সেন্ট মার্টিন আমাদেরই থাকবে
চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের তরফ থেকে নতুন নিয়ম-পদ্ধতি করায় পর্যটক যাতায়াতে একটু বিলম্ব হয়।
ছেঁড়াদ্বীপ নিয়ে স্বস্তি
সেন্ট মার্টিন থেকে একটু দূরেই ছেঁড়াদ্বীপ। পর্যটকদের উৎপাতে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এতে সরকার ছেঁড়াদ্বীপে নৌযান গমন বন্ধ এবং পর্যটক যাতায়াতে বিধি আরোপ করে। এখন সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট থেকে ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশে আর কোনো নৌযান যাচ্ছে না। সেখানে রাতে পর্যটকদের বারবিকিউ পার্টিও হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের আয়ের পথ খুলেছে
সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত করায় স্থানীয়রা আবার রোজগারে ফিরেছেন। দ্বীপের প্রবেশদ্বারে শাহিন রেস্তোরাঁর মালিক ছালামত উল্লাহ বলেন, ‘দ্বীপে পর্যটক না থাকলে স্থানীয় পাঁচজন মানুষও দৈনিক হোটেলে খাবার খেতে আসে না; রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে হয়। এখন পর্যটক আসায় ভালো ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিবছর অন্তত চার মাস টানা পর্যটকদের দ্বীপে আসার সুযোগ হলে আমাদের ব্যবসা লাভবান হতো।’ একই অভিমত একাধিক ব্যবসায়ীর।
খাদ্য জুটেছে কুকুরের
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুঃখ-কষ্টে মানবেতর জীবন কাটিয়েছে, তবে তারা অন্তত নিয়মিত আহার পেয়েছে। কিন্তু পর্যটক আসা বন্ধ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় অনাহারে দিনের পর দিন কেটেছে দ্বীপের কুকুরগুলোর। গত সপ্তাহে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে দ্বীপে যায়। দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল বশর জানান, পর্যটক এলে দ্বীপে থাকা অসংখ্য কুকুরের খাবার জোটে। ৯ মাস পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় বেশি কষ্ট পেয়েছে কুকুরগুলো।
বিকল্প কর্মসংস্থান ভাবছেন স্থানীয়রা
দ্বীপের বাসিন্দাদের ধারণা ছিল, বর্ষা মৌসুম বাদে সারা বছর দ্বীপে পর্যটকদের আগমন ঘটবে। কিন্তু এ বছর দীর্ঘ ৯ মাস দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসীর চিন্তাধারাও বদলে গেছে অনেকটা। তারা এখন ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প পেশার কথা ভাবছেন।
শাহপরীর দ্বীপ থেকে জাহাজ ছাড়ার দাবি
কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছতে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা, যা বেশ বিরক্তিকর। লাকসামের ব্যবসায়ী আজিজ উদ্দীন বলেন, ‘চার বছর আগে একবার টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলাম। কম সময়ে পৌঁছা যেত।’
দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, শাহপরীর দ্বীপ থেকে জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ করা সম্ভব হলে এক ঘণ্টার কম সময়ে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন পৌঁছতে পারবেন।
স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে
কাতারপ্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ ডক্টর হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। প্রথমত, দ্বীপটাকে বাঁচাতে হবে। দ্বিতীয়ত, সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াতের সুযোগ রাখতে হবে। তবে সেন্ট মার্টিনের মতো একটি দ্বীপে এতগুলো দালান কিভাবে তৈরি হলো, আমার বোধগম্য হয় না। বহুতল ভবনের কারণে দ্বীপটির সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে, সেটিও ভাবতে হবে।’