সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

রেমাক্রি আর নাফাখুম

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

মিয়ানমারের উত্তর আরাকানের পাহাড় বেয়ে বাংলাদেশে নেমে আসা অবাক এক পাহাড়ী নদী সাঙ্গু। পাহাড়ের কোল বেয়ে একেবেঁকে চলা এই নদী কোথাও উন্মত্ত কোথাও আবার শান্ত। পাহাড়ীদের কাছে ‘পবিত্র’ এই নদীর নাম অবশ্য শঙ্খ। আর এই শঙ্খ নদীর কোল ঘেঁষে মেঘের দেশের আশ্চর্য সুন্দর এক জলপ্রপাত নাফাখুম।

নাফাখুম ঝর্ণাটি সাঙ্গু নদীর উজানে। বান্দরবানের থানচি থেকে নৌকায় করে বা হেঁটে পৌঁছাতে হয় রেমাক্রিতে। সেখান থেকে পাহাড়ি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় অনিন্দ্যসুন্দর এই জলপ্রপাতে। যেতে কষ্ট আছে বটে, কিন্তু পথের ক্লান্তি এক লহমায় ভুলে যাবেন নাফাখুম দর্শনে।

থানচি থেকে রেমাক্রি যাওয়ার পথটিও মনে রাখার মতোই। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা সাঙ্গু। নদীর মাঝে বড় বড় পাথর। সেই পাথর এড়িয়ে খুব সাবধানে এগিয়ে চলা। কবেকার কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা নিতান্তই প্রকৃতিদেবীর খেয়ালে নদীর বুকের মনলোভা এই দৃশ্য। পথে পড়বে ছবির মতো অবাক সুন্দর তিন্দু গ্রাম, ‘রাজাপাথর’, ‘কলসপাথরে’র দৃশ্য। এসব দেখতে দেখতে আড়াই অথবা তিন ঘণ্টার নৌকাযাত্রা কখন যে শেষ হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।
সাঙ্গু বেয়ে নাফাখুম যাওয়ার পথে সর্বশেষ বড় গ্রামটির নাম রেমাক্রি। নাফাখুম ভ্রমণে আসা পথশ্রান্তদের থাকার ব্যবস্থা সাধারণত এই গ্রামেই হয়। পাহাড়ের ওপর মেঘেদের গ্রাম রেমাক্রির স্মৃতি যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর মনে থাকবে আজীবন। বড় চাতালের মতো উঠান ঘিরে পাহাড়িদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি, তার গা ঘেঁষে সরু রাস্তা, নির্জনতা আর সৌন্দর্য মিলেমিশে রয়েছে এই ছোট্ট গ্রামটির সঙ্গে।

এই রেমাক্রি থেকেই তিনঘণ্টা পায়ে হাঁটার পথ পেরুলে পৌঁছাবেন স্বপ্নের মতো সুন্দর জলপ্রপাতটির সামনে। পৌঁছানোর বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই অবশ্য শুনতে পাবেন বিপুল জলরাশি আছড়ে পড়ার গুমগুম শব্দ। এই প্রপাতটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। এত ওপর থেকে পানি আছড়ে পড়ায় নাফাখুমের আশেপাশের বাতাসে জলকণার পরিমাণ বেশি। প্রথম দর্শনে পর্যটকের কাছে তাই মনে হতে পারে এই সৌন্দর্য যেন স্বপ্নে দেখা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হবে নিশ্চিত।

নাফাখুমের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটক অপার বিস্ময়ে ভাবতে বসতে পারেন, জন্মভূমির এই শোভা আগে কেন দেখিনি! কারণ জলপ্রপাতের পথে পথে ছড়ানো প্রকৃতির শত শোভা। পাহাড়, পাথুরে ঝিরি, ছবির মতো সাজানো পাহাড়ী গ্রাম, জুমক্ষেতের পাশে চলতে চলতে মনে হবে যেন কোনো দুর্দান্ত ভ্রমণ কাহিনীর পাতা ধরে হাঁটছেন। খরস্রোতা নদী, পাথুরে ঝিরি আর পাহাড়ের পাশ দিয়ে পায়ে চলার পথ, দুধারে সবুজে সবুজে মাখামাখি। আর পাহাড়ের মাথায় আলস্যে ভর দিয়ে শুয়ে আছে সাদা মেঘদল।

নাফাখুম জলপ্রপাতের কোল ঘেঁষেই ছোট্ট এক মারমা গ্রাম। দূর থেকে আসা পর্যটকদের আশ্রয় জোটে এই গ্রামটিতেই। নাফাখুমে মৎসশিকারী এই গ্রামেরই এক বাসিন্দা জ্যোতিরন মারমা জানালেন, মারমা ভাষায় ‘নাফা’ অর্থ বড় আর ‘খুম’ মানে ঝর্ণা। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা বলে এহেন নামকরণ।

নাফাখুম দেখতে বড়ই সুন্দর হলেও দুর্গম অঞ্চলের জলপ্রপাতটি বিপজ্জনকও। ঝর্ণার উৎসমুখের অনেক সামনে গোসল করা যায় বটে কিন্তু সেটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ পিচ্ছিল হওয়ায় একটু পা পিছলালেই প্রবল স্রোতরাশির মধ্যে পড়ে একেবারে নিচে পড়ে যেতে হবে। তাই এ ঝর্ণায় গোসলের সময় বেশ সতর্ক থাকা কাম্য।

যাবেন যেভাবে :

বান্দরবান শহর থেকে বাসে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ থানচি। রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে সময় লাগে কম, তবে ভাড়া নেবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তবে চান্দের গাড়িতে যাওয়ার সুবিধাও আছে। কারণ থানচি যাওয়ার পথেই চিম্বুক ও নীলগিরি পড়বে। হাতে একটু সময় নিয়ে গেলে যাওয়ার পথেই এ দুটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্পট দেখে যেতে পারবেন।

থানচি নেমে আপনাকে গাইড নিতে হবে। নিতে হবে পুলিশ ও বিজিবির অনুমতি। এরপর রেমাক্রি যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া করতে হবে। গাইডই পর্যটকদের জন্য এসব অনুমতি সংগ্রহ ও নৌকা ভাড়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। থানচি থেকে নিবন্ধিত গাইডের সম্মানী প্রতিদিন ৭০০ টাকা। আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া দিনে পনের’শ টাকা।

ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সাঙ্গু নদীর পথ বেয়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে পাহাড়ী গ্রাম রেমাক্রিতে। মেঘেদের গ্রামটিতে একটু বিশ্রাম নিয়ে দুই পথে পৌঁছানো যায় নাফাখুম। এক পথে পাহাড় ডিঙিয়ে রেমাক্রিঝিরির পাড় ধরে বাকিটা হেঁটে চলা। এই পথে নাফাখুম পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চার ঘন্টা। আরেক পথে পাহাড় না ডিঙিয়ে রেমাক্রিখুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়। এই পথে পর্যটকদের রেমাক্রিঝিরির গলাপানিতে নামা লাগে অন্তত তিনবার। তবে এই পথে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। তবে পথে বারবার থেমে ছবি তুলতে গেলে সময় কিছুটা বেশি লেগে যেতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: