণ লোকেরা যেনো আমাকে বিরক্ত না করে,” বলছিলেন ক্লেয়ার হেনরিক।

সম্প্রতি নেব্রাস্কা থেকে নিউইয়র্কে এসেছেন আজানা গ্রোভ, ১৯। তার কথায়, “আমি বুঝে নিয়েছি, নিজেকে ঢেকে নিলে আমি ইচ্ছা মতো হেঁটে বেড়াতে পারি। প্রতিবারই যখন আমি আমার সাবওয়ে শার্টটা পরে নিতে ভুলে যাই- পরে পস্তাই। কারণ চারিদিকে তাকিয়ে নিজের আর তখন ভালো লাগে না।”

একটা দুটো ব্যাগি শার্ট গ্রোভ নিজের ব্যাগেও রেখে দেন। আর বন্ধুদেরও সেটাই করতে উৎসাহিত করেন। “নিউইয়র্কে মুভ করে আসার পর আমি খেলায় করেছি লোকগুলো যেভাবে তাকিয়ে থাকে তাতে আমার শরীরই ঘৃণায় রি রি করতে থাকে।”

লিওরা তানেনবম ‘আই অ্যাম নট এ স্লাট: স্লাট শেমিং ইন দ্য এজ অব ইন্টারনেট’ এর লেখিকা। তিনি বলেছেন, এটা থেকে যদি কিছু মানুষের শিক্ষা হয়- তাদের কারণে পথে ঘাটে মেয়েরা কতটা অস্বস্তিতে থাকে।

শরীরটাকে ঢেকে নিলে মেয়েরা একটু কম ঝুঁকি মনে করে। কিন্তু এর মানে এই নয় মেয়েরা একটা সাবওয়ে শার্ট না পরলে তাদেরই অন্যায় হয়ে যাবে, বলেন এই লেখিকা।

নিউইয়র্কে ২০১৯ সালের পর থেকে সাবওয়েয়ে সহিংস অপরাধগুলো বাড়ছেই। মেয়েরা আজকাল সম্ভব হলেই পাবলিক ট্রানজিট এড়িয়ে চলে। এমটিএ’র একটি জরিপ দেখিয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরদাতাদের ৪১ শতাংশই বলেছেন তারা এখন সাবওয়ে ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশরই মত, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভেবেই তারা এমনটা করছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com