বাঙালি আর বেড়ানো, অনেক কষ্টেও এই দুটি শব্দকে যেন আলাদা করা যায় না। ঘুরতে যেতে ভালো বাসে না এমন বাঙালি পাওয়াই বিরল। তবে মন চাইলেও লম্বা ছুটি অ্যাডজাস্ট করাটাই সবচেয়ে কঠিন একটা ব্যাপার। ব্যস্ত জীবন থেকে ক’দিনের আরাম খুঁজতে অনেকেই ছুটে যান দিঘা, মন্দারমণি কিংবা তাজপুর। এসব তো অনেক গেলেন, এবার ঘুরে আসুন হেনরি আইল্যান্ডে। শহর কলকাতার খুব কাছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে পড়ে চারিদিক সমুদ্রঘেরা এই দ্বীপ। এই এলাকার অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন জুড়িয়ে দেবে। একইসঙ্গে এখানে পাবেন সমুদ্র, ঝাউবন আর ম্যানগ্রোভের মিশেল।
কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। অল্প ক’দিনের ছুটি নিয়ে দিঘা, মন্দারমণি অনেকেই যান। কেউ বা যান পুরুলিয়া, শান্তিনিকেতন-সহ কাছেপিঠের অন্য কোনও জায়গায়। তবে এবার ঘুরে আসতে পারেন হেনরি আইল্যান্ডে। বঙ্গোপসাগর ঘেরা এই সমুদ্রতট আপনাকে অনাবিল এক আনন্দের খোঁজ দেবে। কোলাহল-মুক্ত নির্জন এই পরিবেশ আপনাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য নৈঃস্বর্গিক এক সুখের অনুভূতি এনে দেবে। হাতে দেড় থেকে দু’দিন সময় বের করে নিলেই কেল্লাফতে। ঝটিকা সফরে ঘুরে আসতে পারেন এই সমুদ্রতটে।
কীভাবে যাবেন হেনরি আইল্যান্ডে?
কলকাতা থেকে গেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে অথবা ধর্মতলা থেকে বাসে পৌঁছে যেতে হবে নামখানায়। আগে এখান থেকে বকখালি বা হেনরি আইল্যান্ডে যেতে গেলে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী পেরিয়ে যেতে হতো। তবে এখন সেই সমস্যা মিটে গেছে। নদীর উপর থেকে ব্রিজ তৈরি হয়ে গেছে। এখন নামখানা স্টেশন থেকেই বকখালি বা হেনরি আইল্যান্ডে যাওয়ার গাড়ি মিলবে।
হেনরি আইল্যান্ডে থাকার বন্দোবস্ত কী?
কয়েক বছর আগেও এখানে থাকার তেমন কোনও বন্দোবস্ত সেভাবে ছিল না। বকখালি থেকে গিয়ে ফের ফিরে আসতে হতো। কারণ সেই সময় সব হোটেল বা থাকার জায়গার বন্দোবস্ত বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জেই ছিল। তবে এখন সেই সমস্যা মিটেছে। হেনরি আইল্যান্ডেই মৎস্য দফতরের কটেজ রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি কয়েকটি হোটেলও আছে। নামমাত্র খরচেই সেখানে থেকে যেতে পারেন। কোনও হোটেলে থাকা-খাওয়া সমেত মাথাপিছু কমবেশি ১ হাজার টাকা করে নেয়। কোনও হোটেলে আবার শুধুই থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে খাওয়ার খরচ কিন্তু আলাদা দিতে হবে। তবে হেনরি আইল্যান্ডে হোটেল ভাড়া কম-বেশি হাজারের মধ্যেই।
হেনরি আইল্যান্ডে কী দেখবেন?
কলকাতার এত কাছে অসাধারণ এই সমুদ্র সৈকত একবার দেখলে সারাজীবনের মতো অমলিন এক স্মৃতি হয়ে থাকবে। নির্জন এই সমুদ্র সৈকত ঘিরে সবুজের সমাহার আপনার হৃদয়ে ঢেউ তুলবে। গভীর ম্যানগ্রোভ অরণ্যে চোখ রাখলেই নজরে পড়বে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া। একদিকে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি অন্যদিকে ঝাউবন আর ম্যানগ্রোভের মিশেল আপনাকে সতেজ করে তুলবে। তাই দিঘা, মন্দারমণি তো অনেক গেলেন, এবার মাত্র দিন দু’য়েকের ছুটি নিয়েই বেরিয়ে আসুন হেনরি আইল্যান্ডে।