রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

লেবানন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

লেবাননের সরকারী নাম “লেবানিজ রিপাবলিক”। ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত পশ্চিম এশিয়ার স্বাধীন একটি দেশ এটি। এর উত্তর ও পূর্বে সিরিয়া, দক্ষিণে ইসরায়েল ও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর ঘেষে সাইপ্রাস অবস্থিত।

ভূমধ্যসাগরের পাড়ে হাজারো বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে স্বমহিমায় অবস্থান করছে পাহাড়ময় লেবানন। দেশটির নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য, চোখ জুড়ানো সব সমুদ্রসৈকত, পটে আঁকা ছবির মতো সুন্দর সব পাহাড়-পর্বতের বদৌলতে মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছেই দেশটি একটি লোভনীয় গন্তব্য। নানা সময়ে বিভিন্ন সভ্যতার সংস্পর্শে এসে লেবানন সমৃদ্ধ হয়েছে ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতিতে। ক্যানানাইট, ফিনিশীয়, আরব ও ফরাসি সভ্যতার সেসব নিদর্শন আজও দেখা যায় লেবাননের মাটিতে। এটি এমনই এক দেশ, যেখানে সব রুচির মানুষ মুগ্ধ হওয়ার মতো কোনো না কোনো উপকরণ পাবেনই।

১। লেবাননে সভ্যতার সূচনা সাত হাজার বছরেরও আগে। ফোয়েনেশীয়দের আদি আবাসভূমি এই দেশ।  খ্রিস্টপূর্ব ৬৪-তে এখানে রোমান সাম্রাজ্যের শাসন শুরু হয়। খ্রিস্টানরা নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় চলে আসে। এরপর এলাকাটি দখলে নেয় আরব মুসলমানরা। তারপর আসে দ্রুজ নামে নতুন একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী। গোষ্ঠীটি লেবাননে তাদের শাসন কায়েম রাখে কয়েক শতাব্দী ধরে। এরপর আবারও রোমান ক্যাথলিকদের নিয়ন্ত্রণে আসে এলাকাটি।

শেষ পর্যন্ত অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ যায় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে। ১৫১৬ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ওসমানীয় শাসকরাই ছিলেন লেবাননের অধিকর্তা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের পতন ঘটে। এরপর যে পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে আজকের লেবানন গঠিত তা ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পরবর্তীতে দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৪৩ সালে।

২। ১০ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৬১ লাখ ৪৮ হাজার মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৬১ তম দেশ।

৩। আরবি ভাষা লেবাননের সরকারি ভাষা। দেশটির ৯০%-এরও বেশি মানুষ আরবি ভাষাতে কথা বলে।

৪। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে এবং ৪০ ভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। লেবাননে বসবাসরত খ্রিস্টানের সংখ্যা মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশে বসবাসরত মোট খ্রিস্টানদের সংখ্যার চাইতেও বেশি।

৫। বৈরুত লেবাননের রাজধানী ও প্রধান শহর। সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর এটি।

এ শহরে প্রথম জনবসতি গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে। লেবাননের বেসামরিক যুদ্ধের পর থেকে এটি একটি আধুনিক শহর ও পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

৬। লেবাননের আবহাওয়ার মধ্যে রয়েছে ভূমধ্যসাগরের ব্যাপক প্রভাব। উপকূলীয় এলাকায় শীতকাল বেশ ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিময়। আর গ্রীষ্মকাল গরম ও আর্দ্র। উঁচু স্থানগুলোতে তাপমাত্রা অত্যধিক ঠাণ্ডা, কখনো কখনো সেখানে ভারী তুষারপাতও হয়।

৭। আরব দেশ হলেও দেশটিতে রাজতন্ত্র কিংবা পরিবারতন্ত্র নেই। এখানে দেখা যায় ধর্মীয় সংস্কৃতির চমৎকার সমঝোতার অনুপম চর্চা। এমন উদাহরণ পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। কারণ দেশটিতে সরকারের সর্বোচ্চ পদগুলো আনুপাতিক হারে ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতাদের জন্য নির্ধারিত। চুক্তি অনুযায়ী লেবাননের রাষ্ট্রপতি হবেন একজন খ্রিস্টান, প্রধানমন্ত্রী হবেন সুন্নি মুসলমান ও স্পিকার হবেন শিয়া মুসলমান। সংসদের আসনের অর্ধেক খ্রিস্টান ও অর্ধেক মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত। এখানে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল গোষ্ঠী বা গোত্রভিত্তিক।

৮। লেবানন পৃথিবীর মানচিত্রে এমন অবস্থানে আছে যে, পশ্চিম এশিয়ার জন্য লেবাননকে ইউরোপের প্রবেশদ্বার আর ইউরোপের জন্য একে পশ্চিম এশিয়ার প্রবশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৯। লেবাননের বেশির ভাগ স্থানজুড়েই আছে পাহাড়। সামান্য উপকূলীয় অঞ্চল ও বেকা উপত্যকা ছাড়া পাহাড় এড়ানো যায়নি কোথাও। পাহাড়মুক্ত এ অংশটুকুই লেবাননের কৃষিকাজের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত।

১০। দেশটির প্রধান কৃষি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে আঙুর, টমেটো, আপেল, শাকসবজি, আলু, জলপাই, তামাক, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি।

১১। দেশটিতে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ জিটা গ্রটো, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব বৈরুত, কাদিশা উপত্যকা এবং টায়ার। এদের মধ্যে জিটা গ্রটো হচ্ছে রাজধানী বৈরুত থেকে ১৮ কি.মি. দূরে নাহর আল-কালবের উপত্যকায় অবস্থিত একটি গুহা।

আর টায়ার হচ্ছে একটি প্রাচীন ফিনিশীয় শহর।

এর বাইরেও আরো অনেক অনিন্দ্য সুন্দর এবং ইতিহাস বিজড়িত দর্শনীয় স্থান রয়েছে এদেশে।

১২। লেবানন বেসরকারী রেডিও এবং টিভি অনুমোদন দেওয়া দেশের দিক থকে গোটা আরব মহাদেশের মধ্যে প্রথম দেশ।

১৩। ১৯৫৯ সালে লেবাননের মানুষ প্রথম টিভির দেখা পায়। বর্তমানে সেখানে নয়টি জাতীয় টিভি চ্যানেল আছে। যার একটি মাত্র সরকারি, আর বাকি সব বেসরকারি।

১৪। দেশটিতে ১৮-৩০ বৎসর বয়সের মধ্যে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।

১৫। মাউন্ট লেবানন, যা লেবাননের একটি পর্বতমালা, এর গড় উচ্চতা প্রায় ২৫০০ মিটার। দেশটির নাম মূলত এই পর্বতশ্রেণি থেকেই এসেছে।

১৬। এ দেশটির নাম বিশ্বের সবচেয় প্রাচীনতম দেশের নাম হিসাবে পরিচিত এবং প্রায় ৪০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নামটি অপরিবর্তিত রয়েছে।

১৭। লেবাননে প্রতি ১০ জন লোকের জন্যে ১ জন করে ডাক্তার নিযুক্ত রয়েছে, যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশ গুলিতেও প্রতি ১০০ জন লোকের জন্যে ১ জন করে ডাক্তার নিযুক্ত রয়েছে।

১৮। লেবাননে মোট ১৫টি নদী রয়েছে। এই নদীগুলোর পানি লেবাননের নিজস্ব পাহাড় থেকেই প্রবাহিত হয়।

১৯। আমাদের সবার প্রিয় কার্টুন টম এন্ড জেরির নির্মাতারা মূলত লেবানিজ নাগরিক।

২০। লেবাননের প্রতিটা শহরে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ১৯৮০/৮২ সাল থেকে লেবাননে বাংলাদেশীদের প্রবেশ আরম্ভ হয়। বর্তমানে লেবাননে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি নারী অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। তবে এদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

২১। লেবাননের প্রধান খেলাগুলোর মধ্যে বাস্কেটবল, ফুটবল ও রাগবি বেশ জনপ্রিয়।

২২। সাহিত্যের আকাশে লেবাননের বড় তারকা ছিলেন খলিল জিবরান। তার লিখিত দ্য প্রপেট বিশ্বের বিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

২৩। রমজানে লেবাননের জনপ্রিয় খাবার কাটায়েফ প্যানকেক। সে দেশের মানুষ কাটায়েফ প্যানকেক দিয়ে ইফতার করতে খুবই পছন্দ করে।

২৪। লেবানন অর্থনীতিতে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল কিন্তু বর্তমানে তাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেকটা সাফল্য নিয়ে এসেছে তাদের পর্যটন খাত। লেবাননে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ইউরোপ থেকে বহু পর্যটক পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন। দেশটির মোট আয়ের ৬৭ শতাংশ আসে এই পর্যটন খাত থেকেই।

২৫। লেবাননের সরকারী মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ড। বাংলাদেশী ১ টাকা সমান প্রায় ১৮ লেবানিজ পাউন্ড।

২৬। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন ডলার।

২৭। লেবাননের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৬১।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com