দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করে আসছেন। ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতার পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে কে এম নূরুল হুদা কমিশন মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারীতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন আবার সেই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে দূতাবাসের সহযোগিতায় ইসির কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের পরই প্রবাসীদের ভোটার করবেন। পরে ভোটারদের স্মার্টকার্ডও দেওয়া হবে।
আগামী মাসের যেকোনো সময় এ কাজের জন্য ইসির প্রতিনিধিদল দুবাই যাবে। ইসি’র একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘অনেক প্রবাসী জমির নিবন্ধন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ দৈনন্দিন কাজে নানা ঝামেলা পোহাচ্ছেন শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে। এজন্য আমরা প্রবাসীদের ভোটার করতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথম ধাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ইসির একটি টিম আগামী মাসেই দুবাই যাওয়ার কথা রয়েছে।’
১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দিলেও দীর্ঘ ২২ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। বর্তমান কমিশনের উদ্যোগে প্রবাসীদের ভোটার করলে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, সাংবিধানিক এই সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান), শ্রমিক পাঠানো সংগঠন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি করতে চাইছে। প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় গত ২২ ফেব্রæয়ারি বুধবার ইসি সচিবালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা ও নির্বাচনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ সংক্রান্ত ওই বৈঠকে কমিটির প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ (অপারেশন্স) অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্রমতে, ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এখন চলছে পর্যালোচনা। যাচাই- বাছাইয়ের পর প্রস্তাবটি এনআইডি উইং নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করবে। এরপর কমিশন সভায় পাস হলেই দুবাই যাবে ইসির প্রতিনিধিদল। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা বাঙালিদের ভোটার করার প্রক্রিয়া শুরু করবে ইসি। প্রতিনিধিদল দুবাই গিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা নিয়েও জটিলতা কেটে গেছে বলে সূত্র জানায়।
সূত্রের মতে, দুবাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন যাবতীয় খরচ বহন করতে রাজি হওয়ায় এই প্রক্রিয়া দ্রæততার সঙ্গে এগোচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ৪০০ জন, সৌদি আরবের ১৩০০, সিঙ্গাপুরে ২৬৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০৪০, যুক্তরাজ্যের ৭৭৪ ও মালদ্বীপের ৩৬ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, দেশে স্থানীয়ভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইসির দিক থেকে বিদেশি মিশনে গিয়ে কাজ শুরুর জন্য ‘ডিও লেটার’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাতে সায় মেলেনি। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে। কিন্তু ভোটার নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যেতে না পারায় আটকে যায় প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কার্যক্রম। এবার দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সেই বাধা কাটল বলে একাধিক কর্মকর্তার দাবি।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করতে ১/১১ সময়কার ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদও কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন।