রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

রোমাঞ্চকর বিছানাকান্দি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

কাজের চাপে নাকাল হয়ে অনেকেই ছুটে যেতে চান প্রকৃতির কাছে। সুখবর হল সামনেই আসছে পুজোর ছুটি। এই ছুটিতে চলে যেতে পারেন মুক্ত হাওয়ায় কিছু সময় কাটাতে। আর এজন্য উপযুক্ত জায়গা হতে পারে বিছানাকান্দি। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ যায় ওখানে। আজ চলুন জেনে নেওয়া যাক সিলেটের বিছানাকান্দি সম্পর্কে।

হাঁদারপাড় নামক স্থানটিতে আসলে পথ ততটা সুখকর নয়। এখানে গাড়ির কোন ব্যবস্থা নেই। গরম থাকলে হেঁটে বিছানাকান্দি পর্যন্ত চলে যেতে পারেন চাইলে। সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। তবে বর্ষাকালে সেই সুযোগটুকু নেই। তবে তার জন্য ভাবনা নেই। হাঁদারপাড় থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরবোটগুলো সোজা আপনাকে নিয়ে যাবে বিছানাকান্দিতে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ পরতে পারে ৭০০-৮০০ টাকা। তবে মোটরবোটের সাহায্য নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কেননা ৪ কিলোমিটার পথ হেটে যাওয়াটা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর হতে পারে। বিশেষ করে দলে যদি বয়স্ক কিংবা বাচ্চা কেউ থাকে সেক্ষেত্রে হেঁটে যাবার চিন্তাটা বাদ দেওয়াই উত্তম।

নৌকা করে বিছানাকান্দি আসার পুরো পথটা অসম্ভব রোমাঞ্চকর। স্বচ্ছ আর ঠাণ্ডা পানি ঠেলে নৌকার এঁকেবেঁকে বয়ে চলা মনে এনে দেয় অদ্ভুত প্রশান্তি। তার উপর বাড়তি পাওনা হিসেবে তো আছে আশেপাশের গগনচুম্বী পাহাড় আর মাথার উপর শুভ্র শান্ত আকাশের আবরণ। পথ যত কমতে থাকে অস্পষ্ট পাহাড়গুলো স্পষ্ট নিরেট আকার নিতে থাকে আর তখন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেন কোন শিল্পীর আঁকা ছবির মত এ দৃশ্য, প্রতিটি খাঁজে রয়েছে অপার সৌন্দর্য আর নিখুঁত কারুকার্যের নিদর্শন। পথে চলত চলতে দুপারে দেখা মিলতে পারে কিছু আদিবাসীদের। এমনি করে চলতে চলতে কখন যে পথ শেষ হয়ে আসে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পথ শেষ হলে হবে কি সৌন্দর্যের শেষ হবার উপায় নেই। কারন তখন আপনি চলে এসেছেন অপরূপা বিছানাকান্দিতে।

এখানে পৌঁছে যখন মনে হবে সেই পাহাড় সেই আকাশই তো এখানে। কিন্তু পা ফেলার সাথে সাথে এই ভাবনাটুকু কখন যে তলিয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না। পা রাখতেই টের পাওয়া যাবে কেন বিছানাকান্দিতে আসা । স্বচ্ছ আর হিমশীতল পানির নিচে যেন শত শত পাথরের মেলা বসেছে। নানা রঙের, নানা আকারের আর বিচিত্র সব উপাদানের পাথরে ভরপুর এই জায়গাটিকে পাথরের রাজ্য বললে ভুল হবে না। শুধু পা ভিজিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না এখানে আসা মানুষগুলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথরে ভরা বাথটাব বলেই মনে হয়। বর্ষার সময়টাতে পানিতে টইটুম্বুর থাকে বিছানাকান্দি আর তখন একে তুলনা করা যায় সবে কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পা দেওয়া তরুনীর সাথে। অপরূপ চোখ জুড়ানো এক মোহনীয়তায় যেন আবিষ্ট করে রাখে এখানে আসা মানুষগুলোকে। তবে শীতকালে বিছানাকান্দি ভ্রমন না করাই শ্রেয়।

বিছানাকান্দি ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১০০ গজ দূরে থাকা লাল পতাকাগুলোর সারি জানান দেয় যে ওপাশেই ভারত। এখান থেকে সহজেই ভারতীয় জলপ্রপাত গুলো দেখা যায় যা থেকে পানি বয়ে আসে বিছানাকান্দি পর্যন্ত। একটি কাঠের ব্রিজ বাংলাদেশের বর্ডারের মধ্যে পড়েছে যা পানি প্রবাহের বিপরীত দিকে অবস্থিত উচ্চভুমি আর সমতল ভূমির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে। এর ফলে আদিবাসীদের গবাদীপশু চারনের বিশেষসুবিধা হয়েছে।

পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে আসার পর যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তিটুকু নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় প্রতিদিনকার শত গ্লানি। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে।

মনে রাখা ভাল
১. সময় থাকলে পান্তুমাই থেকেও ঘুরে আসতে পারেন ।বিছানাকান্দির পাশেই অবস্থিত এই স্পটটিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

২. পাথরে চলার সময় বাড়তে সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো। নয়তো পা পিছিলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৩. খাবারের পর্বটুকু হাঁদারপাড় থেকে সেরে আসা ভালো। বিছানাকান্দিতে খাবারের দোকান পাওয়া দুর্লভ। ছোটখাটো কিছু দোকান ছাড়া তেমন কিছু নেই। তবে চাইলে সিলেট শহর থেকেই খাবার প্যাক করে নিয়ে আসতে পারেন।

৪. পানিতে কোন ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

৫. বিছনাকান্দি যেহেতু জিরো পয়েন্টে অবস্থিত তাই ভ্রমনকারীদের বর্ডারের আশেপাশে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

৬. অনেক সময় বর্ষাকালে এখানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। তাই যাবার পূর্বে আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com