শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

সাকরাইন যেন আজই শুরু, উৎসবমুখর পুরান ঢাকা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

ছয় ঋতুর দেশে এখন চলছে শীতকাল; যা বাংলা মাসের হিসেবে পৌষের বিদায়ক্ষণ। বারো মাসে তেরো পার্বনের দেশে পৌষে শেষ দিনকে ঘিরে রয়েছে এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে যা সাকরাইন উৎসব হিসেবে পরিচিত থাকলেও, কেউ কেউ এটিকে পৌষ সংক্রান্তিই বলে থাকে।

পুরান ঢাকায় প্রতিবছরের ১৪ জানুয়ারি পালিত হয় সাকরাইন উৎসব। তবে শাঁখারিবাজারের আদি হিন্দু পরিবারগুলো একদিন পরে অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারিতে এ উৎসব পালন করে। তবে আজ থেকেই পুরান ঢাকাকে বেশ উৎসবমুখর মনে হচ্ছে।

বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট-বড় সকলেই মেতে উঠে এ উৎসবে। দিনের শুরু থেকেই পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠা বানানোর ধুম। সারাদিন এই সব এলাকায় আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। ছাদে কিংবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। অধিকাংশ সময়ে ঘুড়ি কাটাকাটি প্রতিযোগীতা চলে। একজন অপরজনের ঘুড়ির সুতা কাটার প্রতিযোগিতা করে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সাকরাইনকে সামনে রেখে পুরান ঢাকায় উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাগুলো সাকরাইন উৎসব পালন করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বেশিরভাগ বাসার ছাদে সাউন্ড-সিস্টেম, আলোকসজ্জা ও লাইটিং করে সাজানো হচ্ছে।

শাঁখারিবাজারের ঘুড়ি ও আতসবাজির দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। শাঁখারী বাজারের কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের আঁকার আকৃতির ঘুড়িগুলো এখানে তৈরি হয়। এদের নামও বেশ চমৎকার যেমন চোখদার, পানদার, বলদার, দাবাদার, লেজওয়ালা, পতঙ্গ ইত্যাদি নামের ঘুড়ি।

রঙ বেরঙের ঘুড়ি বেচাকেনা চলছে। ছবি: সংগৃহীত

রঙ বেরঙের ঘুড়ি বেচাকেনা চলছে। ছবি: সংগৃহীত

তারা আরও জানান, সাধারণ ঘুড়িগুলোর দাম ৫ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে, হরেক রকমের ডিজাইন করা ঘুড়িগুলোর দাম ১৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার বেশি হয়। এছাড়াও দোকানগুলোতে ভারত ও চায়নার ঘুড়িও পাওয়া যায়। তারা এই সাকরাইন উৎসব চলাকালীন সময়েই ঘুড়িগুলো নিজেরাই প্র‍য়োজনীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি ও আমদানি করে থাকে।

এবারের ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠানে ফানুস ও আতসবাজিতে বিভিন্ন স্থানে দূর্ঘটনা ঘটায় সরাসরি ফানুস ও আতসবাজি বিক্রি হচ্ছে না শাঁখারিবাজারে। তবে গোপনে চলছে বিকিকিনি। পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার এলাকার কয়েকটি গলির মাথায় ও দোকানের কোণে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ ও কিশোর। যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। কেউ কিনতে এসে খোঁজাখুঁজি করলে কোনো না কোনোভাবে টের পেয়ে যায় গলি ও দোকানের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো। তখনই চার-পাঁচজন এসে হাজির। গলির ভেতর ডেকে নিয়ে চলে দরদাম। এভাবেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে আতশবাজির বিকিকিনি।

শাঁখারী বাজারের ঘুড়ির দোকানী জনি সেন বলেন, বছরের শুরু থেকেই দোকানে সাকরাইনের জন্য সব ধরনের মালামাল উঠাইছি, বেশি কইরা উঠাইছি ঘুড়ি, আবির, সুতা, লাটাই। অহন বিক্রি একটু কম হইতাছে তই বৃহস্পতিবার অনেক বিক্রি হইবো আর এবছর লাভের হার একটু কমই হইতাছে। আবার ত শুরু হইছে সরকারের নিষেধ জারি তাই বেচাকেনা যা ছিল তাও কম হচ্ছে।

ঘুড়ি কিনতে আসা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি তিন ধরনের ঘুড়ি কিনেছি, সুতা-লাটাই আগে থেকেই আছে। বাসায় গিয়ে ঘুড়ির জন্য কিছুটা কাজ করব তারপর সাকরাইনের দুই দিন দুপুরের পর থেকে আমরা বাড়ির সবাই মিলে ছাদে ঘুড়ি উড়াব, গানবাজনা করবো।

এবারের সাকরাইনে ফানুস উড়ানো ও আতসবাজি ফুটানোর কোন বিধি-নিষেধ আছে কি-না জানতে চাইলে সুত্রাপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, এটা মূলত পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ডিএমপি কমিশনার স্যার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। প্রতিবারের মত ফানুস উড়ানো এবারও নিষিদ্ধ, তবুও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় উড়ানো হয়। আমরা এটা প্রতিরোধের চেষ্টা করবো।

ডেইলি বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com