রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

সবুজ পাহাড়ে সোনালি রঙ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জুমের পাকা ধানের গন্ধ ছড়াচ্ছে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদে। সবুজ পাহাড়ে যেন সোনালী রং লেগেছে। পাহাড়ে পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীদের লাগানো ক্ষেতে সোনালী রঙের পাকা ধান। কোথাও কোথাও আধাপাকা সবুজ সোনালী জুম চাষের ক্ষেত। ধানের পাশাপাশি লাগানো মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা, চিনাল, মরিচ, টকপাতা ইতিমধ্যে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জুমিয়ারা। ফসল ভালো হওয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবারের সকলে মিলে ফসল সংগ্রহ করছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার সাতটি উপজেলায় এবছর সাত হাজার নয়শ তেত্রিশ হেক্টর জায়গায় জুমচাষ করা হয়েছে। জুম চাষে সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চাল ১২ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন এবং ধান ১৮ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা প্রতিবছর বছরের জানুয়ারি– ফেব্রুয়ারি মাসে জুমচাষের জন্য নির্ধারিত পাহাড়ের ঝাড়জঙ্গল, গাছপালা কেটে ক্ষেতের জায়গা নির্ধারণ করে। কাটা জঙ্গল শুকানোর পর মার্চ–এপ্রিলে মাসে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে জমি প্রস্তুত করে। এপ্রিল মাস জুড়েই জুমের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ধানের বীজ বপনের জন্য অপেক্ষা করেন। প্রথম বৃষ্টির পরই জুমক্ষেতের জায়গায় জুমের ধানসহ সাথী ফসলের বীজ রোপন করে। যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর পরই জুমক্ষেতে বীজ লাগাতে পারেন, তাদের ধান আগাম পাকতে শুরু করে। প্রতিবছর আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয়।

এদিকে সেপ্টেম্বর–অক্টোবর পর্যন্ত ধানসহ ফসল ঘরে তোলার প্রক্রিয়া চলে। ধান ছাড়াও মিশ্র সাথী ফসল হিসেবে তুলা, ঠান্ডা আলু, যব, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা ফল, চিনাল ফল, আমিলাগুলো বীজ, মরিচ, তিল, বেগুন, সাবারাং, ধনিয়া পাতার বীজ, কাকন বীজ জুমের জায়গায় ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জুমের ধান কাটা, মাড়াই করা এবং শুকানোর পর পাহাড়ের জুমঘর থেকে গ্রামের ঘরে ধান স্থানান্তর করার পর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলে নবান্ন উৎসব।

ম্রো জনগোষ্ঠীর গবেষক সিইয়ং ম্রো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। জনগোষ্ঠী গুলোর জীবন ধারণ কৃষ্টিকালচারও ভিন্ন ভিন্ন। এমনকি তাদের চাষাবাদ পদ্ধতিও ভিন্ন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা পাহাড়ের ঢালুতে আদিপদ্ধতি অনুসরণ করে জুম চাষ করে। জুম চাষের মাধ্যমেই প্রত্যন্তঞ্চলের পাহাড়িরা এখনো জীবন–জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই চাষে কোনো সেচ দেওয়া লাগে না, প্রাকৃতিকভাবে রোদ–বৃষ্টিতে ফসল ফলে। তবে জুম চাষের পরিমাণ আগের চেয়ে কমছে আসছে। কারণ প্রতিবছর একি জায়গায় জুম চাষ করা যায় না। কমপক্ষে তিন চার বছর পর পর একেকটা পাহাড়ে জুম চাষ করতে হয়।

জুমচাষি দৈলাং ম্রো ও রেয়াংরি ম্রো বলেন, এবছর চারশ শতকের মত জায়গায় জুম চাষ করতে পেরেছেন তারা। এবার জুমের ধান তেমন ভালো হয়নি, কারণ যখন বৃষ্টির দরকার ছিল তখন হয়নি, আর যখন রোদ দরকার ছিল, তখন অতিবৃষ্টি হয়েছে। তারপরও ৪শ আড়ি ধান পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক এমএম শাহনেয়াজ বলেন, এবছরের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম এবং শেষেরদিকে অতিবৃষ্টির কারণে জুম চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। জেলায় জুম চাষিদের ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকার মতো। তবে যে সকল জুমক্ষেতের ধান এখনও পাকেনি সেগুলোর ভালো ফলন হবে। জুম চাষিদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় ফসলের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com