সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় অবস্থিত পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে বর্তমানে দুইশর বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। অনেকেই আবার আশ্রয়ের আশায় দাঁড়িয়ে আছেন ক্যাম্পের সামনে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। চেহারায় স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ আর চোখে-মুখে অসহায়ত্ব। সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পটির গেটের এক পাশে গত ছয়দিন ধরে দিন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।
ভাষা শুনে বোঝা যায় তারা বাঙালি। জানালেনও তাই- বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। দালালদের হাত ধরে কাজের সন্ধানে এসেছেন সাইপ্রাসে। কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে ভিনদেশিদের কাছে নিজের পরিচয় দেওয়ার জন্য যে পরিচয়পত্র দরকার সেটিও নেই। মূল পাসপোর্টি ‘দালালেরা’ নিয়ে গেছেন। হাতে একটি পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে গেটের সামনে অপেক্ষা করছেন, যদি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আশ্রয় দেয় সেই আশায়।
কেন এভাবে অপেক্ষা করছেন জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘আমাদের ধারণা, সবাই বলে যে, বড় বড় স্যারেরা যখন আসবে তখন নেবে।’ সেলিম আসলে ক্যাম্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তার ধারণা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে পড়লে হয়তো এই ক্যাম্পটিতে আশ্রয় পাওয়া যাবে।
পাসপোর্ট নেই কেন?
নিজের পাসপোর্টের মূলকপি কেন সাথে নেই এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম বললেন, দালালেরা নিয়ে গেছে। সেলিমের সাথে থাকা আরেক বাংলাদেশির এনামুল হকের দাবিও তাই।
তাদের দাবি, উত্তর সাইপ্রাস থেকে চেক পয়েন্ট পাড়ি দিযে গ্রিস অধিকৃত সাইপ্রাসে আসার পথে দালালেরা তাদের পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। যদিও কেন তারা পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।
যেভাবে প্রতারিত তারা
সাত লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সেলিম। তিনি জানান, তাকে ও তার সহযাত্রী এনামুলকে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দুবাই নিয়ে আসে দালালেরা। এরপর আরো কয়েকটি দেশে যাত্রা বিরতি শেষে তাদের নিয়ে আসা হয় উত্তর সাইপ্রাসে। আর সেখান থেকে দালালেরা তাদের ঠেলে দেয় দক্ষিণ সাইপ্রাসে।
কোন কোন দেশ হয়ে নিয়ে আসা হয়েছে এ দুই অভিবাসন-প্রত্যাশী তা ঠিক বলতে পারেননি। শুধু এটুকুই বলতে পারলেন, মোট তিনটি যাত্রা বিরতি নিয়েছিলেন তারা।
ভালো কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ করা সেলিমদের দুর্ভোগের গল্পটি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। সাইপ্রাসে কী ধরনের কাজ তারা করবেন সে বিষয়েও ধোকা দেওয়া হয় তাদের।
সেলিম বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল আপেল বাগান বা রেস্টুরেন্টে কাজ দেওয়া হবে। ক্যাম্পে থাকতে হবে তা আমাকে বলা হয়নি।’ তার আগে যখন ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের কাছে প্রতারিত হওয়ার কথা জানান এই ক্যাম্পে থাকা আরও কয়েকজন বাংলাদেশি।