শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

কুয়াশা ঘেরা পাহাড়ি পথ, ধোঁয়া ওঠা মোমো, পুজো কাটান সিকিমের এই ছোট্ট গ্রামে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

গ্যাংটক (Gangtok) থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার দূরত্ব পেরিয়ে তখন ঘড়ির কাঁটাতে বাজে বিকেল সাড়ে ৪ টে। তখনও পাহাড়ের মাথায় রোদ রয়েছে। বাক্স-প্যাটরা গাড়ি থেকে নামিয়ে ঢুকে পড়লুম মাঙ্গনের হোমস্টেতে (Mangan Homestay)। আগে থেকেই রুম বুক থাকায় একেবারেই তৈরিই ছিলেন এখানকার কর্মীরা। মিষ্টি হাসি মুখে নিয়ে ওয়েলকাম জানালেন আমাদের। এই হোমস্টে রুমে ঢোকার রাস্তাটাই এক অভিজ্ঞতা। লম্বা বাগান। সেখানে ফুটে রয়েছে নানা মরশুমি ফুল। একটু এগিয়ে গেলেই পোলট্রি। ধাপে ধাপে সিঁড়ি এগিয়ে চলেছে রুমের দিকে। প্রত্যেক সিঁড়ির ধাপেই প্লাসটিকের বোতলে সুন্দর করে সাজানো বাহারি পাতার গাছ। সবুজে ঘেরা পথ এগিয়ে ভীষণ আদুরে একটা রুমে গিয়ে ঢুকলাম। সামনে ছোট্ট একটা বারান্দা। আর বারান্দা থেকে সোজা তাকালে এক ফালি কাঞ্চনজঙ্ঘা!

ঝুপ করে রাত নামল মাঙ্গনে। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ। রাত বাড়ছে শীত বাড়ছে। হাতে কফি নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে দেখলাম। ইচ্ছে হল, ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মেখে রাতের মাঙ্গনকে দেখার। গোটা গ্রাম অন্ধকার। দূরে কয়েকটা জায়গা থেকে ছোট ছোট আলো। মাঝে মধ্য়েই পাখনার ঝাপটা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে দু-একটা বাদুর। কেমন একটা রোমাঞ্চকর আবহাওয়া। সেদিন আর বারান্দায় বেশিক্ষণ থাকা হল না। প্ল্যান হল ভোরবেলা উঠে পাহাড়ি পথে ধরে কিছুটা উপরে ওঠার।

হোমস্টের পাশে মাঙ্গন প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার ঠিক পাশ দিয়েই রাস্তা উঠেছে উপরের দিকে। এলাকাবাসীদের কাছ থেকে ডিরেকশন নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। এখানে বলা রাখা ভাল, মাঙ্গন গ্রামের আরেকটি নাম রয়েছে। পাখি গ্রাম। বার্ড ওয়াচারদের জন্য এই গ্রাম একেবারে পারফেক্ট। নানা রঙের পাখি দেখতে হলে অবশ্য়ই ঘুরে যান। এ ব্যাপারে অক্টোবর থেকে নভেম্বর সেরা সময়।

পথটা মোটেই সুবিধের নয়। উঁচু-নিচু পাথর পেরিয়েই উঠে যেতে হবে। তবে যত উপরে উঠবেন মন ভরবে তিনগুণ। কুয়াশা মাখা দেবদারু গাছগুলোর হাতছানিতে অদ্ভুত এক প্রশান্তি ছড়িয়ে যাবে আপনার মনে। কখনও পাখির ডাক। কখনও দূর থেকে ভেসে আসা ঝরনার আওয়াজ। দু’ঘণ্টার ট্রেকের পর দুম করে পৌঁছে যাবেন এক ছোট্ট ভ্য়ালিতে। সামনে তখন কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি মারছে। একটু জিরিয়ে নেওয়া। এই ভ্যালির পাশেই ছোট্ট কয়েকটি বাড়ি। আর একটি ছোট্ট দোকান। সেখানেই চা অর্ডার দেওয়া। ব্রেকফাস্টের কথা বলতেই গরম গরম চিকেন মোমো হাজির হবে আপনার সামনে। ইচ্ছে করলে থুপ্পাও খেতে পারেন। ঠান্ডা হাওয়া, গরম মোমো আর চা বা কফি। শহরের কোলাহল থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাবে আপনাকে।

মাঙ্গন গ্রামটি বেশ ছোট। তাই বড়জোর দুদিন থাকুন। কারণ, এক দিনেই পায়ে হেঁটেই আপনার এই গ্রাম দেখা শেষ।

কী কী দেখবেন— মাঙ্গন থেকে ২ কিমি দূরে সিংহিক। এটা একটি ভিউ পয়েন্ট। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার বার্ড ভিউ পেতে এই ভিউ পয়েন্টে যাওয়া মাস্ট। সিংহিক থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে নাগা ফলস। ঘুরে আসুন এখান থেকেও। মাঙ্গন গ্রামে রয়েছে একটি মনেস্ট্রিও। ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। আর যদি শুধু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, তাহলে  হোমস্টের বারান্দায় বসে থাকুন। চায়ে চুমক দিন, মোমো খান। আর দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা।

খরচ পড়বে— ১২০০ টাকা প্রতিদিন (খাবার খরচ আলাদা)। ঘুরে দেখার জন্য ভাড়া করতে পারেন ট্যাক্সি। খরচ পড়বে ৩০০ টাকা মতো। গ্যাংটক থেকে মাঙ্গনে আসতে খরচ পড়বে ২০০০ টাকা মতো। অবশ্যই দরদাম করে গাড়ি বুক করুন। হোমস্টে আগে থেকেই বুক করে নিন। এই গ্রামে ভাল থাকার জায়গা বেশ কম। মাঙ্গনে যাওয়ার সেরা সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ থেকে জুন।

নিতে ভুলবেন না- আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড, টর্চ, ঠিকঠাক গরম পোশাক, সব সময় এটিএম কাজ নাও করতে পারেন। সঙ্গে ক্যাশ রাখুন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com