শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন
Uncategorized

শিমলা-মানালী ট্যুর

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

স্বল্প সময় এবং ১০k রুপীতে(চাইলে আরও কমাতে পারেন কারন এটা একদম বাজেট ট্যুর না,মোট ১০k BDT তেও ঘুরে আসতে পারবেন।, ঘুরতে ট্যাক্সির খরচ কম করলে, খাওয়া খরচ কম করলে এবং হোটেল খরচ পার হেড ২০০ তেও থাকা সম্ভব তাহলে ৮k তে হয়ে যাবে) তুষার আবৃত, পাহাড়ি অপরুপ সৌন্দর্যের শিমলা-মানালী ট্যুর(কলকাতা-কালকা-শিমলা-মানালী-দিল্লী-কলকাতা)।(খরচটা উল্লেখ করে যাচ্ছি, প্রয়োজনে আপনারা যোগ করে দিন অনুসারে খরচ বের করে নিতে পারেন। গিয়েছিলাম ৫ জন, জন প্রতি খরচ দেওয়া হল, আর ৩ মাস আগের ট্যুর সুতরাং ছোটো খরচে ৫-১০ রুপি কম বেশী হতে পারে )।

দিন-১
বাড়ি নড়াইল হওয়ার সুবাদে যাত্রা শুরু হয়েছিলো বাসে করে বেনাপোল এ রওনা দেওয়ার মাধ্যমে। এবং বেনাপোল গিয়ে অন্যদের সাথে দেখা। দুপুর এর খাওয়া বেনাপোল এ সেরে, ভ্রমন ট্যাক্স(৫০০ টাকা) পরিশোধ করে Immigration এর ঝামেলা(দালাল না ধরলেও ২০ টাকা দিয়ে ফরম পুরন করিয়ে নেওয়া ভালো), টাকা ভাঙ্গিয়ে যখন ইন্ডিয়ার সাইডে পৌছালাম তখন ঘড়িতে ৪ টা ৩০. সবাই টাকা নিয়ে গেছিলাম এবং রুপী করে নিয়ে ছিলাম, একজন শুধু মাত্র ডলার নিয়ে গেছিলো। যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো দ্রুতই অটো তে করে বনগা স্টেশনে পৌছালাম ( ৩০ রুপী জন প্রতি)। বনগা হতে শিয়ালদহে র টিকিট করে বনগা লোকাল এ উঠে পড়লাম(১৫ টাকা)। শিয়ালদহে যখন পৌছালাম ৭ টা ৪০. ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মারকুইস স্ট্রিটে ( ২৫ টাকা পার হেড)। ৫ জন গেলে একটা ঝামেলাই পরবেন যে ট্যাক্সিতে ৪ জন উঠানোর পারমিট, ৫ জন উঠাতে চাই না। গিয়ে একটি ডাবল রুমের হোটেল এ উঠে পড়লাম যদিও তিন জন ছিলাম(ভাড়া পার হেড ৩৬৬ টাকা). রুমে ব্যাগ রেখে গোসল করে বের হয়ে খালেক হোটেল থেকে রাতের খাওয়া সেরে নিলাম চিকেন বিরিয়ানি দিয়ে(৭০ টাকা)। তারপর মারকুইস স্ট্রিটে রাতে ঘুরতে এবং প্রয়োজনীয় কিছু কিনলাম।সাথে কাবাব ও চাও খেলাম। যারা মদ খান, চাইলে ১০ টার আগে এক বোতল কিনে হোটেলে নিতে পারেন :p। ১২ টাই হোটেলে ফিরে ঘুম। মাঝে বনগা স্টেশনে হালকা নাস্তা করেছিলাম বিস্কুট, কেক দিয়ে( ৩০ টাকা)।

দিন-২
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রওনা দিলাম টিকিট কাটার জন্য ফেয়ারলি প্লেস এর উদ্দেশ্যে টাক্সি করে( ২০ টাকা)। পৌছে রাস্তার সাইড থেকে লুচি, সবজি, চাটনি, চা দিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম(২০ টাকা)। ৯টা ৩০ এ অফিস খোলার পর ফরম নিয়ে পুরন করে, সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা। সিরিয়াল আসার পর হাওড়া – কালকা টিকিট করে (৭০৫ টাকা-সিলিপার ক্লাস) হোটেলে ফিরলাম ট্যাক্সি করে (২০ টাকা)। ফিরে গোসল করে কলকাতা ঘুরতে বের হওয়া। তার পুর্বে চেক আউট করে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগ সব তাদের লকারে রাখি।সারাদিন কলকাতা ঘুরে ৬ টায় হোটেলে ফিরে( ১২০ টাকা চ্যাক্সিতে, ১০০ টাকা দুপুরের খাওয়া) ফ্রেস হয়ে ব্যাগ নিয়ে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা টাক্সি করে (৫০ টাকা)। ৯নং প্লাটফরম থেকে কালকা ছাড়ে ৭ টা ৪০এ। চাইলে কিছু খাবার কিনে নিয়ে উঠতে পারেন বা উঠেও কিনে নিতে পারেন। তারপর ট্রেনে উঠে বাজেট অনুসারে নিজে বুঝে যাবেন আপনি কি খাবেন। পরটা, লুচি, রাজমা, বিরিয়ানি অনেক কিছু পাবেন।( ৮০-১০০ টাকা রাতের খাবার)। আপনার বার্থে উঠুন এবং ঘুমিয়ে পড়ুন।

দিন-৩
সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে জানালার পাশে বসে বাইরে দেখতে পারেন সত্যি বলতে দেখার তেমন কিছু পাবেন না এখানে বরং বিহারের ভেতর থাকলে বাইরে না তাকানো ভালো। দিনটা কেটে যাবে ট্রেনে।খাবার কি খাবেন বাজেট অনুসারে বুঝে যাবেন।( ২৫০ টাকা খাওয়া পুরো দিনের)।

দিন -৪
লেট না থাকলে ভোরে ৪ /৫ টার দিক পৌছে যাবেন ছোটো,সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা কালকা স্টেশনে। নেমে সেখানে টয় ট্রেন পাবেন এবং তার টিকিট ফেয়ারলি প্লেস থেকে কেটে আসবেন। শিবালিক এক্সপ্রেস – কালকার সাথে কানেকটেড(৪৫০ টাকা ভাড়া, নাস্তা সংযুক্ত)। যদি ট্রেন বেশী লেট হয় এবং মিস করেন টয় ট্রেন তাহলে টাকাটা নষ্ট হবে। কালকা স্টেশনে নেমে ওয়েটিং রুম থেকে ফ্রেস হয়ে টয় ট্রেনে উছে পড়ুন। এবং এটা আপনার জীবনের অন্যতম সেরা জার্নি হবে। পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া, মাঝে মাঝে টানেল, পাহাড়ের গা দিয়ে বানানো বাড়ি, চার দিকের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সিমলাতে যদি স্নোফল হয়( যদিও সম্ভাবনা কম) তাহলে উপরের দিক গিয়ে পাহাড়ের গায়ে, গাছে, চারদিকের শুভ্র তুষার আপনার মন কেড়ে নিবে। ৪ ঘন্টা মত লাগবে সিমলা পৌছাতে। যদি শীতের সময় যান চমকে যাবেন ট্রেন থেকে নেমে, ঠান্ডা বাতাসের কোমল ছোয়ায় কেপে উঠবেন এবং দ্রুতই শীতের কাপড় পড়তে বাধ্য হবেন। যদি স্নো ফল হয়ে থাকে আগে তাহলে দেখবেন রাস্তার পাশে চার দিক তুষার আবৃত এবং কনকনে ঠান্ডা। মলরোডের পাশে অনেক হোটেল পাবেন। দেখে শুনে বাজেট অনুসারে নিয়ে নিতে পারেন।আমরা নিয়ে ছিলাম ১০০০ টাকায় তিন জনের( ৩৩৩ টাকা পার হেড). দিন টা মল রোড আশে পাশ দিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। ভাত খেতে গেলে আপনাকে বেশ মূল্য চোকাতে হবে, রুটি বা ফাস্ট ফুড খাওয়ায় ভালো।দুপুরের খাওয়া সেরে নিন(১০০ টাকা)। তারপর ঘুরে দেখুন আশে পাশে। কপাল খারাপ হলে আমাদের মত ইলেকট্রিসিটি, হিটার, গরম পানি বিহীন সময় কাটানো লাগতে পারে কারন আগের দিন তুষার ঝড়ে ইলেকট্রিকের তার ছিড়ে গিয়েছিলো।মল রোডে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সাদা কিছু পড়তে দেখলাম বুঝলাম এটাই স্নোফল আস্তে আস্তে বাড়লো। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম অপরুপ সৌন্দর্যের স্নোফল, সিমলাতেই পেয়েছিলাম আমরা স্নোফল। এমন তিন বার পেয়েছিলাম হঠাৎ ই আকাশের উজ্জ্বলতা কমে স্নোফল শুরু। সাবধানে হাটবেন অবশ্যই নাইলে পড়ে যাবেন। রাতেও আশে পাশে ঘুরে দেখুন, খাওয়া সেরে নিন ১০০ টাকার ভেতরে। রাতে মল রোড বা আশে পাশের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের মত না। রাতে চাইলে মদ কিনে রুমে ফিরতে পারেন।

simla
দিন-৫
পরদিন সকালে উঠে আপনি চাইলে ট্যাক্সি নিয়ে কুফরি বা ফাগু ঘুরে আসতে পারেন, আমরা পেরেছিলাম না কারন অতিরিক্ত স্নোফলে রাস্তা অফ ছিলো, গিয়ে ফিরে এসেছিলাম।বের হওয়া আগে চেক আউট করবেন, কিছু টাকা দিয়ে ব্যাগ লকারে রেখে আসবেন। সিমলার পুরাতন বাস স্ট্যান্ডের পাশে ট্যাক্সি পাবেন। জন প্রতি প্রায় ৫০০ টাকা যাবে ঘুরতে। ঘুরে এসে নেমে হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে ফ্রেস হয়ে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড থেকে নতুন স্ট্যান্ড আসুন বাসে করে( ৭ টাকা ভাড়া)। সেখানে মানালির বাস পাবেন, টিকিট আপনি মল রোড থেকে কেটে আসতে পারবেন। শেষ বাসটি ৯ টা ৩০ বা ১০ টার দিক ওটাই উঠাই ভালো। তিন বেলা খাওয়া ৩০০ টাকা। HRTC বাসে ভাড়া ৩০০ বা তার আশেপাশে পড়বে। সারারাত বাসে। রাস্তার পাশের সৌন্দর্য দেখতে হলে দিনে যেতে পারেন।

দিন-৬
ভোরে পৌছে যাবেন অনাবিল সৌন্দর্যে পরিপুর্ণ তুষার আবৃত শহর মানালিতে। আপনার সঠিক ভাবে ঘুরো দেখতে ৩ দিন লাগবে যদি সব স্পট খোলা থাকে। আমাদের এক দিনে হয়ে গেছিলো কারন রোথাং ও সোলাং বন্ধ ছিলো। মল রোডের আশে পাশে হোটেল দেখে ১০০০ -১৫০০এর ভিতর নিয়ে নিন। আমদের লেগেছিল ৩৩৩ টাকা পার হেড।ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে ট্যাক্সি নিয়ে(৫০০ টাকা) আসে পাশের সব স্পট ঘুরের দেখার মাঝে দুপুরের খাওয়া সেরে নিন( ১২০ টাকা)। ঘুরে সন্ধায় বাস স্ট্যান্ডে নামুন এবং দিল্লী টিকিট নিন(৮০০ টাকা মতোপড়বে)। ডিনার সেরে উঠুন( ১০০ টাকা)। স্পট খোলা থাকলে একদিন আশে পাশের স্পট দেখুন একদিন রোথাং একদিন সোলাং এবং সন্ধ্যায় ফিরে এভাবে বাসে উঠুন। রাত বাসে।

দিন-৭
সকালে কাশ্মীর গেট স্ট্যান্ডে নামবেন। ট্যাক্সি নিয়ে জামে মসজিদ এলাকায় গিয়ে ১০০০ টাকার কোনো হোটেলে উঠুন। ফ্রেস হয়ে বের হন ট্যাক্সি (৪০০ পার হেড)নিয়ে কুতুব মিনার, রেড ফোর্ট ঘুরে আসুন ফেরার সময় নিউ দিল্লী স্টেশন থেকে কলকাতার টিকিট করে আসুন পুর্ভা বা কালকার বা রাজধানীর(৬৫০পূর্ভা বা ২৭০০ রাজধানীর জন্য) আপনার বাজেট এর উপর ডিপেন্ড করে।খাওয়া খরচ ২৫০ টাকা।

দিন -৮
চাইলে আগ্রা ঘুরে আসতে পারেন আমি আগে গেছিলাম বলে যায় নাই।হোটেলে বল্লে ব্যবস্থা করে দিবে ১০০০ বাজেট এ। আলাদা গেলে আরো কমে পারবেন। হোটেল ভাড়া (৩৩৩ টাকা) দিন এর।রাত হোটেল এ। খাওয়া মাঝে মাঝে যুক্ত থাকে আগ্রা ট্যুর এর, নাহলে ২৫০ খেতে।

দিন -৯
চেক আউট করে বের হয়ে ট্যাক্সি(৫০০টাকা) নিয়ে ইন্ডিয়া গেট, হুমায়নস টম্ব আর দুই একটা স্পট ঘুরে, সময় অনুসারে ট্রেনে উঠুন এবং কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিন। আমি দুরন্তে এসেছিলাম। খাওয়া ২৫০.

দিন-১০
কলকাতায় এসে, যেভাবে এসেছেন সে ভাবে ফিরে আসুন

দিন-১১
বাংলাদেশে ফিরলেন এবং বাড়ি।১০ তম ও ১১ তম দিনটা আপনি কোন ট্রেনে আসবেন তার উপর নির্ভর করবে। ১০ম দিনেও ফিরে আসতে পারেন কিন্তু বর্ডার ৬ টাই অফ হয়ে যাই, আগের বার ফ্লাইটে এসেছিলাম সেটাই দিনের দিন ই ফিরে এসেছিলাম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com