শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

রুবেলের পারিবারিক চক্রে ইউরোপে পাচার ৮০ বাংলাদেশি

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

ঢাকার কেরানীগঞ্জের মো. আশিক এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে যায়। লিবিয়ায় দুই বছর অবস্থানের সময় মানব পাচার সিন্ডিকেটে জড়ায় আশিক। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে কেরানীগঞ্জ থেকে মানব পাচার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়। দুবাইয়ে থাকা মামা রুবেলের মাধ্যমে গড়ে তোলে ‘রুবেল সিন্ডিকেট’। রুবেলের মাধ্যমে অনলাইন ভিসা, বাংলাদেশি সংগ্রহ ও নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে মানব পাচার করতো আশিক। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে ২০-২৫ সদস্য। গত দুই বছরে ৮০ বাংলাদেশিকে ইউরোপে পাচার করেছে তারা। গ্রেপ্তারকৃতদের ও তাদের আত্মীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।

চক্রটির মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক আশিক আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মানব পাচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ চক্রের ৬ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলো: মো. আশিক (২৫), আজিজুল হক (৩৫), মিজানুর রহমান মিজান (৪৩), নাজমুল হুদা (৩১), সীমা আক্তার (২৩), হেলেনা বেগম (৪২) ও পলি আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, দুটি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমাদানের বই, দুটি হিসাব নথি, দুটি এনআইডি, ১০টি মোবাইল ফোন ও ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সম্প্রতি গত ২৮ ও ২৯শে জুন অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হয়। এতে ৪৯ বাংলাদেশি উদ্ধারের সংবাদ জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে অবৈধভাবে ইউরোপে মানব পাচার করে আসছে। তিন ধাপে এ সিন্ডিকেট মানব পাচারের কাজ করে আসছিল।

তিনি আরও জানান, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই এ চক্রের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। বিদেশ গমনেচ্ছুদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ ও টিকিট ক্রয়সহ যাবতীয় কাজ সিন্ডিকেট নিজস্বভাবে সম্পন্ন করতো। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেয়া হতো। পরে তাদেরকে এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপ যেতে তারা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার অধিক অর্থ নেয়। সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে নেয়।

তিনি আরও জানান, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া’ রুট ব্যবহার করছিল। মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভিকটিমদের নিয়ে ৭/৮ দিন অবস্থান করতো। এই সময়ের ভেতরে লিবিয়ার বেনগাজিতে ভিকটিমদের পাঠানোর জন্য এজেন্টরা ‘মারাকাপা’ নামে একটি ডকুমেন্ট দুবাইয়ে পাঠাতো। যা লিবিয়া যাওয়ার আগে দুবাইয়ে অবস্থানরত ভিকটিমদের হস্তান্তর করা হতো। ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদেরকে বেনগাজি পাঠানো হতো। লিবিয়া পর্যন্ত যারা অর্থ পরিশোধ করে তাদেরকে স্বল্প সময়ের মধ্যপ্রাচ্যে থেকে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠানো হতো। প্রধান অভিযুক্ত রুবেল দুবাই বসে সিন্ডিকেটের সব কার্যক্রম মনিটরিং করতো।

তিনি আরও জানান, পাচারের শিকারদের ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর লিবিয়ার এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করতো। ভিকটিমদের ত্রিপলিতে কয়েকদিন আটকে রাখা হতো। এ সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধির দ্বারা ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। এরপর ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদেরকে হস্তান্তর করা হতো। কোনো এক ভোরে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনিশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপের দিকে যাত্রা করতো। ভূমধ্যসাগরে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতো এবং জীবনাবসানের ঘটনাও অহরহ ঘটে।

তিনি আরও জানান, এ চক্রের প্রধান সমন্বয়কের কাজ করছিল রুবেলের ভাগ্নে আশিক। সে এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যায়। ২০১৯ সাল থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থান করে মানব পাচারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। তার মূল দায়িত্ব ইউরোপে যেতে আগ্রহীদের বাংলাদেশ হতে দুবাই পাঠানো। এ চক্রের বাংলাদেশি সিন্ডিকেটে প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। চক্রটি বাংলাদেশের ভেতরে পাসপোর্ট বহনের ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে সাধারণত কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে।

তিনি আরও জানান, রুবেলের স্ত্রী সীমার অ্যাকাউন্টে দেড় কোটি টাকা ও টালি খাতার তথ্যানুযায়ী আরও এক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট আছে বলে জানা গেছে। রুবেলের বোন হেলেনার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া চেক বইয়ের তথ্যানুযায়ী কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও কয়েকজনের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আজিজ মোবাইল ব্যাংকিং ও ইলেকট্রনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি মাদারীপুরে মাঠ পর্যায়ের বিদেশে গমনেচ্ছুদের নির্বাচন করে। গ্রেপ্তার হওয়া মিজানের ওয়ার্কশপ ব্যবসা রয়েছে।

মিজান মাঠ পর্যায়ে এজেন্টের সঙ্গে আঞ্চলিক এজেন্ট গ্রেপ্তারকৃত নাজমুলের সঙ্গে সমন্বয় করে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল হুদাও মোবাইল ব্যাংকিং ও কসমেটিকস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুকসুদপুর এলাকার আঞ্চলিক পর্যায়ের কার্যক্রম তদারকি করে। তারা এসব পেশার আড়ালে অবৈধ মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি, সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান হোসেন ইমনসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com