যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলোর কাছে বরাবরই হুমকি হিসেবে অবস্থান করে রয়েছে রাশিয়া।সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেই দুশ্চিন্তার অবসান ঘটলেও বর্তমান রুশ শাসক ভ্লাদিমির পুতিন আবারও সেই পরিস্থিতি ফিরিয়ে এনেছেন। দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশটির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে ঘুরে আবারও শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া।
পশ্চিম তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশই এখন সমিহের চোখে দেখে রাশিয়াকে।
কঠোর পরিশ্রম, দেশপ্রেম,
বৈরি পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার অসাধারণ ক্ষমতার পাশাপাশি রুশ সমাজের কিছু মজার দিকও রয়েছে।
এমনই কিছু মজার তথ্য নিয়ে এবারের আয়োজন।
রাশিয়ায় দাড়ি রাখায় অদ্ভুত আইন রয়েছে।
রাশিয়ায় ১৬৯৮ সালে তৎকালীন সম্রাট প্রথম পিটার দাড়ি রাখার উপর কর ধার্য করেন। তার যুক্তি ছিল, রুশ পুরুষেরা দাড়ি রাখলে তাদের ইউরোপের মানুষদের মতো দেখায়। ফলে কেউ যদি দাড়ি রাখেন তবে তাকে অবশ্যই কর পরিশোধ করতে হবে। আর যদি তা না করেন তবে প্রকাশ্যে তার দাড়ি কামিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ জনগণের সামনেই সেই ব্যক্তির দাড়ি কেটে ফেলতে পারে পুলিশ।
রাশিয়ায় রয়েছে বন্ধ প্রশাসনিকস আঞ্চলিক সত্ত্বা
রাশিয়ার এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়ার নিয়ম নেই। এমনকি কোনো মানচিত্রেও সেই সব শহরের দেখা মেলে না। বলা হয়, গোপন সেসব স্থান এতটাই বড় যে শহরকে হার মানাবে। মূলত সেসব স্থানে পরমাণু, রাসায়নিক অস্ত্রের গবেষণা চলে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এসব শহরকে রাশিয়ার মানুষেরা জিরো (ZERO) বলে সম্বোধন করে। এর অর্থ হচ্ছে, বন্ধ প্রশাসনিকস আঞ্চলিক সত্ত্বা (closed administrative-territorial entities).
প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও রাশিয়ার জন্য শীতকাল আশীর্বাদস্বরূপ।
শীতকাল রাশিয়ার মানুষের জীবন কঠিন করে তুললেও এর তাৎপর্য কিন্তু ব্যাপক। বলতে গেলে একাধিকবার পরাধীনতার হাত থেকে রাশিয়াকে মুক্ত করেছে এই ঋতু। নেপোলিয়ন যখন রাশিয়ায় অভিযান চালান তখন এই শীতকালই বাঁচিয়ে দিয়েছিল অঞ্চলটিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীও একই কারণে পরাস্ত হয়। ভয়াবহ ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে কোনো বীর বাহিনীই অভিযান চালাতে পারেনি। তাই প্রতিবছর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও রাশিয়ার জন্য শীতকাল আশীর্বাদস্বরূপ।
সেরা খেলোয়ার তৈরি
সেরা খেলোয়ার তৈরি করে বলে রাশিয়ার সুনাম অনেক আগে থেকেই রয়েছে। দেশটিতে খেলাধুলার চর্চা ব্যাপক। ফলে প্রতিবছরই অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক আসরে খেলোয়ার বাছাই করা নিয়ে বেগ পেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। যদিও ফলাফল হিসেবে প্রতি বছরই অসাধারণ সাফল্য দেখতে পাওয়া যায়।
নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখ করার মতো
রুশ নারীরা যে শুধু সুন্দরী প্রতিযোগিতাতেই এগিয়ে থাকেন তা নয়। দেশটিতে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখ করার মতো। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রকৌশল, আইনশৃঙ্খলা, রাজনীতি.. সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের রয়েছে সরব উপস্থিতি।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল
রাশিয়ানরা গড়ে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬.৩ শটস মদপান করে যেখানে আমেরিকানরা করে ৩.৩ শটস। তবে রাশিয়ানদের চাইতে দ্বিগুণ পরিমাণ মদ পান করে দক্ষিণ কোরিয়ার লোকেরা। প্রতি চারজনে একজন রাশিয়ান পুরুষ তার ৫৫তম জন্মদিনের আগে মারা যায়। আর এ মৃত্যুর অন্যতম কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল।২০১১ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় বিয়ারকে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় হিসেবে ধরা হতো না।
একমাত্র রাশিয়াতেই পাওয়া যায় ম্যাকশ্রিম্প নামে চিংড়ির বার্গার।
২০১২ সালে যখন পুতিন তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন তখন একটি এলাকায় ভোট প্রদানের হার ছিল ১৪৬ শতাংশ।
স্টাচু অব লিবার্টির মেটাল ফ্রেমটি নির্মিত হয় রাশিয়ার
ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য মস্কোর কিছু ধনী অ্যাম্বুল্যান্স চালান। (আমাদের দেশে যা কল্পনাতীত)
সোভিয়েত ইউনিয়নের নারীরা আমেরিকান নারীদের আগে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পান।
রাশিয়ানরা যেকোনো ভ্রমণের আগে কয়েক সেকেন্ড নিরবতা পালন করে। অতীতে এ সময়ে প্রার্থনা করা হতো।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বদলে রাশিয়ানরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে কারণ তারা অ্যালকোহল বাদ দিতে চায়নি, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
রাশিয়ায় প্রচুর খ্রিস্টান থাকলেও ক্রিসমাসের তুলনায় নববর্ষ বড় করে পালিত হয়।
রাশিয়ানরা বছরে দুইবার নববর্ষ পালন করে। এর একটি নতুন ও অন্যটি পুরাতন।
একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে কোনো জিনিস নিতে ভুলে গেলেও তা ফেরত নেওয়ার জন্য রাশিয়ানরা বাড়িতে ঢুকে না। তার বদলে অন্য কাউকে তা নিয়ে আসতে বলে। অন্যথায় এটি দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
প্রত্যেক এক হাজার পুরুষের জন্য ১,১৫৯ জন নারী রয়েছে রাশিয়ায়।
রাশিয়ানরা বাড়িতে হুইসেল বাজায় না। তাদের অনেকেরই বিশ্বাস, এতে টাকা-পয়সা উড়ে চলে যেতে পারে।
রাশিয়ার আয়তন প্লুটো গ্রহের চাইতেও বেশি।
রাশিয়ানদের একটি জনপ্রিয় খাবার হলো ‘হোলোডেটস।’ এটি লবণাক্ত জেলিতে মাংস ডুবিয়ে তৈরি করা হয়।
রাশিয়ানরা কখনো কাউকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান না। কারণ এটা তারা রেখে দেন অন্তেষ্টিক্র্যিয়ার জন্য।
রাশিয়ার আয়তনের তুলনায় মাত্র ০.৮৪% আয়তনের রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের মোট বনভূমির ২০ ভাগ রাশিয়াতে অবস্থিত।
মস্কোতে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন পাতাল রেল রয়েছে। এখানে রয়েছে বিশ্বের চতুর্থ গভীর স্টেশন।