ষাটগম্বুজ মসজিদ – প্রাচীন নগরী খলিফাতাবাদের নিদর্শন

নাগরিক জীবনের ক্লান্তি কাটাতে ভ্রমণের চেয়ে ভালো কিছু আর নেই। কিন্তু কোথায় যাবেন সেটা ঠিক করতে পারছেন না, তাইতো? আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন খুলনার বাগেরহাট থেকে। খোলামেলা এই এলাকায় ঘুরে বেড়াতে আপনার মন্দ লাগবে না।

বাগেরহাট পনেরশ’ শতকে প্রাচীন নগরী খলিফাতাবাদ নামে পরিচিত ছিল। শহরটির অন্যতম নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি খান জাহান আলী নামে এক সুফিসাধক ও যোদ্ধার নির্মিত এক শহরের অংশ। মসজিদটি দেখলে আলাদা এক প্রশান্তি ও আনন্দের ভাব জেগে উঠবে আপনার ভেতরে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ হিসেবে এখন দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে এখানে। তাহলে আপনি কেন ঘরে বসে থাকবেন? আর দেরি না করে আপনিও ঘুরে আসুন ইতিহাসের স্বাক্ষি এই ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে।

ধারণা করা হয়, পনের শতাব্দিতে সাধক খান জাহান আলী এটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি বহু বছর ধরে অনেক টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ছয় সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো। শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। নামে ষাট গম্বুজ হলেও এই মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা ৮১।

অন্যসব পুরাকৃর্তীগুলোর মত এই ষাটগম্বুজ মসজিদ কিন্তু পরিত্যক্ত হয়ে যায়নি। এখনো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে মুসল্লিরা এখানে আসছেন। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন পর্যটকরাও। সেই পনেরশ’ শতক থেকে খান জাহান আলী, তার যে রাজত্ব ছিল সেটার যে মূল প্রাণকেন্দ্র ছিল ষাটগম্বুজ মসজিদ। মসজিদটি এখনও তার সেই প্রাণ ঠিকই ধরে রেখেছে।

স্থাপত্যিক নিদর্শন হিসেবে ও বিশ্বজনীন গুরুত্ব থাকায় ১৯৮৫ সালে মসজিদটিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদের কথা ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে সবারই পড়া। তারপরও পোরামাটির গাথুঁনিতে লতা-পাতা, কারুকার্যময় পনের শতকের এই স্থাপত্যটি যে বিশাল ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, সেটি দেখতে নিশ্চই একদিন যাবেন বাগেরহাটে।

কীভাবে যাবেন:

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাস করে বাগেরহাটে যাওয়া যায়। এছাড়া মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে লঞ্চ বা ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে কাঁঠালবাড়ি থেকে বাসে করেও বাগেরহাটে যেতে পারেন। এই সড়কটাও বেশ চমৎকার। আবার গাবতলী থেকেও বাগেরহাটে যাওয়ার বাস ছাড়ে। তবে বাগেরহাটে থাকার ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। দু-একটা সাধারণ মানের হোটেল আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: