লুসাই হেরিটেজ রিসোর্ট, প্রকৃতির সান্নিধ্যে সারাবেলা

মেঘের রাজ্য সাজেকে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেই, সবার প্রথমে মাথায় আসে কোন রিসোর্টে থাকবো? কোন রিসোর্টে আছে ঝুল বারান্দা? কোন রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায় মেঘ রোদের খেলা। বিছানায় শুয়েই দূরে পাহাড় দেখা গেলেতো কথাই নেই। সাজেক ট্যুর হবে ষোলো আনা ভরপুর।

সাজেকে যত রিসোর্ট আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম লুসাই রিসোর্ট এন্ড হেরিটেজ ভিলেজ। পাহাড়ি লুসাই সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও গ্রামের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে একটি আর্টিফিসিয়াল গ্রাম। এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামে দৃষ্টিনন্দন সব কটেজ ছাড়াও রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষেরা যেরকম ঘরে থাকেন তার আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্টের কটেজগুলি। বাঁশ, ছন, কাঠ দিয়ে তৈরি কটেজগুলো বাইরে থেকে দেখতে খুবই সুন্দর। তেমনি এর ভেতরে সংযুক্ত করা হয়েছে সব রকম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

লুসাই গ্রামের গেট দিয়ে ঢোকার পরপরই চোখে পড়বে একটি ট্রি হাউজ বা গাছ ঘর। দেখে মনে হবে যেন গাছ ফুঁড়েই বের হয়েছে এই ঘরটি। মই বেয়ে উপরে উঠে এই রুমের ভেতর থেকে বাইরে তাকালেই চোখে পড়বে পাহাড়ের চমৎকার দৃশ্য। এখান থেকে পুরো গ্রামটাই দেখা যায়। বাঁশের বেড়া দিয়ে আবৃত এই গাছ ঘরে থেকে আপনার মনে হবে আপনি পাহাড়ে বাস করা মানুষদেরই একজন। আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন এই কাপল রুমে থাকতে আপনাকে খরচ করতে হবে ৪ হাজার টাকা।

লুসাই ভিলেজে একটি স্পেশাল কাপল কটেজ রয়েছে, যার নাম উডেন হাউজ। এই কটেজের বারান্দা থেকে খুবই চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। পরিপাটি বিছানা, চমৎকার বারান্দা, আধুনিক টয়লেটসহ এই কটেজে কাপল অথবা সর্বোচ্চ ৪জন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। এর জন্য খরচ হবে ৪ হাজার টাকা।

লুসাই গ্রামে থাকার জন্য আরো কিছু অপশন আছে। যেগুলোকে লুসাই ঘর বলা হয়। এই ঘরগুলোও লুসাইদের বাড়ির আদলে তৈরি। এই কটেজেগুলোতেও কাপল অথবা সর্বোচ্চ ৪জন পর্যন্ত থাকা যায়। যার বারান্দায় বসে আড্ডা দিতে দিতে উপভোগ করতে পারবেন সাজেকের মন-মাতানো দৃশ্য। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পরশ পাবেন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মেঘের। এ কটেজে থাকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা।

কটেজগুলোর প্রতিটির আশপাশেই করা হয়েছে ফুলের বাগান। পুরো রিসোর্টটিই গাছগাছালিতে ঘেরা। যার ফলে এখানে গেলে পাওয়া যাবে মানসিক প্রশান্তি। হলুদ সূর্যমূখী ফুলের সাথে লাল-গোলাপী নানা ফুলের সৌরভ আপনাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলিয়ে দিবে শহুরে যান্ত্রিক রোজগেরে জীবন।

রিসোর্টের পাশাপাশি এখানে লুসাইদের ব্যবহৃত বাড়ি বা ঘরের মডেল তৈরি করে রাখা হয়েছে। যার ভেতরে লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মডেল রাখা আছে। যেগুলো দেখে তাদের ঐতিহ্যগত পরিচিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

এই রিসোর্টে না থাকলেও সাজেকে বেড়াতে এসে শুধুমাত্র ঘুরে দেখার জন্যও এই গ্রামে প্রবেশ করা যায়। এখানকার প্রবেশমূল্য মাত্র ৩০টাকা। লুসাই হেরিটেজ ভিলেজের একটা চমৎকার আয়োজন হলো এখানে লুসাইদের পোশাক পাওয়া যায়। যা আপনি ১০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিতে পারবেন। এই পোশাক পরে গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে ছবিও তুলতে পারবেন। কিছু সময়ের জন্য আপনিও হয়ে যেতে পারেন লুসাই রাজা অথবা রানী।

লুসাই গ্রামে প্রবেশ গেটের পাশেই রয়েছে একটি টি-স্টল। গ্রামে ঘোরাঘুরি শেষে যেখানে বসে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সাজেকের ভুবন ভুলানো ব্যাম্বু-টি। সব কিছু মিলিয়ে এই লুসাই হেরিটেজ ভিলেজ আপনার সাজেক ট্যুরকে করে তুলবে আনন্দদায়ক ও মেমোরেবল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: