রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার এপিএস লিকুর সম্পদের পাহাড়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে কমিশন বাণিজ্য এবং প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন গাজী হাফিজুর রহমান (লিকু)। মূল বেতন পাঁচ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে শুরু। এরপর দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। শুধু নিজের নামে নয়, স্ত্রী-শ্যালক ও আত্মীয়-স্বজনের নামে বিঘার পর বিঘা জমি এবং ডজনখানেক বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, নিজেকে আড়ালে রাখতে সব ধরনের ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। দালিলিকভাবে নিজ নামে সম্পদ কম দেখিয়ে বেনামে গড়ে তুলেছেন অধিকাংশ অবৈধ সম্পদ। এ ছাড়া ভিয়েতনামে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন, শ্যালককে সেই দেশের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বর্তমানে পালিয়ে শালা-দুলাভাই দেশটিতে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা অনুসন্ধানেও তার বিরুদ্ধে কয়েক-শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। বাস্তবে যার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এপিএস লিকুর যত সম্পদ

গাজী হাফিজুর রহমান (লিকু) ২০০৯ সালে অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পর ২০১৯ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। গোপালগঞ্জের কর অঞ্চল-৪ এর করদাতা তিনি। মোট ভাই পাঁচজন।

২০২৩ সালে এপিএস হিসেবে বাদ পড়ার পর সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। সেখান থেকে ভিয়েতনামে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।লিকু প্রথম আয়কর প্রদান করেন ২০০৯-২০১০ করবর্ষে। তার আয়কর ফাইলে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ করবর্ষে মূল বেতন ৬৭ হাজার ১০ টাকা, নিট আয় নয় লাখ পাঁচ হাজার ৪৪৪ টাকা এবং নিট সম্পদ এক কোটি চার লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেখিয়েছেন।

আয়কর রিটার্নের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ৬০ লাখ ২১ হাজার ২৮৮ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২০২৩ সালের ২৫ জুন স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া মেটলাইফ এলিকোতে ২৮ লাখ টাকার পলিসির সন্ধান পেয়েছে দুদক।

রাজধানী ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলায় ‘মধু সিটিতে’ এক বিঘা জমির ওপর ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন লিকু। যার মূল্য কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকার আদাবরের ৬ নম্বর রোডের ৫৮৩ নম্বর বাড়ির এ-৬ ফ্ল্যাটটি তার স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে। ওই বাড়ির মালিক নজরুল ইসলাম রহিমা আক্তারের বন্ধু বলে জানা গেছে। ২৫ মিতালী রোড, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক, ধানমন্ডি, ঢাকায় লিকুর বেনামে আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। স্ত্রী ও অন্যদের নামে অর্ধডজন প্রাইভেট গাড়ি ও মাইক্রোবাসের খোঁজ পাওয়া গেছে।

লিকুর স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন রামদিয়াতে ‘মেসার্স রাফি অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ’ নামের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার জমির পরিমাণ ৪৭১ শতাংশ এবং দালিলিক মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।

খুলনা-ঢাকা-সাতক্ষীরা-গোপালগঞ্জ রুটে ‘ওয়েলকাম এক্সপ্রেস’ নামে ৪২টি যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করছে। এর মধ্যে সাতটি গাড়ি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। গাড়িগুলো টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কালু ও তার যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে ওয়েলকাম বাস সার্ভিসেও তার শেয়ার রয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন কুশলা ইউনিয়নসহ গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন কাজুলিয়া গ্রামে ৪০০ বিঘা জমিতে মৎস্যঘের রয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন থানাপাড়া রোডে পৈত্রিক জমিতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। যার মূল্য দুই কোটি টাকা।

জানা যায়, লিকুর শ্যালক শেখ মো. ইকরাম ওরফে হালিম মোল্লা। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে মূলত হুন্ডি ব্যবসা করতেন। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি ভিয়েতনামে বসবাস করেন। গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর সব অবৈধ অর্থ বৈধ করার কাজে তিনি সহযোগিতা করেন। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। নিজ বাড়ির পাশে থানাপাড়া রোডে অনির্বাণ স্কুলের দক্ষিণ পাশে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন লিকু। সেখানে তার শ্বশুর-শাশুড়ি বসবাস করছেন।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকুড় নিলের মাঠের পাশে ১৩ শতাংশ জমির ওপর শ্যালক শেখ মো. ইকরাম ওরফে হালিম মোল্লার নামে (বেনামে) ১০তলা কমার্শিয়াল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন। যা ‘স্বর্ণা টাওয়ার’ নামে পরিচিত। জানা যায়, হালিম মোল্লা তার স্ত্রী স্বর্ণা খানমের নামে এটি গড়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লিকুর সেজ ভাই গাজী মুস্তাফিজুর রহমান দিপুর নামে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার লাইট হাউজের পাশে ‘ওশান ব্লু’ নামের রিসোর্ট রয়েছে। এটি মূলত গড়েছেন লিকু। সেখানে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানেরও শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গোবরা নামক স্থানে লিকুর শ্যালক হালিম মোল্লার শ্যালক রিপন ফকিরের নামে ১৫ শতক জমিতে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে। একই ওয়ার্ডে হালিম মোল্লার অপর শ্যালক মিল্টন ফকিরের নামে তিনতলা বাড়ি এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকুড় নামক স্থানে নিলের মাঠের পাশে ১০ শতাংশ জায়গায় একতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।

লিকুর আপন ছোট ভাই গাজী শফিকুর রহমান ছোটনের নামে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ শতাংশ জমি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যালকের নামে সোয়া কোটি টাকার সাত কাঠা জমি, গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম মোড়ে স্ত্রী রহিমা বেগমের নামে ৮ শতাংশ ও ১০ শতাংশ বসতভিটা, গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ বিঘা জমি, ভায়রাভাই ওমর আলীর নামে পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চারতলা বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com