ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশের আয়তন। গত তিন যুগে কয়েকশ কিলোমিটার আয়তন বেড়েছে। সাগরে নতুন নতুন দ্বীপ জেগে ওঠায় বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন নতুন ভূমি যুক্ত হচ্ছে। এতে করে দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের আয়তন বেড়েছে ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার।
‘ল্যান্ড এরিয়া এক্সপানশন ইন দ্য ইস্টার্ন পার্ট অব মেঘনা এসটুয়েরি সিন্স দ্য ১৯৯০ বা ১৯৯০ সাল থেকে মেঘনা মোহনার পূর্ব অংশে ভূমি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) সদস্য ড. মাহমুদুর রহমান। এতে সন্দ্বীপে অল্প জোয়ারের সময় ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারির স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৩৬ বছরে দেশের অন্যতম দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের আয়তন ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার কিলোমিটার বেড়েছে। এরমধ্যে জেগে ওঠা ভূমি রয়েছে ৩৯৮ বর্গকিলোমিটার আর পলিময় ভূমি রয়েছে ৭৭ বর্গকিলোমিটার। সাগর একসময় এসব ভূমি গ্রাস করে নিলেও তা এখন আবার ফেরত দিচ্ছে।
জেগে ওঠা ভূমির মধ্যে ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ১২১ শতাংশ এবং জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এমন ভূমির বৃদ্ধি ২৩ শতাংশ। যা পলল ভূমি নামে পরিচিত। মূলত স্যাটেলাইট ছবি গবেষণার ভিত্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় ১৯৮৯ এবং ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার এবং বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে সন্দ্বীপ ও আশপাশে পলি জমে সমতল ভূমি সৃষ্টির প্রবণতা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক বেশি। এ ভূমির সঠিক ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ফলাফলে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালের স্যাটেলাইট চিত্রে সন্দ্বীপের উপস্থিতি রয়েছে। তবে সেখানে জায়গায় জায়গায় জোয়ারের কাদামাটির স্তর রয়েছে। এর বেশিরভাগ পরে জেগে ওঠা ভূমি তৈরি করে । এটিকে পরবর্তীতে জাহাইজ্জর চর (স্বর্ণদ্বীপ) নামে নামকরণ করা হয়। ভূমির আকার ১৯৮৯-২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাপক আকারে বেড়েছে। ১৯৮৯ সালে উরিরচর থাকলেও সেটি ভিন্ন আকারে ছিল। ২০২৫ সালে এটি আরও বড় এবং কমবেশি গোল আকৃতি ধারণ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৯ সালে সেখানে জেগে ওঠা জমি ছিল ৩২৮ বর্গকিলো। ২০২৫ সালে এটি বেড়ে ৭২৬ বর্গকিলো হয়েছে। এছাড়া পলল ভূমি ৩৩৫ বর্গকিলো থেকে বেড়ে ৪১৩ বর্গকিলো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সব পলল ভূমি সমতল জমিতে রূপান্তর হয়নি। এ জমির কিছু অংশ স্থিতিশীল জমি তৈরি করেছে এবং কিছু অংশ ভেসে গিয়েচে। এরপরও জেগে ওঠা ভূমি অনেত বেড়েছে।
গবেষক ড. মাহমুদুর রহমান জানান, জেগে ওঠা ভূমি বলতে জোয়ার-ভাটার সময় দৃশ্যমান ভূমিকে বোঝানো হয়েছে। আর জোয়ারে ডুবে যাওয়া ভূমিকে পলল ভূমি বলা হয়েছে। এ গবেষণায় দেখা গেছে, সন্দ্বীপে জেগে ওঠা ভূমির প্রবণতা অনেক বেশি। কিন্তু এই অবস্থাটি ১০০ বছর আগেও ছিল না। সন্দ্বীপে ভূমি ভাঙার প্রবণতাই বেশি দেখা গেছে।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের শুরু থেকেই এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। নতুন ভূমি গড়ার প্রবণতা এখন বেশি। যেভাবে ভূমি বেড়েছে তার জন্য সঠিক পরিকল্পনা দরকার। সাগর ও ভূমির সঠিক সমন্বয়ে পরিকল্পনা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।