ইদানিং বাঙালির বেড়াতে যাবার ব্যাপার টা বেশ উপভোগ্য ও আরাম দায়ক করার প্রবণতা বাড়ছে । হোল্ড অল নিয়ে তীর্থে গিয়ে কোন রকমে রাত কাটানোর দিন আর নেই ! এটা ভাল লক্ষণ । তবে কি , ওই ভাবে আয়েশ করে সবার তো আর ট্যুর করা সম্ভব হয় না , সাধ্যে কুলায় না বলে । তাদের জন্য এ লেখা যদি কিছুটা হেল্প করে তবেই এ লেখা সার্থক ।
গত একবছর ধরে অনেক খোঁজ খবর করে গত চোদ্দই অক্টোবর দুহাজার চব্বিশ, বেরিয়ে পড়ি সপরিবারে সদলে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের উদ্দেশে । এখন, সব বেড়ানো-বুভুক্ষু মানুষই কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব ঘেঁটে সমস্ত রিসার্চ করেই কোন নতুন জায়গাতে বেড়াতে যান । কোন জায়গাতে গেলে কি পাবেন তাই নিয়ে বলা তাই বাতুলতা মাত্র । আন্দামান তো প্রকৃতির স্বর্গ রাজ্য ! বেড়াতে যাঁরা ভালবাসেন অথবা প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যেতে চান , তাঁদের অবশ্যই একবার যাওয়া উচিত আন্দামানে। যাঁরা ক্যামেরার ফ্রেমে ধরে রাখেন স্মৃতি, তাদেরও এটা একটা সোনার খনির ফিলিং দেবে। আমার এ লেখা তে সেই সুলুক সন্ধান নেই, থাকবেও না । এখানে তুলে ধরছি এমন কিছু তথ্য যা আবশ্যক, কিন্তু অনেকেই সেভাবে বলেন না । আসুন একে একে ভাগে ভাগে শেয়ার করে নিই আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি ।
দেখুন কাপে আর লিপে (ইংরেজি প্রবাদ) তো ফারাক থেকে যায়ই। নীচে কয়েকটা উদাহরণ দিলাম তার।
আমি অন্তত জানতাম না যে পোর্টব্লেয়ার ( আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ পুঞ্জের রাজধানী) একটা আদ্যন্ত দক্ষিনী শহর , একেবারে তামিল নাড়ুর কোন ছোট শহর বা পল্লী তে এসে পড়েছেন মনে হবে আপনার । ঘরবাড়ি, দোকান, মন্দির থেকে বাসের গায়ে তামিল লেখা , তামিল স্কুল সবকিছু নিয়ে । এটা বেশ অন্য রকম লাগছিল ।
আপনি জানতেন কিনা জানিনা , পোর্ট ব্লেয়ার তার উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা ঘাট নিয়ে নিজেও একটা ঘুরে বেড়ানোর জায়গা ?
এমন আরো কত কি ! বলছি বলছি এক এক করে !
সময়: সবাই ই জানেন উপযুক্ত ঘোরার সময় অক্টোবর থেকে শীতের শেষ। আন্দামানের আকাশে অল্প মেঘ সব ঋতুতেই থাকে । এ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, পুজোর ঠিক আগে আগে ঘুরে আসতে পারেন কারন ওই সময় ভিড়টা কম থাকায় ঠিকমতো সার্ভিস গুলো পাবেন । ট্যুর অপারেটররা একটু নমনীয়ও থাকে ,দাম দর করা যায় । মার্চ এপ্রিলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তবে এই সময়টাকে বেছে নেবেন তাঁরাই যাঁরা গরম টাকে পাত্তা দিতে নারাজ । হোটেলে মোটামুটি এসি থাকেই, কেবল সমুদ্রের ধারে ঘুরতে একটু কষ্ট হতে পারে ।
ফ্লাইট : আমরা গেছলাম ভোরের ইন্ডিগো তে । পারলে বেলার কোন ফ্লাইটই নেবেন । তাতে সারাদিন ছোটাছুটির এনার্জি টা পাবেন । যাঁরা এলটিসি নিয়ে যাবেন তাঁদের অনেক নিয়ম অনুযায়ী টিকিট কাটতে হয় । তার বাইরে যাঁরা যাবেন, দেখে নিতে পারেন চালু অ্যাপে কোথায় কি ছাড় দিচ্ছে । আমি শুনেছি অনেক সময় ছ মাস আগের ডায়রেক্ট ফ্লাইট-কোম্পানি র কাটা টিকিটের থেকে, পনেরো দিন আগে অ্যাপে কাটা টিকিটে কম দাম অফার করে। তবে কোথায় কি অফার দিচ্ছে, খেয়াল রাখতে হবে। ফ্লাইট এর আরেকটা ফান্ডা,আগে থেকে বেশি টাকা দিয়ে জানলার টিকিট বুক করতে যাবেন না । একটু আগে আগে এয়ারপোর্টে এসে চেক ইন করলে, একটা উইন্ডো সিট বললে ওরা দিয়ে ই দেবে। আন্দামানে নাবার সময় প্লেনের বাঁ দিকের আর ফেরার সময় ডান দিকের ভিউ ভালো । মিডিল সিট পড়েছে? কুছ পরোয়া নেই! জানলায় ক্যামেরা তাক করে ভিডিও তুলুন, অনেকটাই দেখতে পাবেন।
পোর্ট ব্লেয়ার: আগেই বলেছি , পুরো দস্তুর পাহাড়ি শহর । ঘুরে দেখাটা মিস্ করবেন না। অটো ও লোকাল বাসে এদিক ওদিক যাওয়া যায় । শুধু সেলুলার জেলই দ্রষ্টব্য নয় এখানে। অল্প খরচে দেখে নিন,তিনটি স্পট । এগুলি হলো অ্যান্থ্রোপলজিকাল মিউজিয়াম, নেভাল মিউজিয়াম বা সমুদ্রিকা, আর ফিশারি ডিপার্টমেন্ট এর অ্যাকোয়রিয়াম । যাঁরা ঘুরে বেড়ানোর সাথে সাথে জায়গা টাকে ,সেখানের মানুষ জনকে চিনতে চান। ইতিহাস আর জীব-বৈচিত্র র খবর নিতে চান , আগেভাগেই এগুলি দেখে নেওয়া ভাল। একটু বাড়াবাড়ি মনে হলেও বলবো সেলুলার জেল যখন যাবেনই, বাঙালি বিপ্লবী ও ওই জেলের ঐতিহাসিক সংযোগ সম্পর্কে সময় করে পড়ে নিয়ে যান । আপনি , বিশ্বাস করুন, অন্য ট্যুরিস্ট দের থেকে ভাল ‘এনজয়’ করতে পারবেন। এছাড়া চ্যাথাম শ-মিল,মাউন্ট হ্যরিয়েট ( ওই দ্বীপের সব চেয়ে উঁচু চুড়া) চিড়িয়াটাপু, মুন্ডা পাহাড় দেখবেন । আশে পাশে সব কোরাল-বিচ হলেও একেকটা সৌন্দর্যে এক এক রকম ।চারদিকে ছোট ছোট পাহাড় বেষ্টিত রাতের শহরের শোভা অতুলনীয় হোটেলের রুম ছেড়ে বেরোলেই চোখে পড়বে, বিনা খরচে। এছাড়া মনে রাখবেন , মেরিনা পার্ক, সমুদ্রের ধার দিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে দিয়ে যে রাস্তা টা উঠে যাচ্ছে পাশের পাহাড়ে থাকা সেলুলার জেলের দিকে ওইটাই এই শহরের বিউটি-স্পট । পারলে একবার ভাল করে ঘুরে নেবেন বিকেলের দিকে । যদিও ট্যুর কোম্পানি গুলি এটার জন্য আলাদা সময় দেবেনা ।
(দ্য গ্রেট)নর্থ বে আইল্যান্ড: ভেবেছিলাম বলবো , নর্থ বে আইল্যান্ড যাবেনই না। সবদিক থেকেই সময় ও টাকার অপচয়। ট্যুর অপারেটর ও ওয়াটার স্পোর্টস এর এজেন্ট রা তো এমন ভাব করবে যেন নর্থ বে না গেলে —-আপনাকে বরং টিকিট করে দিচ্ছি, ফিরতি ফ্লাইটে দমদমে ফিরে যান। আমি বলবো নিজেরা প্লান করুন এভাবে ,রাজীব গান্ধী ওয়াটার স্পোরটস সেন্টার বা বোট ঘাট থেকে বোট কেবল মাত্র রস আইল্যান্ড এর জন্যও ছাড়ে। সময় নিয়ে যান ঘুরুন, ছবি তুলুন । ভাল লাগবে। অতঃপর নর্থ বে । এটা কিন্তু সেই অর্থে আইল্যান্ড নয় যেরকম সংজ্ঞা ভূগোল বইতে ছোটবেলায় পড়েছেন। গুগুল ম্যাপ দেখে নিন! তবুও যদি যান , ওই ছোট দিঘিতে অন্তত জলের তলার কোন অ্যাকটিভিটি করতে যাবেন না। জেট স্কি, ব্যানানা রাইড করতে পারেন।
ওখানের রেস্টুরেন্ট আবার কিউরিও শপ গুলো আমার মনে হয়েছে কস্টলি। পারেন তো বাদ দেবেন। আমি বলবো অ্যাকটিভিটি র জন্য জানবেন প্রচুর জায়গা পড়ে আছে আগামী দিন গুলোতে । ঠিক এই কারনেই নর্থ বে তে প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি টবি তোলার পক্ষে ঠিকঠাক । এখানে তীর বরাবর অনেক ক্ষয়ে যাওয়া প্রবাল পড়ে থাকতে দেখেছি, যেটা অন্য কোথাও পাই নি।
রস আইল্যান্ড : হাইলি রেকমেন্ডেড! দ্বীপে নেবে সময় থাকলে হেঁটে ঘুরবেন, না থাকলে ঢুকে বাঁ দিকে ব্যাটারি গাড়ির টিকিট করে নেবেন। এমন কিছু বড় না দ্বীপ টা। শেষ প্রান্তে লাইট হাউস,যতটা যাওয়া যায় যাবেন। ডাব খাবেন,,খোলা গুলো হরিন দের দেবেন , আশেপাশেই ঘুরছে!
অন্য দ্বীপে: সব দ্বীপে যাবার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজ আছে। পারলে সরকারি জাহাজে যান,খরচা অনেকটাই কম হয় তাতে। জাহাজ গুলি সাধারনত সকালে হ্যাভলক যায়, সেখান থেকে নিল আইল্যান্ড হয়ে সরাসরি পোর্ট ব্লেয়ার এ ফেরে দুপুরের মধ্যে । ম্যাকরুজ কম্পানি র ক্যাটামেরন চলে তাড়াতাড়ি তবে সবটাই ঢাকা। আমরা গিয়ে ছিলাম গ্রিন ওসান এ । এতে ডেকে ওঠা যায়, ছবি তোলা যায়, নাচানাচি ও করতে পারেন। এর সবচেয়ে তলার ক্লাসে টিকিট কাটলে আপনার সাশ্রয় ও হবে আবার উপরে উঠে এলে সমুদ্র শোভা ও উপভোগ করতে পারবেন। যাতেই চড়ুন,সমুদ্রের দিকে নজর রাখলে উড়ুক্কু মাছ আপনার চোখে পড়বেই ! ও হ্যাঁ! একটা কথা ,যেখানে যখনি যাবেন, শুকনো খাবার আর জল নিয়ে যাবেন। জাহাজে আর উড়োজাহাজে এদুটোর দাম মাত্রা ছাড়া
Like this:
Like Loading...