কেনাকাটা, দর্শনীয় স্থান, হাই-এন্ড রিসোর্ট, সাদা বালির সৈকত, কৃত্তিম দ্বীপ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিরাপত্তা প্রতি বছর লাখ লাখ ট্যুরিস্ট আকর্ষ্ট করে। আরব আমিরাত সরকার নিকট ভবিষ্যতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান করার জন্য দেশটির পর্যটন শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। তার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় নাম। তো চলুন দেখে নেই এই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর লিস্টে ৫ম স্থানে রয়েছে দুবাই মিউজিয়াম (Dubai Museum)। দুবাই এর অসাধারণ এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত আল-ফাহিদি দূর্গে যার নির্মাণকাল ১৭৮৭ সাল। এটি আরব আমিরাতের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প। মিউজিয়ামটির দেয়ালগুলো ঐতিহ্যবাহী কোরাল ব্লক দ্বারা তৈরি। উপরের তলাটি কাঠের পোল দিয়ে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর সিলিং তৈরি করা হয়েছে পাম ফ্রন্ট, প্লাস্টার এবং কাদা দিয়ে। মিউজিয়ামটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক মডেল প্রদর্শন করে যা তেলখনি পাবার আগে আমিরদের জীবনধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই যাদুঘরের গ্যালারিতে প্রাচীন কালের বিভিন্ন শৈল্পিক জিনিষ রয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকটি ৩০০০ বছরেরও আগের।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর লিস্টে পরবর্তী স্থানে রয়েছে বাসতাকিয়া (Bastakiya)। প্রাচীন দুবাই এর প্রতিনিধি এই বাসতাকিয়া এবং বর্তমান দুবাই তথা আরব আমিরাতের অন্যতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। দর্শনার্থীরা বাসতাকিয়া দেখার মাধ্যমে প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক আরবীয় স্থাপত্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারবেন। বাস্তাকিয়া’র উইন্ড টাওয়ারগুলি দেখে বুঝা যায়, কীভাবে প্রাচীন দুবাই এর মানুষের বিদ্যুৎ সরবরাহের আগে তাদের ঘরগুলোকে শীতল রাখতো। বাস্তাকিয়ার কিছু কিছু ঐতিহাসিক ঘর এখন জাদুঘর এবং গ্যালারি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর গ্যালারিগুলোতে দেখা যায় পুরনো পেইন্টিং, হ্যান্ডক্রাফ্টস সহ বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জুয়েলারী।
আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এর লিস্টে ৩য় স্থানে রয়েছে বুর্জ আল আরব (Burj Al Arab)। বুর্জ আল-আরব সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত একটি ৭ তারকা হোটেল। উচ্চতার দিক থেকে এটি বিশ্বের ৪র্থ হোটেল। সমুদ্রের তীর থেকে ২৮০ মিটার সমদ্রের ভেতরে কৃত্রিম দ্বীপের উপর হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণে বানানো হয়েছে এই ভবনটি। শেখ নাহিয়ানের পারিবারিক সম্পত্তি এই বুর্জ আল আরব যিনি আরববিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং শাসক। ডেইলি টেলিগ্রাফের বিলাসবহুল ভ্রমন বিষয়ক ম্যাগাজিন,আলট্রা ট্রাভেল-এর পাঠকদের ভোটে “বুর্জ আল আরব” পৃথিবীর বিলাস বহুল হোটেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। হোটেলটি “Best Hotel In The World” এবং “Best Hotel In Middle East” ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক দুটি পুরস্কার পেয়েছে। বুর্জ আল আরব নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এর লিস্টে পরবর্তী স্থানে রয়েছে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ (Sheikh Zayed Grand Mosque)। মসজিদটি অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের একটি আধুনিক নিদর্শন। এর অবস্থান আবুধাবি শহরে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটি ৩০ একর জমির উপর নির্মান করা হয়েছে এবং এখানে একসাথে ৪০,০০০ জন নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের অভ্যন্তরে সোনা, মোজাইক টাইলস, কাচ এবং মার্বেলের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আর বাইরের দিক তৈরি স্বেতপাথরের। আর কিবলার দেয়ালে চোখে পড়বে আল্লাহ্’র ৯৯ টি নাম।
নিঃসন্দেহে সংযুক্ত আরব আমিরাত এর সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হলো বুর্জ খলিফা (Burj Khalifa)। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কাইস্ক্রাপার বা গগনচুম্বী দালান। দালানটির উচ্চতা ৮২৯.৮ মিটার। স্কাইস্ক্রাপারটি বাড়ি, হোটেল এবং অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো দালানটির ১২৪ তলার উপরের অবজারভেশন ডেক। কিন্তু এতো উপরে উঠবো কিভাবে? আরে, এলিভেটর/লিফট আছে না। কিন্তু সময় তো লাগবে অনেকক্ষন?!
না না, বুর্জ খলিফাতে আপনি পাবেন বিশ্বের অন্যতম দ্রুত এলিভেটর/লিফট যা দ্রুত ১২৪ তলায় উঠে আপনাকে পৌছে দেবে অবজার্ভেশন ডেকে। ডেক থেকে ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে আপনি দেখতে পারবেন পুরো দুবাই – এক পাশে ধু ধু মরুভূমি আর এক পাশে ফেনীল সমুদ্র। আর রাতের দৃশ্য তো আরো নান্দনিক। ফটোগ্রাফাররা বিশেষ করে পছন্দ করেন এই সময়টি। কারণ রাতে রঙিন আলোয় ঝলমলে দুবাই শহর আর তার রাস্তাগুলো সৌন্দর্য্যের এক নতুন দরজা খুলে দেয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান: দুবাই ক্রিক, দুবাই মিরাকল গার্ডেন, মরুভূমি, হাজার পর্বত, ফেরারি ওয়ার্ল্ড, দুবাই শপিং মল, এমিরেটস প্যালেস, শারজা আর্টস মিউজিয়াম ইত্যাদি।