শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

শান্তি নিকেতনে একদিন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩

প্রথমবার বাসে কলকাতায় যাওয়া হল। দুবোন মিলে ১৪ ডিসেম্বর রওনা হয়ে ১৫ তারিখ কলকাতায় থেকে ১৬ ডিসেম্বর হাওড়া থেকে শান্তি নিকেতন এক্সপ্রেসে চেপে দুপুরের নাগাদ বোলপুর স্টেশনে পা রাখলাম।

এখানে চারপাশে প্রকৃতির খেলা। অনেক ভালো ও সুন্দর রিসোর্ট আর বাংলো থাকলেও আমরা টোটোতে চেপে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাই প্রকৃতি বাংলো’তে।

আমার দেশের ব্যাটারিচালিত অটো-রিকশাকে এখানে টোটো বলা হয়। টোটো ড্রাইভারের নাম লাল্টু। ড্রাইভারের নাম লাল্টু শুনে বেশ মজা পেলাম।

শহরের শেষ প্রান্তে বন বিভাগের প্রকৃতি বাংলোতে পৌঁছে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। শহর থেকে এসে এমন প্রকৃতির কোলে যে কোনো মানুষের মনে আনন্দ হবেই। প্রকৃতি বনবাংলোতে মোট চারটা কটেজ; প্রতিটি ডুপ্লেক্স।

আমাদের থাকার কটেজেরে রুম দুটির নাম ছিল রাঁধাচূড়া ও কৃষ্ণচূড়া। আমরা ছিলাম কৃষ্ণচূড়াতে। চমৎকার ঘর, এটাচড বাথ, সামনের খোলা প্রান্তর দেখার জন্য বারান্দা।

কটেজের কেয়ারটেকার স্ত্রীসহ পাশেই থাকেন। খাবারের ব্যবস্থা তারাই করে দেন।

উন্মুক্ত প্রান্তের মাঝে মাঝে কেয়ারি করা ফুলের গাছ, নানান ক্যাকটাসও আছে। তাতেও ফুলের সমারহ। আমরা এসেছি শীতের শুরুতে। তবে নিম্নচাপের জন্য বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, আর কি যে ঠাণ্ডা!

বনবাংলোর চারপাশে পাখির কিচিরমিচির মিলে সব কিছু অসাধারণ।

আগে থেকে বলে না রাখলে রান্না করেন না কেয়ারটেকার। সেজন্য দ্রুত তৈরি হয়ে লাল্টুর টোটোতে চেপে ‘রামশ্যাম’ নামের আরেক রিসোর্টের রেস্তোরাঁয় খেতে চলে গেলাম।

আজ আধাবেলা ও পরের সারাদিন শান্তি নিকেতন দেখাবে লাল্টু, সব মিলিয়ে ভাড়া ঠিক হল আটশ টাকা।

রামশ্যামে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যাই খোয়াই ঘাট। সেদিনের মতো আমাদের বেড়ানো ছিল খোয়াই ঘাট ও খোয়াই ঘাটের অন্যহাটের কেনাকাটা।

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বনবিভাগ এখানে রাস্তার সব আলো নিভিয়ে দেয় বলে মনে হলেও আসলে কোনো লাইটপোস্ট নেই। এখানে এমনিতেই সব কিছু নিঝুম সন্ধ্যার পর, রাজ্যের নীরবতা নেমে আসে। তাই আমরা আগেভাগেই প্রকৃতি-বাংলোর পথ ধরি।

পরদিন ঘুম ভাঙলো বোনের দেওয়া জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। কথা বলতে বলতে বারান্দায় যাই। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও শীতের দিনেও সবুজ প্রকৃতি বন উদাস করে তোলে। এর মধ্যেই লাল্টুর ফোন। আমরা দ্রুত তৈরি হয়ে বের হই। আজ আমাদের শান্তি নিকেতনের দিন!

প্রথমে চলে যাই কঙ্কালিপাড়া। কালি-মায়ের কঙ্কাল পড়েছিল এখানে, সে জন্য এই নাম। তারপর শান্তি নিকেতনের গা ঘেঁসে বয়ে চলা কোপাই নদীর তীরে ঘুরেফিরি। তেমন বিশাল নদী না। আমরা তবু অনেকটা সময় কোপাইর তীরে সময় কাটিয়ে প্রান্তিকে চলে এসে নাস্তা করি।

তারপর ঘুরে দেখি পুরো শান্তি নিকেতন। স্বপ্নপূরণ বলা যায়। দেখি কাচ মন্দির, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস, উত্তরায়ণসহ কবিগুরুর নির্মিত পাঁচটি ঘর- উদয়ন, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ ও উদীচী। আর অবশ্যই ছতিম-তলা।

দুপুর বারোটায় মিউজিয়ামে গিয়ে বন্ধ পাই। দুইটার পর খুলবে। সে সময়টুকু আমরা দেখে আসি সৃজনী। তারপর রামশ্যাম রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেয়ে মিউজিয়াম দেখি। সেখান থেকে চলে যাই খোলামাঠের হাটে।

এখানে দুটো হাট বসে। একটা ছোট ও আরেকটা বড়হাট। হাটে বিক্রি হয় নানান হস্তশিল্প সামগ্রী।

আগেই বলেছি বনবিভাগ রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা নেই; নিঝুম প্রকৃতি উপভোগের জন্য। এখানের নিয়ম হাটবাজারও সন্ধ্যার পর আলো জ্বালা চলবে না। তাই সন্ধ্যার পরপরই হাটও শেষ।

আমরা শান্তি নিকেতনকে বিদায় বলে চলে আসি বাংলোতে। তার আগে অবশ্য কেনাকাটার জন্য আমারকুটিরে ঢুঁ দেই। গানও শুনি।

সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টি ছিল। সন্ধ্যায় ফিরে দেখি বিদ্যুৎ নেই। ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করতে বাংলোর ম্যানেজার জানালো, তার ছিঁড়ে গেছে। আজ রাতে আর ঠিক হবে না। তাই রাতের খাওয়া দাওয়া সব কিছু মোমের আলোতেই করতে হল।

বিনে পয়সায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার-ই হল বলা চলে।

শান্তি নিকেতনটা আসলে শান্তির জায়গা। হইহুল্লুড় নেই, বাস-গাড়ির শব্দ নেই। মানুষজনগুলোও শান্তিপ্রিয়; চুপচাপ।

সন্ধ্যা ৬টা বাজতে না বাজতেই সব আরও নিশ্চুপ। আমরা দুইবোনও খেয়েদেয়ে ঘুম।

এই হলো আমার ২০১৮’র জন্মদিন ও প্রিয় শান্তি নিকেতন দেখা! সামনে বসন্তোৎসব হবে। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।

এখানে থাকার অনেক ভালো ভালো বাংলো ও রিসোর্ট আছে। উৎসব ছাড়া আগে থেকে বুকিং দিতে হয় না। তবে শান্তি নিকেতন এক্সপ্রেসের টিকিট আগে থেকেই কাটতে হয়। দুদিন হাতে নিয়ে গেলে শান্তি নিকেতনের সবই দেখে আসতে পারবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com