দিনপঞ্জির হিসাবে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। নদী-নালায় উপচে পড়ছে পানি। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নৌকার গলুইয়ে মৃদুমন্দ ছলাৎ ছলাৎ। ব্যস্ত নাগরিক মন হারাতে চায়। এ সময়টায় নৌকায় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন অনেকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর এমনই কিছু জায়গার খবর থাকল।
ভ্রমণ শুরু: পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরের শিমুলিয়া ট্যুরিস্ট ঘাট ও ব্রাহ্মণখালী ঘাট
কত দূরে: গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে
কী ধরনের নৌযান: শীতলক্ষ্যা নদীর এই স্থানে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইয়ট, লঞ্চ ও ক্রুজ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার।
কী দেখার আছে: এসব নৌযান ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া নিয়ে নদীতে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি নদীপথে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া জমিদারবাড়ি ও নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লিতে ঘুরতে যাওয়া যায়। অনলাইনে আগে থেকে বুকিং দিয়ে অংশ নেওয়া যায় ঢাকা ডিনার ক্রুজের নৌভ্রমণে। কাঞ্চন মেরিনা অ্যান্ড অস্ট্রিচ হারবারে দেখা যাবে দেশের অন্যতম প্রাচীন প্যাডেল স্টিমার পিএস অস্ট্রিচ।
ভাড়া কেমন: ১০ থেকে ২০ জনের ইয়টগুলো ঘণ্টাপ্রতি ৬ থেকে ১২ হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া যায়। ঢাকা ডিনার ক্রুজের ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি লঞ্চ ভাড়া নিতে ঘণ্টাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হবে। অনলাইনে আগে থেকে বুকিং দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ডিনার ক্রুজে ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোর ভাড়া পড়বে প্রতি ঘণ্টা ৫০০-৬০০ টাকা।
নিরাপত্তা: ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। ইয়ট ও লঞ্চগুলোয় লাইফ জ্যাকেট ও বয়া আছে।
খাবারের ব্যবস্থা ও দরদাম: শিমুলিয়া ট্যুরিস্ট ঘাটে চা ও নাশতাজাতীয় নানা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা ডিনার ক্রুজের ভ্রমণ প্যাকেজে খাবারের ব্যবস্থা আছে। কাঞ্চন মেরিনা অ্যান্ড অস্ট্রিচ হারবারে সকালের নাশতা এবং দুপুর ও রাতের খাবার পাওয়া যাবে। এসব খাবারের দাম পড়বে ৩০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত। দল বেঁধে ইয়টে করে ঘুরতে গেলে আগে থেকে পছন্দসই খাবার অর্ডার করতে হয়।
যোগাযোগ: ০১৮১৯-২২৪৫৯৩ (ঢাকা ডিনার ক্রুজ)
০১৭৪৭-৭৮২৯৬৬ (কাঞ্চন মেরিনা অ্যান্ড অস্ট্রিচ হারবার)
শুরু কোথা থেকে: রাজধানীর কোলঘেঁষা বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট, শ্যামবাজার, বাদামতলী ও সোয়ারীঘাট এলাকা থেকে খেয়ানৌকা ও ছোট–বড় ট্রলারে করে ঘুরে বেড়ানো যায়।
ভাড়া: ছোট খেয়ানৌকা ঘণ্টা হিসাবে ভাড়া করা যায়। প্রতি ঘণ্টা ৪০০–৫০০ টাকা। এ ছাড়া ছোট দেশীয় ইঞ্জিনবোট ও ট্রলারপ্রতি ঘণ্টার ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা। অনেকে পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া ঘাট পর্যন্ত ৫০০ টাকায় যাওয়া-আসার চুক্তিতে নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
কম খরচেও যায় ঘোরা: বুড়িগঙ্গায় কম খরচে ঘুরতে হলে সোয়ারীঘাট থেকে খোলামোড়া লঞ্চঘাট এলাকায় চলাচলকারী ৪০ থেকে ৫০ ফুটের ছোট লঞ্চে উঠতে হবে। লঞ্চের নিচতলায় যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা, দ্বিতীয় তলায় ২৫ টাকা।
মুখরোচক খাবার: কেরানীগঞ্জের জিনজিরা রহমতপুর হাফেজ সাহেবের ঘাটে যাত্রাবিরতি দিয়ে বেলাল মিয়ার ঝালমুড়ি খান অনেকে। নদীর পাড়ে রাখা সারি সারি চেয়ারে বসে ঝালমুড়ি খাওয়ার পাশাপাশি নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়।
কোথা থেকে ভ্রমণ শুরু: নবাবগঞ্জ উপজেলার পাড়াগ্রাম বাজার এলাকা, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর এলাকা থেকে নৌকায় চড়া যায়। নদীটি বয়ে চলেছে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের মধ্য দিয়ে। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়ানোর সুব্যবস্থা আছে।
কত দূরে: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বছিলা হয়ে সড়কপথে নবাবগঞ্জের পাড়াগ্রাম বাজার ২৫ কিলোমিটার। অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। হেমায়েতপুর সিএনজিস্ট্যান্ড থেকে হযরতপুর বাজার ১০ কিলোমিটার। জনপ্রতি ভাড়া ৪৫ টাকা।
দেখার কী আছে: সূর্যাস্তে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
শীত মৌসুমে চোখে পড়বে দেশি–বিদেশি পাখির আনাগোনা।
ভাড়া কেমন: ঘণ্টাপ্রতি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভাড়া ১ হাজার টাকা।
খাবারদাবার: পাড়াগ্রাম বাজার, সেরু মিয়ার বাজার, হযরতপুর বাজারে ভাতের হোটেল আছে। কালীগঙ্গা নদীর দেশি মাছ, পদ্মার ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, দেশি মুরগির মাংস পাওয়া যায়। এ ছাড়া চায়নিজ রেস্তোরাঁও আছে। দেশি ছোট মাছসহ ভাত ১২০ টাকা, ইলিশ মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি পিস।
কোথা থেকে শুরু: রাজধানী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী–সংলগ্ন সৈয়দপুর খেয়াঘাটে ধলেশ্বরী নদীর তীরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। সৈয়দপুর খেয়াঘাট থেকে খেয়ানৌকা অথবা ছোট–বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ধলেশ্বরী নদীর তীরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। সৈয়দপুর খেয়াঘাট থেকেও মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ঘাট হয়ে কুলহাট এলাকায় গিয়ে বেড়ানো যায়।
ভাড়া: নৌকাভাড়া নেবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ২০০ টাকা ভাড়ায় সৈয়দপুর খেয়াঘাট থেকে কুলহাট পর্যন্ত আসা–যাওয়া করা যায়। এ ছাড়া ঘণ্টাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় নৌকা ভাড়া নিয়ে ধলেশ্বরীতে ঘুরে বেড়ানো যায়। ইঞ্জিনচালিত দেশীয় ছোট–বড় ট্রলার ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
খাবারদাবার: সৈয়দপুর ঘাটসংলগ্ন চা দোকানি আল আমিনের দোকানে গরুর দুধের চা ও দই পাওয়া যায়। দুপুরে খাবারের জন্য রুটি–বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় বিক্রি হয়।
ভ্রমণ শুরু: লেকের পাড়ে বোট ঘাট থেকে
কত দূরে: চট্টগ্রাম নগর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে
কী ধরনের নৌযান: ইঞ্জিন ও প্যাডেলচালিত দুই ধরনের নৌযানই চলে
দেখার আছে: লেক, সানসেট পয়েন্ট, ক্যাফে ২৪ রেস্তোরাঁ
ভাড়া কেমন: ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ২০ মিনিট ৭০ টাকা, ফুটবোট (ছোট) ২০ মিনিট ৪৫০ টাকা, প্যাডেল বোট ঘণ্টা ৩০০ টাকা (সর্বোচ্চ ৪ জন)
খাবারের ব্যবস্থা: ক্যাফে ২৪ রেস্তোরাঁ
যোগাযোগ: ০১৭৬৯-২৪৪৫১৬
https://www.facebook.com/p/Cafe–24-100080353063268/
কোথায় অবস্থিত: শহরের মধ্যেই জিইসি এলাকায়
কী ধরনের নৌযান: ইঞ্জিনচালিত ও প্যাডেল নৌকা
কী কী দেখার আছে: লেক, ফয়’স লেক পার্ক, বিভিন্ন রাইড
ভাড়া কেমন: ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও প্যাডেলচালিত নৌকার ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে শুরু। ফয়’স লেকে প্রবেশ ফি ৩০০ টাকা জনপ্রতি।
আশপাশে খাবারের ব্যবস্থা: লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট
যোগাযোগ: ০১৯৬৯-৯৫৩৫৫১
কোথায় অবস্থিত: এই নদী ও হাওরগুলো সিলেট শহরতলির বাইশটিলা এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত
ভ্রমণ শুরু: সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে
কত দূরে: সিলেট শহর থেকে প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
কী ধরনের নৌযান: বইঠা দিয়ে চালানো সাধারণ নৌকা
দেখার আছে: নদী-বিল-বাঁওড় দেখার পাশাপাশি গ্রামীণ পরিবেশের সৌন্দর্য নজর কাড়বে
ভাড়া কেমন: ঘণ্টাপ্রতি একেকটা নৌকা ২০০-৩০০ টাকা। তবে দরদাম করে ভাড়া কমবেশি করা যায়। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার ছাড়া দরদাম করে আরও কমে যাওয়া যায়। নৌকাগুলো রিজার্ভ করে নিতে হয়। একেকটি নৌকায় ৮-১০ জন বসতে পারেন।
খাবারদাবার ও দরদাম: পারের আশপাশে ফাস্ট ফুডের বেশ কিছু দোকান আছে। চটপটি ৩০-৪০ টাকা, ফুচকা ৫০-৬০ টাকা, শিঙাড়া ৭ টাকা, চপ ৫ টাকা, পেঁয়াজু ৫ টাকা। এ ছাড়া ঝালমুড়ি, ছোলা, কেক, ঠান্ডা পানীয়, চা-কফিসহ নানা খাবার পাওয়া যায়।
কোথায় অবস্থিত: রাজধানীর ৩০০ ফিটে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টরে
কী কী আছে: পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের পাশে বালু নদের তীর ঘেঁষে ছোট-বড় অসংখ্য খাবারের দোকান। প্রতিদিন দুপুর থেকে সেসব দোকানে হরেক রকম খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। আছে শিশুপার্ক ও শিশুদের খেলনার দোকান। কোনো কোনো দোকান খোলা থাকে ভোররাত পর্যন্ত। খাবারের পাশাপাশি বালু নদে রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থাও।
যাবেন কীভাবে: ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে নীলা মার্কেটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে নীলা মার্কেট যাওয়া যায়। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতাগামী বিআরটিসি বাস আছে। সেই বাসে করে যাওয়া যাবে নীলা মার্কেট।
কী কী খাবার: হাঁসের মাংস ও চিতই পিঠার জন্য নীলা মার্কেট বিখ্যাত। দোকানগুলোয় গরু, খাসি ও মুরগির মাংসও পাওয়া যায়। মাংস দিয়ে খাওয়ার জন্য চিতই পিঠার পাশাপাশি পাওয়া যায় চালের গুঁড়ার চাপটি ও রুমালি রুটি। এ ছাড়া বালিশ, চমচম, রসগোল্লা, ছানা, সন্দেশ, লেংচা, রসমালাইয়ের মতো হরেক পদের গরম –গরম মিষ্টি, সি-ফুড, তান্দুরি ও স্পেশাল মালাই চা, ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, তাজা ফলের জুস পাওয়া যায়।
দরদাম: হাঁসসহ বিভিন্ন পদের মাংস প্রতি প্লেট ২৫০-৩০০ টাকা। রুমালি রুটি, চিতই পিঠা বিক্রি হয় প্রতিটি ২০ টাকা দরে। চাপটি ১০ টাকা। তান্দুরি চা ৫০ ও স্পেশাল মালাই চা ৭০ টাকা। আকারভেদে সামুদ্রিক ও দেশি কাঁকড়া প্রতিটি ৩০০-৪০০ টাকা, এক কেজি ওজনের টুনা মাছভাজা ৮০০-৯০০ টাকা, কোরাল প্রতিটি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, স্কুইড ১৫০-৩৫০ ও অক্টোপাস ৩৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।