লিসবন বিমানবন্দর, যার অফিশিয়াল নাম হাম্বার্টো দেলগাদো বিমানবন্দর, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এর নিকটবর্তী স্থানের জন্য এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত সহজগম্য।
আয়তন ও উন্নয়ন:
বিমানবন্দরটি বছরে লক্ষাধিক যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম এবং এর দুইটি টার্মিনাল রয়েছে: টার্মিনাল ১ মূল আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর জন্য এবং টার্মিনাল ২ স্বল্প দূরত্বের ও চার্টার ফ্লাইটগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিমানবন্দরটি পর্তুগালের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো এবং ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ইতিহাস:
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লিসবন বিমানবন্দরটি চালু হয়। তখন থেকে এটি দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে আসছে। ২০১৫ সালে, এর নাম পরিবর্তন করে পর্তুগালের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ হাম্বার্টো দেলগাডোর নামে নামকরণ করা হয়।
এয়ারলাইন অপারেশন:
লিসবন বিমানবন্দরে ৫০টিরও বেশি এয়ারলাইনস পরিচালিত হয়, যার মধ্যে টিএপি পর্তুগাল, রায়ানএয়ার, ইজি জেট, লুফথানসা, এমিরেটস এবং এয়ার ফ্রান্সের মতো আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস রয়েছে। এছাড়াও, এটি বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট সংযোগ প্রদান করে।
এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস:
বিমানবন্দরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের সুরক্ষা ব্যবস্থা, দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া, ব্যাগেজ সার্ভিসেস, ফ্রি ওয়াইফাই, ব্যাংকিং সুবিধা, এবং চার্জিং স্টেশন। এটি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ তথ্য কেন্দ্র এবং মেডিকেল সুবিধাও সরবরাহ করে থাকে।
ট্রাফিক ও যাত্রী পরিবহন:
লিসবন বিমানবন্দর প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি যাত্রী সামলায়, যা ইউরোপের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম। এর পরিচালনা দক্ষতা এবং যাত্রী সামলানোর ব্যবস্থা সারা বিশ্বে প্রশংসিত।
দোকান ও রেস্তোরাঁসমূহ:
বিমানবন্দরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান, ডিউটি-ফ্রি শপ এবং স্থানীয় পর্তুগিজ পণ্যের দোকান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে স্থানীয় খাবার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়।
খাবার ও পানীয়:
লিসবন বিমানবন্দরে স্থানীয় জনপ্রিয় খাবার যেমন “পাস্তেল দে নাটা” মিষ্টি, পোর্তো ওয়াইনসহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ক্যাফে এবং ফাস্টফুড চেইনও এখানে অবস্থিত।
যাত্রী অপেক্ষমাণ লাউঞ্জ:
বিমানবন্দরে একাধিক আরামদায়ক লাউঞ্জ আছে, যেখানে যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষার সময় বিশ্রাম নিতে পারেন। এই লাউঞ্জগুলোতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট, টিভি, খাবার এবং পানীয়ের সুবিধা রয়েছে।
পরিবহন ব্যবস্থা:
বিমানবন্দর থেকে লিসবন শহরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর জন্য মেট্রো, বাস, ট্যাক্সি এবং ভাড়ার গাড়ি সহজলভ্য। এছাড়া, দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যের এয়ারপোর্ট শাটল বাস সার্ভিসও পাওয়া যায়।
লিসবন বিমানবন্দর তাই পর্তুগালের পর্যটন ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আধুনিক অবকাঠামো এবং সুবিধার মাধ্যমে এটি যাত্রীদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা পর্তুগাল ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।